১৮ ডিসেম্বর রাজশাহী মুক্ত দিবস

নিজস্ব প্রতিবেদক : ১৮ ডিসেম্বর রাজশাহী মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে পাক হানাদারমুক্ত হয় রাজশাহী। ১৬ ডিসেম্বর দেশ স্বাধীন হলেও দুদিন পর রাজশাহীতে উড়ে বিজয়ের পতাকা। দীর্ঘ অবরোধের পর মুক্ত বাতাসে নেমে আসে রাজশাহীবাসী। হারানো স্বজনদের খোঁজে অনেকেই ছুটে যান রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শামসুজ্জোহা হলসহ বিভিন্ন বধ্যভূমিতে, যেখানে উদ্ধার করা হয় নির্যাতিত অসংখ্য মানুষের মরদেহ।
মুক্তিযুদ্ধকালীন ৭ নম্বর সেক্টরের অধীন থাকা রাজশাহীকে হানাদারমুক্ত ঘোষণা করেন ৪ নম্বর সাব-সেক্টরের কমান্ডার মেজর গিয়াস উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী (বীর বিক্রম)। সেক্টর কমান্ডার মেজর নাজমুল হক শহীদ হওয়ার পর ৭ নম্বর সেক্টরের দায়িত্ব নেন কর্নেল কাজী নুরুজ্জামান (বীর উত্তম)।
মুক্তিযোদ্ধাদের ভাষ্য অনুযায়ী, একাত্তরে পাকিস্তানি বাহিনী রাজাকার, আলবদর ও পাকিস্তানপন্থী অবাঙালিদের সহযোগিতায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন স্থানে গণহত্যা চালায়। প্রায় তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার নিরীহ মানুষকে হত্যা করা হয়। মেজর গিয়াস উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী ও শেখপাড়া সাব-সেক্টরের কমান্ডার মেজর রশিদের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা চারদিক থেকে প্রতিরোধ গড়ে তুলে রাজশাহী শহরের দিকে অগ্রসর হন।
ঢাকার পতনের খবর ছড়িয়ে পড়লে রাজশাহীতে পাকবাহিনী ও তাদের দোসররা পিছু হটতে শুরু করে। আত্মগোপনে যায় রাজাকার-আলবদররা। মুক্তিবাহিনীর অগ্রবর্তী দল সাদা পতাকা উড়িয়ে রাজশাহীর উপকণ্ঠে প্রবেশ করে। বন্দিশালা থেকে মুক্তি পায় নির্যাতিত মানুষ। শোক আর আনন্দের অশ্রুতে ভিজে ওঠে রাজশাহীর মাটি।
১৮ ডিসেম্বর সকালে রাজশাহীর মাদরাসা হাইস্কুল মাঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের পর আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে রাজশাহীকে মুক্ত ঘোষণা করা হয়। পরে মেজর গিয়াস উদ্দিন আহমেদ চৌধুরীকে প্রশাসকের দায়িত্ব দেওয়া হয়। তৎকালীন পৌরসভা ভবনকে কন্ট্রোল রুম হিসেবে ব্যবহার করে শুরু হয় প্রশাসনিক কার্যক্রম।
এইভাবেই বিজয়ের মধ্য দিয়ে শুরু হয় স্বাধীন বাংলাদেশের পথে রাজশাহীর নতুন অধ্যায়।






