বাগমারায় ভ্যানচালক ফারুককে প্রকাশ্যে নির্যাতনের পর মৃত্যু

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজশাহীর বাগমারা উপজেলায় শতাধিক মানুষের সামনে প্রকাশ্যে নির্যাতনের শিকার হয়ে ওমর ফারুক (৩৮) নামে এক ভ্যানচালকের মৃত্যু হয়েছে। চুরির অপবাদে সিএনজি সমিতির সদস্যদের হাতে নির্মম নির্যাতনের পর ভ্রাম্যমাণ আদালতে সাজা দিয়ে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

ঘটনাটি ঘটে গত ১৭ ডিসেম্বর বুধবার সন্ধ্যায় বাগমারা উপজেলা সদরের ভবানীগঞ্জ এলাকায়। প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে জানা যায়, সিএনজি স্ট্যান্ডের সামনে ভ্যান রেখে প্রসাব করতে গেলে ফারুককে আটক করেন ভবানীগঞ্জ সিএনজি সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ কয়েকজন সদস্য। এরপর ২০ থেকে ২৫ জন সংঘবদ্ধভাবে তাকে দুই ঘণ্টার বেশি সময় ধরে লোহার রড দিয়ে মারধর করেন।

স্থানীয়দের অভিযোগ, নির্যাতনের একপর্যায়ে ফারুককে উলঙ্গ করে দেয়ালের সঙ্গে দাঁড় করিয়ে তার চার হাত-পায়ে দুই ইঞ্চি লোহার পেরেক ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। পানি চাইলে তাকে পান করতে না দিয়ে বারবার পার্শ্ববর্তী নদীতে চুবানো হয়। এমনকি তার পায়ুপথে শুকনো মরিচের গুঁড়া ঢুকিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ উঠেছে।

ফারুকের অবস্থা সংকটাপন্ন হয়ে পড়লে পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। পুলিশ তাকে গ্রহণ না করায় ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন বাগমারা উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুল ইসলাম ভুঞা। তিনি ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে মাদক রাখার অভিযোগে ফারুককে সাত দিনের কারাদণ্ড দেন।

রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার শাহ আলম খান জানান, আহত অবস্থায় ফারুককে কারাগারে গ্রহণ করা হয়। পরদিন ১৮ ডিসেম্বর তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৪২ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২০ ডিসেম্বর ভোরে তার মৃত্যু হয়।

নিহত ফারুক ভবানীগঞ্জ পৌরসভার চাঁনপাড়া মহল্লার মসলেম সরদারের ছেলে। তিনি একজন দরিদ্র ভ্যানচালক ছিলেন। তার স্ত্রী ও ১৩ বছর বয়সী এক ছেলে রয়েছে।

ফারুকের পরিবার অভিযোগ করে বলেছে, এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। তার মা পারুল বেগম বলেন, “আমার ছেলেকে উলঙ্গ করে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে। আমি এই হত্যার বিচার চাই।”

এদিকে ঘটনার বর্ণনা নিয়ে সিএনজি সমিতি, ভ্রাম্যমাণ আদালত ও কারা কর্তৃপক্ষের বক্তব্যে পরস্পরবিরোধী তথ্য পাওয়া গেছে। নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সিএনজি সমিতির সভাপতি। তবে কারা কর্তৃপক্ষ স্বীকার করেছে, আহত অবস্থায়ই ফারুককে গ্রহণ করা হয়েছিল।

ঘটনাটি নিয়ে এলাকায় তীব্র ক্ষোভ ও শোকের ছায়া নেমে এসেছে। বিষয়টি তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন বিভাগীয় কমিশনার ড. আ. ন. ম. বজলুর রশীদ।