দেশের ৬৭ শতাংশ মানুষ ভিটামিন ‘ডি’র ঘাটতিতে

ডি-স্বল্পতায় বাড়ছে জটিল রোগের ঝুঁকি!
টুইট ডেস্ক: বাংলাদেশে ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি আশঙ্কাজনক মাত্রায় পৌঁছেছে। জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠানের একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, দেশের মোট জনগোষ্ঠীর ৬৭ শতাংশের বেশি মানুষ ভিটামিন ডি-স্বল্পতায় ভুগছেন। শহরাঞ্চলে বসবাসকারী মানুষের মধ্যে এই হার আরও বেশি—প্রায় ৭১ শতাংশ। নারী, শিশু ও বয়স্কদের মধ্যে ঝুঁকি তুলনামূলকভাবে বেশি বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
ভিটামিন ডি মানবদেহের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অণুপুষ্টি উপাদান। এটি হাড়ের গঠন ও শক্তি বজায় রাখা, রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য। বিশেষজ্ঞদের মতে, শরীরের প্রয়োজনীয় ভিটামিন ডি-এর মাত্র ১০–১৫ শতাংশ আসে খাদ্য থেকে, বাকি ৮৫–৯০ শতাংশ পাওয়া যায় সূর্যের আলো থেকে। তবে পর্যাপ্ত রোদ থাকা সত্ত্বেও খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাপনের কারণে দেশে এই ভিটামিনের ঘাটতি ক্রমেই বাড়ছে।
ভিটামিন ডি-এর অভাবে শিশুদের রিকেটস রোগ দেখা দেয়, যার ফলে হাড় নরম হয়ে যায় এবং পা বেঁকে যেতে পারে। বয়স্কদের মধ্যে অস্টিওম্যালাসিয়া ও অস্টিওপোরোসিসের ঝুঁকি বেড়ে যায়, এতে হাড় দুর্বল ও ভঙ্গুর হয়ে পড়ে। দীর্ঘমেয়াদি ঘাটতির ফলে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, ক্যানসার, মাংসপেশি ও পিঠে ব্যথা, এমনকি উদ্বেগ ও বিষণ্নতার মতো মানসিক সমস্যাও দেখা দিতে পারে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক ও জনস্বাস্থ্যবিদ অধ্যাপক ডা. বেনজির আহমেদ বলেন, “আমাদের দেশের মানুষের মধ্যে সুষম খাবারের ঘাটতি রয়েছে। মানুষ খাবার খাচ্ছে ঠিকই, কিন্তু ক্যালোরি, প্রোটিন, ভিটামিন ও খনিজের সমন্বয়যুক্ত সুষম খাদ্য গ্রহণ করছে না। এর ফলে ভিটামিন ডি-সহ বিভিন্ন অণুপুষ্টির ঘাটতি দেখা দিচ্ছে।” তিনি আরও জানান, খাদ্য থেকে পর্যাপ্ত ভিটামিন ডি না পাওয়া এবং শরীরে খাদ্য শোষণের সমস্যাও এই সংকটের অন্যতম কারণ।
গবেষণায় দেখা গেছে, দেশের প্রায় ৮০ শতাংশ শিশু ভিটামিন ডি-এর অভাবে ভুগছে। শূন্য থেকে এক বছর বয়সি শিশুদের মধ্যে প্রায় এক-তৃতীয়াংশের রক্তে ভিটামিন ডি-এর মাত্রা বিপজ্জনকভাবে কম। দুই থেকে পাঁচ বছর বয়সি শিশুদের মধ্যেও ডেফিশিয়েন্সি ও ইনসাফিশিয়েন্সির হার উদ্বেগজনক। এমনকি কিশোর বয়সীদের মাঝেও ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি ব্যাপকভাবে লক্ষ করা যাচ্ছে। ‘বাংলাদেশি জনগণের মাঝে ভিটামিন ডি-এর অবস্থা’ শীর্ষক একটি গবেষণায় বলা হয়েছে, দেশের প্রায় ৮৬ শতাংশ মানুষের মধ্যে হাইপোভিটামিনোসিস ডি রয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, সূর্যালোক ছাড়াও দুধ, ডিম, পনির, মাশরুম, তৈলাক্ত মাছ, লাল মাংস, কলিজা ও ভিটামিন ডি-সমৃদ্ধ সিরিয়াল এই ভিটামিনের ভালো উৎস। সাধারণভাবে শিশু, প্রাপ্তবয়স্ক, গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী মায়েদের জন্য প্রতিদিন গড়ে ১০ মাইক্রোগ্রাম ভিটামিন ডি প্রয়োজন।
ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের লার্জ স্কেল ফুড ফর্টিফিকেশন কান্ট্রি অ্যাডভোকেসি বাংলাদেশের প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. রীনা রাণী পাল বলেন, “ভিটামিন ডি চর্বিতে দ্রবণীয়। অনেক দেশে দুধ, মার্জারিন বা রুটিতে এই ভিটামিন যুক্ত করা হয়। তবে বাংলাদেশে ভোজ্য তেল প্রায় ৮৭.৫ শতাংশ পরিবার ব্যবহার করে এবং এটি সীমিতসংখ্যক শোধনাগারে উৎপাদিত হয়। তাই ভোজ্য তেলে ভিটামিন ডি সংযোজন করা গেলে দেশের বড় একটি জনগোষ্ঠীর ঘাটতি পূরণ সম্ভব।”
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি এখন জাতীয় জনস্বাস্থ্য সমস্যায় পরিণত হয়েছে। এ সংকট মোকাবিলায় সুষম খাদ্য গ্রহণ, নিরাপদ সূর্যালোক গ্রহণ, প্রয়োজন অনুযায়ী সাপ্লিমেন্ট এবং খাদ্যদ্রব্যে ভিটামিন ডি ফোর্টিফিকেশনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া জরুরি।






