পাবনা-৫ আসনে নতুন সমীকরণ, ভোটের মাঠে শিমুল বিশ্বাস

নিজস্ব প্রতিবেদক, পাবনা : ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে পাবনা-৫ (সদর) আসনে রাজনীতির চিত্র বদলে যেতে শুরু করেছে। বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ও বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী অ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাসের প্রার্থিতায় নির্বাচনী মাঠে তৈরি হয়েছে নতুন সমীকরণ। অভিজ্ঞতা, মানবিক রাজনীতি ও তৃণমূলের সঙ্গে গভীর সংযোগ তাঁকে ঘিরে ভোটারদের মধ্যে বাড়াচ্ছে প্রত্যাশা ও আগ্রহ।

বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) দুপুরে পাবনা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা শাহেদ মোস্তফার কাছ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে মনোনয়নপত্র গ্রহণ করেন শিমুল বিশ্বাস। এ সময় উপস্থিত ছিলেন, জেলা বিএনপির সাবেক আহবায়ক অ্যাডভোকেট মির্জাআজিজুর রহমান, জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুস সামাদ খান মন্টু, সদস্য সচিব মাকসুদুর রহমান মাসুদ খন্দকার, জেলা বিএনপির সিনিয়র নেতা আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ মান্নান মাষ্টার, যুগ্ম আহ্বায়ক শেখ আবু ওবায়দা তুহিন ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান সিদ্দিক, কেএম মুসা, রেহানুল ইসলাম বুলাল, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি বাচ্চুসহ জেলা বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতৃবৃন্দ ও বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা তাঁর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন।

পাবনার কুঠিপাড়ার এক ঐতিহ্যবাহী পরিবারে জন্ম নেওয়া শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস ছাত্রজীবন থেকেই ছিলেন প্রতিবাদী ও জনঘনিষ্ঠ। শহীদ বুলবুল কলেজে টানা তিনবার ছাত্র সংসদের সহ-সভাপতি (ভিপি) নির্বাচিত হওয়া তাঁর নেতৃত্বের প্রথম বড় স্বীকৃতি হিসেবে বিবেচিত হয়।

আইন পেশায় যুক্ত হলেও তিনি কখনো নিজেকে কেবল আদালতের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখেননি। শ্রমজীবী মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় তিনি সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। শ্রমিক সংগঠনে বিভিন্ন সময়ে তার দায়িত্ব পালন তাঁর নেতৃত্ব ও তাঁকে তৃণমূলের মানুষের সঙ্গে নিবিড়ভাবে যুক্ত করেছে।

শিমুল বিশ্বাসের রাজনৈতিক দর্শন অত্যন্ত স্পষ্ট ও সরল। তাঁর মতে, রাজনীতি ক্ষমতার প্রদর্শন নয়, বরং মানুষের জীবনের সঙ্গে যুক্ত থাকার নাম। তিনি বারবার বলে আসছেন, রাজনীতি মানে ভোগ নয়, আধিপত্য নয়, মানুষের পাশে দাঁড়ানো।

এই দর্শনের প্রতিফলন দেখা যায় তাঁর ব্যক্তিগত জীবন ও রাজনৈতিক আচরণে। সৎ, নির্লোভ এবং মানবকল্যাণে নিবেদিত একজন মানুষ হিসেবে তিনি শুধুমাত্র পাবনায় নয় জাতীয় রাজনীতিতেও আলাদা পরিচিতি গড়ে তুলেছেন।

২০০২ সালে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্পোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি)-এর চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার সময় প্রতিষ্ঠানটি ছিল লোকসানে জর্জরিত। দায়িত্ব নেওয়ার পর স্বচ্ছতা, শৃঙ্খলা ও পরিকল্পিত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে তিনি অল্প সময়ের মধ্যেই প্রতিষ্ঠানটিকে লাভজনক করে তোলেন। এই অভিজ্ঞতা তাঁকে একজন দক্ষ প্রশাসক হিসেবেও প্রতিষ্ঠিত করেছে।

শিমুল বিশ্বাসের রাজনীতির অন্যতম ভিত্তি মানবিকতা ও সমাজসেবা। তাঁর পিতামহের নামে প্রতিষ্ঠিত আলহাজ আহেদ আলী বিশ্বাস মানব কল্যাণ ট্রাস্টের মাধ্যমে তিনি পাবনার বিভিন্ন এলাকায় শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও গৃহায়ন খাতে ব্যতিক্রমী অবদান রেখেছেন।

নিজেরা দেড় থেকে দুইশ’ কোটি টাকা বাজারমূল্যের সম্পদ এই ট্রাস্টে দান করে তিনি ও তাঁর ভাইবোনেরা বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। এই ট্রাস্টের আওতায় এতিমখানা, মাদ্রাসা, হেফজখানা ও শতাধিক মসজিদ নির্মাণের পাশাপাশি গৃহহীনদের জন্য হাজারো ঘর নির্মাণ করা হয়েছে।

শিমুল বিশ্বাসের রাজনীতি জাতীয় কেন্দ্রিক হলেও তার পুরোপুরি মনোযোগ পাবনাকেন্দ্রিক। তাঁর মূল লক্ষ্য হলো পাবনাকে এমন একটি জেলা হিসেবে গড়ে তোলা, যেখানে কর্মসংস্থান, মানবিক নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত হবে।

তিনি শিল্পায়নের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি, বন্ধ কলকারখানা পুনরায় চালু, তাঁত ও হোসিয়ারি শিল্পে বিশেষ প্রণোদনা এবং তরুণদের জন্য কারিগরি ও প্রযুক্তিগত শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দেওয়ার কথা জানিয়েছেন।

একই সঙ্গে কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা, কৃষিভিত্তিক শিল্প গড়ে তোলা এবং গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে কৃষকদের জীবনমান উন্নয়নের অঙ্গীকারও করেছেন তিনি।

পাবনার উন্নয়নে যোগাযোগ ব্যবস্থাকে তিনি বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছেন। নৌ, সড়ক ও রেল এই তিন খাতকে সমন্বিতভাবে এগিয়ে নেওয়ার পক্ষে তাঁর অবস্থান।

তাঁর সক্রিয় ভূমিকার ফলে পাবনা-ঢাকা সরাসরি ট্রেন চালুর প্রস্তুতি প্রায় চূড়ান্ত হয়েছে, যা আগামী ২০২৬ সালের মার্চ মাস থেকে চালু হওয়ার কথা রয়েছে। পাশাপাশি ঈশ্বরদী রেলগেটে যানজট নিরসনে ওভারপাস নির্মাণ, অব্যবহৃত রেলস্টেশন পুনরুজ্জীবন এবং গুরুত্বপূর্ণ সড়ক আধুনিকায়নের বিষয়গুলোও পরিকল্পনায় এসেছে।

পাবনায় আধুনিক উপশহর বাস্তবায়নের উদ্যোগকেও তিনি গুরুত্বের সঙ্গে দেখছেন। ইতোমধ্যে হাউজিং অথরিটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এলাকা পরিদর্শন করেছেন। এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে পরিকল্পিত আবাসন, উন্নত নাগরিক সুবিধা এবং জীবনমান উন্নয়নের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

নির্বাচনী মাঠে শিমুল বিশ্বাস তৃণমূল পর্যায়ে ব্যাপক সাড়া পাচ্ছেন। নেতাকর্মীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে তাঁর পক্ষে কাজ করছেন বলে জানিয়েছেন তিনি নিজেই। তাঁর মতে, এই সমর্থন কোনো তাৎক্ষণিক আবেগ নয়, বরং দীর্ঘদিনের সততা ও মানুষের পাশে থাকার স্বীকৃতি। তিনি বলেন, মানুষ সবকিছু লক্ষ্য করে এবং সময়মতো তার মূল্যায়ন করে।

অ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস পাবনা-৫ আসনে এমন একজন প্রার্থী যিনি উন্নয়ন, মানবিকতা ও অভিজ্ঞতার এক সমন্বিত প্রতিচ্ছবি। কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে তাঁর অবস্থান এবং পাবনার মানুষের সঙ্গে তাঁর গভীর সংযোগ তাঁকে এই আসনের অপ্রতিরোধ্য ও শক্তিশালী প্রার্থী হিসেবে তুলে ধরেছে।

পাবনার মানুষ এমন একজন প্রতিনিধিকেই সংসদে পাঠাতে চায়, যিনি জাতীয় পর্যায়ে এলাকার পক্ষে দৃঢ়ভাবে কথা বলতে পারবেন। সেই বিবেচনায় শিমুল বিশ্বাসের প্রার্থিতা পাবনার রাজনীতিতে তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠছে।