হাদির জানাজা ও দাফন সম্পন্ন: দেশজুড়ে শোক আর বিক্ষোভ

লাখো মানুষের অশ্রুসিক্ত বিদায়, দেশব্যাপী গায়েবানা জানাজা ও হত্যার বিচার দাবিতে বিক্ষোভ।
টুইট প্রতিবেদক: জুলাই গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম অকুতোভয় যোদ্ধা ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শহীদ শরীফ ওসমান বিন হাদি (ওসমান হাদি)-এর জানাজা ও দাফন শনিবার সম্পন্ন হয়েছে। লাখো মানুষের অশ্রুসিক্ত বিদায়ে তাকে সমাহিত করা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদ প্রাঙ্গণে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবরের পাশে।
আজ শনবার (২০ ডিসেম্বর) রাষ্ট্রীয় শোক পালন করা হয়। সব সরকারি-বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়।
গত ১২ ডিসেম্বর ঢাকার পুরানা পল্টনে নির্বাচনী প্রচারণা শেষে ফেরার পথে মোটরসাইকেল আরোহী দুর্বৃত্তদের গুলিতে গুরুতর আহত হন ওসমান হাদি। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে সিঙ্গাপুর নেওয়া হলেও ১৮ ডিসেম্বর রাতে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
জানাজা ও দাফন
শনিবার দুপুর ২টায় জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় (মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ) তার প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজাস্থলে লাখো মানুষের ঢল নামে।
স্লোগানে মুখরিত হয় এলাকা— ‘আমরা সবাই হাদি হব, গুলির মুখে কথা বলব’।
জানাজায় ইমামতি করেন তার বড় ভাই।
সরকারের পক্ষে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। জানাজা শেষে বিশাল শোক মিছিল নিয়ে মরদেহ নেওয়া হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। বিকেল সোয়া ৩টার দিকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাকে সমাহিত করা হয়। পরিবারের ইচ্ছানুযায়ী সাধারণ কবরে দাফন করা হয়; কোনো বিলাসবহুল সমাধি নয়।
দেশজুড়ে গায়েবানা জানাজা ও প্রতিবাদ
রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার নতুন চৌপথী ঈদগাহ মাঠে রাত সোয়া ৮টায় গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। হাজারো মুসল্লি এতে অংশ নেন। জানাজা শেষে তার রূহের মাগফিরাত কামনায় দোয়া করা হয়।
এ ছাড়া দিনাজপুরের গোর-এ-শহীদ ময়দান, বগুড়ার আলতাফুন্নেসা মাঠ, ঝালকাঠির কেন্দ্রীয় ঈদগাহ, কুমিল্লা, যশোরের চৌগাছা, নরসিংদী, জামালপুর, টাঙ্গাইল, গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে গায়েবানা জানাজা ও বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি ওঠে সর্বত্র।
শোক প্রকাশ
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস তার মৃত্যুকে ‘জাতির অপূরণীয় ক্ষতি’ আখ্যা দিয়ে বলেন, শহীদ হাদির স্ত্রী ও একমাত্র সন্তানের দায়িত্ব রাষ্ট্র গ্রহণ করবে।
বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও সাধারণ মানুষ শোক জানিয়েছেন। তার আদর্শ— আধিপত্যবাদবিরোধী সংগ্রাম ও জুলাইয়ের চেতনা— নতুন প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করবে বলে মনে করছেন অনেকে।
শহীদ শরীফ ওসমান বিন হাদি (১৯৯৩–২০২৫) ঝালকাঠির নলছিটির সন্তান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর করা এই তরুণ জুলাই অভ্যুত্থানে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন এবং ইনকিলাব মঞ্চ গঠন করে আধিপত্যবাদবিরোধী আন্দোলনের প্রতীকে পরিণত হন। আসন্ন নির্বাচনে ঢাকা-৮ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রচার চালাচ্ছিলেন তিনি।
তার মৃত্যুতে দেশে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে; অনেকে এর পেছনে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র দেখছেন।








