রাজশাহীর মোহনপুরে পুকুর খনন নিয়ে যুবক হ’ত্যার আসামীদের গ্রেপ্তারের দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক, মোহনপুর: রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার বড় পালশা গ্রামে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে পুকুর খনন করতে গিয়ে কৃষিজমি রক্ষায় বাধা দেওয়ায় কৃষক আহমেদ জোবায়েরকে ভেকু মেশিনের নিচে পিষে হত্যার অভিযোগে এলাকাজুড়ে নিন্দা ও ক্ষোভের ঝড় উঠেছে।

হত্যার পাঁচ দিন পেরিয়ে গেলেও মূল আসামি ও তাদের দোসররা এখনও গ্রেফতার না হওয়ায় সোমবার (২২ ডিসেম্বর) মোহনপুর উপজেলা নাগরিক কল্যাণ কমিটির উদ্যোগে এক বিক্ষোভ র‌্যালি ও স্মারকলিপি প্রদান কর্মসূচি পালিত হয়।

সকাল সাড়ে ১১টার দিকে মোহনপুর উপজেলা চত্বর থেকে একটি বিশাল র‌্যালি বের হয়। র‌্যালিটি মহাসড়ক প্রদক্ষিণ করে ভূমি অফিস ও থানা গেট ঘুরে পুনরায় উপজেলা শহীদ মিনারে এসে শেষ হয়। পরে সেখানে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, গত ১৭ ডিসেম্বর রাত সাড়ে ৮টার দিকে ধুরইল ইউনিয়নের বড় পালশা গ্রামে প্রশাসনের অনুমতি ছাড়াই একটি বিশেষ দলের ভূমিদস্যুরা ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে কৃষিজমিতে জোরপূর্বক পুকুর খনন শুরু করে। স্থানীয় মসজিদের মাইকে পুকুর খনন বন্ধের ঘোষনা দিলে আহমেদ জোবায়েরসহ গ্রামবাসী সেখানে ছুটে যান।

তখন মোনারুল ইসলাম ওরফে রুহুল আমিন, রুবেল হোসেন, জাকির হোসেন, আনিসুর রহমান বকুল, বিপ্লব হোসেনসহ কয়েকজন ভূমিদস্যু ভেকু চালককে নির্দেশ দেন, “ওদের পিষে দে।” এরপর ভেকু চালক আব্দুল হামিদ ও সহযোগী গোলাম রাব্বি মেশিনের মাথা দিয়ে জোবায়েরকে আঘাত করেন। তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়লে ভেকুর চাকায় পিষে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।
নিহত আহমেদ জোবায়ের (২৩) স্থানীয় কৃষক মো. রফিকুল ইসলামের ছেলে। তিনি ছিলেন দুই ভাইয়ের মধ্যে বড় ও এক সন্তানের জনক। ঘটনার পর আহত অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

বিক্ষোভে বক্তারা বলেন, “ভূমিদস্যুদের দৌরাত্ম্য এখন ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছেছে। প্রশাসনের অনুমতি ছাড়াই কৃষিজমি নষ্ট করে যারা পুকুর খনন করছে, তারাই আজ একজন নিরীহ যুবককে হত্যা করেছে। আমরা হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।”

সমাবেশে আরও দাবি জানানো হয়, আহমেদ জোবায়ের হত্যার সঙ্গে জড়িত কুশিলবসহ সকল আসামিদের অবিলম্বে গ্রেফতার করতে হবে। ভেকু চালককে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করে হত্যার পেছনের মূল হোতাদের চিহ্নিত করতে হবে। কৃষিজমিতে অবৈধভাবে পুকুর খনন বন্ধে কঠোর আইন প্রয়োগ করতে হবে। নিহতের পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত ও উপযুক্ত ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করতে হবে।

পরে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, সহকারী কমিশনার (ভূমি) এবং অফিসার ইনচার্জ, মোহনপুর থানার নিকট স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।

নিহতের পিতা মো. রফিকুল ইসলাম, চাচা কাশেম, মোস্তাফির রহমান, বেলাল হোসেন, ভাই ফিরোজ হাসান সাংবাদিকদের বলেন, আমার ছেলে কৃষিজমি রক্ষার জন্য জীবন দিয়েছে। যারা ওকে ভেকুর নিচে পিষে মেরেছে, তাদের যদি শাস্তি না হয়, তাহলে সাধারণ মানুষের ন্যায়বিচারের বিশ্বাস শেষ হয়ে যাবে।”

স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, পুকুর খননের নামে বছরের পর বছর ধরে মোহনপুরে উর্বর কৃষিজমি ধ্বংস করে চলছে একটি সংঘবদ্ধ চক্র। প্রশাসনের চোখের সামনে এভাবে প্রাণহানি ও জমি নষ্ট হওয়া ভবিষ্যতে ভয়াবহ পরিবেশগত বিপর্যয় ডেকে আনবে বলেও তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেন।