চীনমুখী ভেনেজুয়েলার তেলবাহী জাহাজ আটক

ভেনেজুয়েলার উপকূলে মার্কিন বাহিনীর তেলবাহী সুপারট্যাঙ্কার আটক

বিশ্ব ডেস্ক: ভেনেজুয়েলার উপকূলের কাছে আন্তর্জাতিক জলসীমায় একটি পানামা-পতাকাবাহী, চীনা মালিকানাধীন তেলবাহী সুপারট্যাঙ্কার আটক করেছে যুক্তরাষ্ট্রের কোস্ট গার্ড। এই ঘটনাকে ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানির ওপর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের চাপ আরও জোরদারের অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

ট্যাঙ্কারটিতে প্রায় ১৮ লাখ ব্যারেল ভেনেজুয়েলার অপরিশোধিত তেল বোঝাই ছিল, যা এশিয়ার বাজারের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিল।

রয়টার্স, অ্যাক্সিওস ও নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, ট্যাঙ্কারটির নাম সেঞ্চুরিজ (Centuries)। এটি পানামা-পতাকাবাহী এবং একটি চীনা কোম্পানির মালিকানাধীন।

বুধবার ভেনেজুয়েলার জলসীমা ত্যাগ করার পর শনিবার ভোরে ক্যারিবিয়ান সাগরে বার্বাডোসের পূর্বে ট্যাঙ্কারটি আটক করা হয়।

মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি সেক্রেটারি ক্রিস্টি নোয়েম সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) একটি ভিডিও পোস্ট করে অভিযানের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। ভিডিওতে দেখা যায়, হেলিকপ্টার থেকে সশস্ত্র মার্কিন কর্মকর্তারা ট্যাঙ্কারের ডেকে অবতরণ করছেন।

এটি চলতি মাসে দ্বিতীয় ট্যাঙ্কার আটকানোর ঘটনা। এর আগে ১০ ডিসেম্বর মার্কিন বাহিনী স্কিপার নামে আরেকটি ট্যাঙ্কার আটক করেছিল, যা ইরান-সংশ্লিষ্ট নিষেধাজ্ঞার আওতাভুক্ত ছিল। তবে সেঞ্চুরিজ ট্যাঙ্কারটি মার্কিন নিষেধাজ্ঞা তালিকায় ছিল না—এই তথ্যই ঘটনাটিকে আরও উত্তেজনাপূর্ণ করে তুলেছে।

এই সপ্তাহে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার নিষেধাজ্ঞাভুক্ত তেলবাহী ট্যাঙ্কারগুলোর ওপর “সম্পূর্ণ ব্লকেড” ঘোষণার কথা জানান। মার্কিন কর্তৃপক্ষের দাবি, ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি থেকে প্রাপ্ত অর্থ নার্কো-টেররিজম ও অন্যান্য অবৈধ কর্মকাণ্ডে ব্যবহৃত হচ্ছে।

হোমল্যান্ড সিকিউরিটি সেক্রেটারি নোয়েম বলেন,
“যুক্তরাষ্ট্র অবৈধভাবে নিষেধাজ্ঞাভুক্ত তেল পরিবহন বন্ধ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা আপনাদের খুঁজে বের করব এবং থামাব।”

এই অভিযানের ফলে কার্যত ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি স্থবির হয়ে পড়েছে। ট্যাঙ্কারট্র্যাকার্স–এর তথ্য অনুযায়ী, ভেনেজুয়েলার জলসীমায় লোড করা বহু ট্যাঙ্কার আটকে আছে, কারণ মালিকপক্ষ আটকের আশঙ্কায় যাত্রা শুরু করতে চাইছে না।

উল্লেখ্য, চীন ভেনেজুয়েলার তেলের সবচেয়ে বড় ক্রেতা, যা দেশটির অর্থনীতির প্রধান আয়ের উৎস।

ভেনেজুয়েলার প্রতিক্রিয়া

ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো এই ঘটনাকে “আন্তর্জাতিক জলদস্যুতা” ও “চুরি” আখ্যা দিয়ে তীব্র নিন্দা জানান। ভেনেজুয়েলার তেল মন্ত্রণালয় ও রাষ্ট্রায়ত্ত তেল কোম্পানি পিডিভিএসএ (PDVSA) আনুষ্ঠানিকভাবে এখনও কোনো মন্তব্য করেনি। তবে সরকারি সূত্রগুলো এটিকে যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রাসনের অংশ বলে দাবি করছে। মাদুরো সরকারের বক্তব্য, ভেনেজুয়েলার বিশাল তেল মজুদ দখলের উদ্দেশ্যেই এ ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

এই আটক অভিযানের ফলে ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি মারাত্মকভাবে কমে গেছে। বিশ্লেষকদের মতে, এটি দেশটির অর্থনীতিতে বড় ধাক্কা দেবে, যা ইতোমধ্যেই কঠোর নিষেধাজ্ঞার চাপে রয়েছে। মার্কিন সূত্রগুলো জানিয়েছে, আরও ট্যাঙ্কার আটকের পরিকল্পনা রয়েছে।

এদিকে চীনা ক্রেতারা সতর্ক অবস্থান নিয়েছে, যা ভেনেজুয়েলার তথাকথিত “শ্যাডো ফ্লিট” বা অন্ধকার নৌবহর ব্যবস্থাকে গুরুতর ঝুঁকির মুখে ফেলেছে। এই ঘটনা ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে উত্তেজনা বাড়িয়েছে এবং আন্তর্জাতিক আইনের বৈধতা নিয়ে নতুন প্রশ্ন তুলেছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, নিষেধাজ্ঞার আওতায় না থাকা ট্যাঙ্কার আটক করা যুক্তরাষ্ট্রের নীতিতে একটি নতুন ও আগ্রাসী মাত্রা নির্দেশ করে।

সূত্র: রয়টার্স, অ্যাক্সিওস, নিউ ইয়র্ক টাইমস, বিবিসি, সিএনএন