ট্রাম্পের ‘ট্রাম্প-ক্লাস’ যুদ্ধজাহাজ: মার্কিন নৌবাহিনীর ‘গোল্ডেন ফ্লিট’ পরিকল্পনা

মার্কিন নৌবাহিনীর নতুন শক্তি প্রদর্শন। ট্রাম্পের ‘ট্রাম্প-ক্লাস’ যুদ্ধজাহাজ নির্মাণ ঘোষণা।
বিশ্ব ডেস্ক: মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন নৌবাহিনীর জন্য একটি উচ্চাভিলাষী নৌ-নির্মাণ পরিকল্পনার ঘোষণা দিয়েছেন।
২২ ডিসেম্বর ফ্লোরিডার মার-এ-লাগো রিসোর্টে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, এই পরিকল্পনার মূল আকর্ষণ হচ্ছে নতুন প্রজন্মের ‘ট্রাম্প-ক্লাস’ যুদ্ধজাহাজ (Battleship), যা তিনি দাবি করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ও শক্তিশালী যুদ্ধজাহাজ হতে যাচ্ছে।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, “আমরা দুটি অত্যন্ত বড় ও শক্তিশালী যুদ্ধজাহাজ নির্মাণ শুরু করতে যাচ্ছি—যেগুলো হবে এখন পর্যন্ত নির্মিত যেকোনো যুদ্ধজাহাজের তুলনায় দ্রুতগতির ও ভয়ংকর।” তিনি আরও জানান, প্রাথমিকভাবে দুটি জাহাজ নির্মাণ করা হলেও ভবিষ্যতে এ সংখ্যা ২০ থেকে ২৫টিতে উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে।
প্রথম যুদ্ধজাহাজটির নাম রাখা হয়েছে ইউএসএস ডিফায়েন্ট (USS Defiant)। যুদ্ধজাহাজের সম্ভাব্য বৈশিষ্ট্য ও অস্ত্রসজ্জা।
বিভিন্ন প্রতিরক্ষা সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, নতুন এই যুদ্ধজাহাজগুলোর ওজন হতে পারে প্রায় ৩০ হাজার থেকে ৪০ হাজার টন—যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর মার্কিন নৌবাহিনীর সবচেয়ে বড় সারফেস কমব্যাট্যান্ট হিসেবে বিবেচিত হবে।
এসব জাহাজে অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে—হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র (Conventional Prompt Strike), ইলেকট্রোম্যাগনেটিক রেলগান, উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন লেজার অস্ত্র ব্যবস্থা, পারমাণবিক সক্ষমতাসম্পন্ন সি-লঞ্চড ক্রুজ মিসাইল (SLCM-N), টমাহক ও স্ট্যান্ডার্ড সিরিজের ক্ষেপণাস্ত্র।
ট্রাম্প বলেন, এই যুদ্ধজাহাজগুলোর পরিচালনায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এবং সম্পূর্ণভাবে আমেরিকান শিপইয়ার্ডেই এগুলো নির্মিত হবে, যার ফলে হাজার হাজার নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।
‘গোল্ডেন ফ্লিট’ উদ্যোগ
নৌসচিব জন ফেলান এই প্রকল্পকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ঘোষিত ‘গোল্ডেন ফ্লিট’ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে উল্লেখ করেন। এই বৃহৎ উদ্যোগের আওতায় নতুন এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার, সাবমেরিন, ফ্রিগেটসহ বিভিন্ন ধরনের যুদ্ধজাহাজ নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ভাষায়, এই পরিকল্পনার লক্ষ্য হলো চীনসহ সম্ভাব্য প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নৌশক্তি আরও সুসংহত করা এবং দীর্ঘদিন ধরে সংকুচিত হয়ে পড়া মার্কিন শিপবিল্ডিং শিল্পকে পুনরুজ্জীবিত করা।
বিশেষজ্ঞদের প্রতিক্রিয়া
প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকদের একটি অংশ এই উদ্যোগকে “অত্যন্ত উচ্চাভিলাষী” হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। তাদের মতে, রেলগান ও কিছু লেজার প্রযুক্তি এখনও পরীক্ষামূলক পর্যায়ে রয়েছে এবং পারমাণবিক অস্ত্র বহনকারী সারফেস যুদ্ধজাহাজ শীতল যুদ্ধের পর আর দেখা যায়নি। তবে অন্য একটি অংশ এটিকে যুক্তরাষ্ট্রের নৌশক্তির প্রতীকী পুনর্জাগরণ হিসেবেও দেখছেন।
বিশ্লেষকদের ধারণা, এই ঘোষণা শুধু মার্কিন প্রতিরক্ষা নীতিতেই নয়, বরং বৈশ্বিক নৌশক্তির ভারসাম্যেও দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলতে পারে।






