১২৭ কোটি টাকার লেনদেনে ফাঁস হাদি হত্যার যোগসূত্র!

শহীদ ওসমান হাদি হত্যাকাণ্ড: সর্বশেষ তদন্তে অস্বাভাবিক ১২৭ কোটি টাকার লেনদেনের তথ্য।
টুইট ডেস্ক: ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ও জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম নেতা শহীদ শরিফ ওসমান বিন হাদি হত্যাকাণ্ডের তদন্তে নতুন মোড় এসেছে।
পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) মূল অভিযুক্ত ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান ওরফে রাহুল এবং তার স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবে ১২৭ কোটি টাকারও বেশি অস্বাভাবিক লেনদেনের তথ্য পেয়েছে। এই লেনদেন মানিলন্ডারিং, সংঘবদ্ধ অপরাধ এবং সম্ভবত সন্ত্রাসী কার্যক্রমের অর্থায়নের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে সিআইডি।
গত ২১ ডিসেম্বর সিআইডির অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার (মিডিয়া) আবু তালেব স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থা থেকে প্রাপ্ত তথ্য পর্যালোচনা করে এই অস্বাভাবিক লেনদেন শনাক্ত করা হয়েছে। এর প্রেক্ষিতে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ অনুযায়ী পৃথক অনুসন্ধান শুরু করেছে সিআইডি।
গত ১২ ডিসেম্বর দুপুরে রাজধানীর পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট রোডে রিকশায় করে যাওয়ার সময় মোটরসাইকেল থেকে মাথায় গুলি করা হয় ওসমান হাদিকে। গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে প্রথমে ঢাকায় চিকিৎসা দেওয়া হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে নেওয়া হলে ১৮ ডিসেম্বর তিনি মারা যান। তাঁর মৃত্যুর পর দেশজুড়ে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে এবং সরকার একদিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করে।
সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে পুলিশ মূল শুটার হিসেবে ফয়সাল করিম মাসুদকে শনাক্ত করে। ফয়সাল নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সাবেক নেতা এবং আইটি ব্যবসায়ী। ঘটনার পর তিনি পলাতক রয়েছেন। পুলিশের ধারণা, তিনি সীমান্ত পার হয়ে ভারতে যেতে পারেন, যদিও সুনির্দিষ্ট তথ্য এখনো নেই।
আর্থিক লেনদেনের তথ্য
গ্রেপ্তার অভিযানে উদ্ধার হওয়া চেকবইয়ের তথ্য থেকে দেখা যায়, অসম্পূর্ণ লেনদেনের রেকর্ডই প্রায় ২১৮ কোটি টাকার।
প্রাথমিক বিশ্লেষণে ১২৭ কোটি টাকার অস্বাভাবিক লেনদেন নিশ্চিত হয়েছে। এছাড়া ফয়সাল ও সংশ্লিষ্টদের অ্যাকাউন্টে থাকা প্রায় ৬৫ লাখ টাকা রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্তের প্রক্রিয়া চলছে।
গ্রেপ্তার
ফয়সালের পরিবারের সদস্যসহ (মা-বাবা, স্ত্রী, শ্যালক) অন্তত ১৩ জন গ্রেপ্তার হয়েছেন। সীমান্ত পারাপারে সহায়তার অভিযোগে আরও দুজন রিমান্ডে রয়েছেন।
অন্যান্য তদন্ত
হত্যার পেছনে সংঘবদ্ধ নেটওয়ার্ক, অর্থায়ন ও অস্ত্র সরবরাহের বিষয়ে একাধিক টিম কাজ করছে। ফয়সালের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
সিআইডি জানিয়েছে, মূল হোতা ফয়সালকে গ্রেপ্তার এবং পুরো চক্র উন্মোচনে তদন্ত ও অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এ ঘটনা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে প্রাথমিক ধারণা করা হচ্ছে, তবে কোনো নির্দিষ্ট দলের সম্পৃক্ততার প্রমাণ এখনো মেলেনি।
এই হত্যাকাণ্ড দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে নতুন উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। তদন্তের অগ্রগতি জাতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।







