হাতে হাতকড়া নিয়ে বাবার শেষকৃত্যে রাজশাহী জেলা আ.লীগের দপ্তর সম্পাদক

নিজস্ব প্রতিবেদক, দুর্গাপুর: বাবার মৃত্যুতে প্যারোলে মুক্তি পেয়ে পুলিশি পাহারায় হাতে হাতকড়া নিয়েই বাবার শেষকৃত্য ও দাহকর্মে অংশ নিয়েছেন রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক প্রদ্যুৎ কুমার সরকার। দীর্ঘদিন থেকে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে আটক ছিলেন কার্যক্রম নিষিদ্ধ রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের এই নেতা। নিজ বাসায় পৌছানোর পর মা, স্ত্রী ও কন্যাসহ স্বজনদের মধ্যে কান্নার রোল পড়ে। এ সময় শোকাভিভূত স্বজনদের শান্তনা দেন প্রদ্যুৎ কুমার সরকার।

রোববার রাতে দুর্গাপুর উপজেলার বেলঘরিয়া গ্রামের নিজ বাসায় প্রদ্যুৎ কুমার সরকারের বাবা শ্রী গোপাল চন্দ্র সরকার (৯৯) পরলোকগমন করেন। গোপাল চন্দ্র সরকার দীর্ঘদিন থেকে বার্ধক্যজনিত সহ নানা রোগে ভুগছিলেন।

এদিকে, বাবার মৃত্যুর খবর পেয়ে আইনজীবীর আবেদনের প্রেক্ষিতে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে সোমবার ৩ ঘণ্টার জন্য প্যারোলে মুক্তিপান প্রদ্যুৎ কুমার সরকার। পুলিশ পাহারায় দুপুর দেড়টার দিকে কারাগার থেকে বের হয়ে আড়াইটার দিকে নিজ গ্রাম বেলঘরিয়ায় পৌছান। এরপর বেলঘরিয়া কেন্দ্রীয় শ্মশানঘাটে বাবার শেষকৃত্য শেষে মরদেহ দাহকর্মে অংশ নেন। পরে আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীদের সঙ্গে নিয়ে বাবার আত্মার শান্তি কামনায় প্রার্থনা করেন।

পরিবারের স্বজনরা জানান, মাস দুয়েক আগে রাজশাহী মহানগরীর শাহমখদুম থানায় দায়ের হওয়া একটি মামলায় প্রদ্যুৎ কুমার সরকারকে গ্রেপ্তার করে নগর গোয়েন্দা পুলিশ। এরপর তাকে আদালতে নেয়া হলে বিজ্ঞ আদালত তাকে কারাগারে পাঠান। সেই সাথে কারাগারেই ছিলেন প্রদ্যুৎ কুমার।

দুর্গাপুর থানার দায়িত্বরত উপ-পরিদর্শক (এসআই) রিপন কুমার দাস জানান, প্রদ্যুৎ কুমার সরকারের বাবার পরলোকগমনের খবর পেয়ে তার আইনজীবীর আবেদনের প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসন ও কারা কর্তৃপক্ষের অনুমোদন সাপেক্ষে কারাগার থেকে ৩ ঘণ্টার জন্য প্যারোলে মুক্তি দেয়া হয় প্রদ্যুৎ কুমার সরকারকে। এরপর পুলিশ পাহারায় হাতে হাতকড়া নিয়েই বাবার মরদেহের শেষকৃত্য ও দাহকর্মে অংশ নেন। নির্ধারিত সময় শেষে পূণরায় তাকে কারাগারে নেয়া হয়।

দুর্গাপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শফিকুল ইসলাম জানান, কারাবন্দী প্রদ্যুৎ কুমার সরকারের আইনজীবী কারাবিধি অনুযায়ী আবেদন জানালে প্যারোল অনুমোদন ও কারা কর্তৃপক্ষের শর্তানুযায়ী পুলিশ পাহারায় তিনি বাবার শেষকৃত্য ও দাহকর্মে অংশ নেন। এরপর নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই পূণরায় তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

উল্লেখ্য, প্রদ্যুত কুমার সরকার কার্যক্রম নিষিদ্ধ রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের রাজশাহী জেলা শাখার দপ্তর সম্পাদক পদে ছিলেন। এছাড়াও তিনি নওপাড়া মহাবিদ্যালয়ের প্রভাষক ছিলেন। গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তিনি কিছুদিন আত্মগোপনে ছিলেন। এরপর তিনি গ্রেফতার হোন। জামিনে বের হয়ে আসলেও রাষ্ট্রদ্রোহিতা, সন্ত্রাস ও নাশকতার অভিযোগে ফের তাকে আটক করে নগর গোয়েন্দা পুলিশ। তার বিরুদ্ধে জেলা ও মহানগরীর বিভিন্ন থানায় অসংখ্য মামলা রয়েছে।