গণমাধ্যমে হামলায় সরকারের অংশ জড়িত: নাহিদ ইসলাম

প্রথম আলো–ডেইলি স্টার কার্যালয়ে হামলা: সরকারের ভেতরের একটি অংশের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে!
টুইট ডেস্ক: প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারসহ কয়েকটি গণমাধ্যম ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের ওপর হামলার ঘটনায় সরকারের ভেতরের একটি অংশের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।
তিনি বলেন, এই হামলা কোনো আকস্মিক ঘটনা নয়; বরং এটি ছিল পূর্বপরিকল্পিত এবং রাজনৈতিক মদদপ্রাপ্ত।
সোমবার (২২ ডিসেম্বর) রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত এক প্রতিবাদ সভায় এসব মন্তব্য করেন নাহিদ ইসলাম। দেশে চলমান ‘মব ভায়োলেন্স’-এর প্রতিবাদে সংবাদপত্র সম্পাদকদের সংগঠন সম্পাদক পরিষদ এবং নিউজপেপার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (নোয়াব) যৌথভাবে এই সভার আয়োজন করে।
সভায় বক্তব্য দিতে গিয়ে নাহিদ ইসলাম বলেন, শরিফ ওসমান হাদির সঙ্গে ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনা বা হামলার পর বাংলাদেশে কী কী ঘটনা ঘটানো হবে, সে বিষয়ে একটি সুস্পষ্ট পরিকল্পনা আগে থেকেই তৈরি ছিল। তাঁর ভাষায়, “এই ঘটনার পর আমরা বলেছি, সরকারের ভেতরের একটি অংশের এখানে সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। এর পেছনে রাজনৈতিক ব্যাকআপও ছিল।”
তিনি বলেন, প্রথম আলোসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের ওপর যারা হামলা চালিয়েছে, তারা জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের স্লোগান ও প্রতীক ব্যবহার করেছে, যা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। “আমাদের স্লোগানগুলোকে ব্যবহার করে তারা সেখানে আক্রমণ করেছে, শরিফ ওসমান হাদির নাম ব্যবহার করেছে,”—বলেন তিনি।
নাহিদ ইসলাম আরও বলেন, “আমরা যে পরিস্থিতিতে এসে দাঁড়িয়েছি, তা আমাদের জন্য খুবই হতাশাজনক। জুলাই গণ-অভ্যুত্থান ও তার পরবর্তী সময়ে আমরা যে বাংলাদেশ প্রত্যাশা করেছিলাম, সেই পথ থেকে আমরা ক্রমেই সরে যাচ্ছি।”
এই হামলার পেছনে দীর্ঘদিন ধরে সম্মতি তৈরি করা হয়েছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, “এই তিনটি বিষয়—সরকারের ভেতরের সংশ্লিষ্টতা, রাজনৈতিক ব্যাকআপ এবং পূর্বপরিকল্পনা—একসঙ্গে না থাকলে সেদিন রাতে এমন সাহসী ও সংঘবদ্ধ হামলা সম্ভব হতো না। কয়েক হাজার মানুষ হঠাৎ গিয়ে এমন ঘটনা ঘটিয়েছে—এমনটা নয়। পুরো ঘটনাটিই ছিল পরিকল্পিত।”
এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুর পর কী কী ঘটনা ঘটানো হবে, তা নিয়েও একটি চক্রান্তমূলক পরিকল্পনা আগে থেকেই ছিল। ঘটনার ধারাবাহিকতা দেখেই তাদের কাছে এমন ধারণা তৈরি হয়েছে বলে জানান তিনি।
নিজেদের দায় স্বীকার করে নাহিদ ইসলাম বলেন, “আমাদের সবারই এখানে কিছু দায় আছে। বিশেষ করে যারা জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে অংশ নিয়েছিলাম, আমাদের দায় আরও বেশি। ব্যক্তিগতভাবে আমি তথ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলাম—এ কারণে এই বিষয়টি আমার জন্য আরও বেদনাদায়ক।”
‘মব ভায়োলেন্স’ শব্দ ব্যবহারের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, শুরুতে তারা এই শব্দ ব্যবহারের বিরোধিতা করেছিলেন। কারণ, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকে শুরু থেকেই একটি পক্ষ ‘মব’ বলে আখ্যা দিয়েছিল। “আমরা বলেছি, এটা মবোক্রেসি নয়। কিন্তু দেড় বছর পার হয়ে যাওয়ার পর এখন যা ঘটছে, তা আর ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ নয়—এটা পরিকল্পিত অপরাধ,”—বলেন তিনি।
নাহিদ ইসলাম অভিযোগ করেন, এই পরিকল্পিত সহিংসতার মাধ্যমে দেশের রাজনীতি ও নির্বাচনব্যবস্থাকে একটি নির্দিষ্ট দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চলছে।
তিনি বলেন, “কারা সেই রাতে এই ঘটনা ঘটিয়েছে, কারা এর পক্ষে সমর্থন দিয়েছে, কারা সেখানে গিয়ে উপস্থিত থেকেছে বা লেখালেখি করেছে—সবই খুব স্পষ্ট। এখন আমাদের সবাইকে একসঙ্গে সরকারকে বাধ্য করতে হবে এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার নিশ্চিত করতে।”
একই সঙ্গে তিনি শরিফ ওসমান হাদিকে প্রকাশ্যে ঢাকায় গুলিবিদ্ধ করার ঘটনাটিরও বিচার দাবি করেন। তিনি বলেন, “তিনি একজন এমপি পদপ্রার্থী এবং জুলাই আন্দোলনের পরিচিত মুখ। এই বিষয়টিরও সুরাহা হওয়া জরুরি।”
সম্পাদক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও দৈনিক বণিক বার্তার সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদের সঞ্চালনায় আয়োজিত এই প্রতিবাদ সভায় আরও বক্তব্য দেন সম্পাদক পরিষদের সভাপতি ও দৈনিক নিউ এজ সম্পাদক নূরুল কবীর, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, প্রখ্যাত আলোকচিত্রী শহিদুল আলম, ব্যারিস্টার সারা হোসেন, মানবাধিকার কর্মী রেহনুমা আহমেদ, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান এবং গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি।
সভায় বক্তারা অবিলম্বে সহিংসতা বন্ধ, গণমাধ্যমের নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান।






