যথাযোগ্য মর্যাদা ও উৎসাহের সাথে রাজশাহীতে মহান বিজয় দিবস উদযাপিত

নিজস্ব প্রতিবেদক: আজ ১৬ ডিসেম্বর, মহান বিজয় দিবস। বাঙালি জাতির ইতিহাসে এক ঐতিহাসিক দিন। রাজশাহীতে দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদা ও উৎসাহের সাথে উদযাপিত হয়। মঙ্গলবার সূর্যোদয়ের সাথে সাথে সকল সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও বেসরকারি ভবনসমূহে জাতীয় পতাকা উত্তোলন এবং জেলা পুলিশ লাইন্সে ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসটির কার্যক্রম শুরু হয়।

সকাল ৬টা ৪২ মিনিটে কালেক্টরেট চত্বর শহিদ স্মৃতিস্তম্ভে বিভাগীয় কমিশনার ড. আ.ন.ম. বজলুর রশীদ, রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি মোহাম্মদ শাহজাহান, রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার ড. মো. জিল্লুর রহমান, জেলা প্রশাসক আফিয়া আখতার, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নাঈমুল হাছান, বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ের বিভিন্ন সরকারি, বেসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত দপ্তর ও সংস্থা প্রধান, রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, সাংবাদিক, বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ পুষ্পস্তবক অর্পণ করে মহান মুক্তিযুদ্ধের শহিদদের গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন।

মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে সকাল ৯ টায় নগরীর মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি স্টেডিয়ামে কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হয়। বিভাগীয় কমিশনার ড. আ.ন.ম. বজলুর রশীদ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। এরপর জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় বিভাগীয় কমিশনার বলেন, ১৬ই ডিসেম্বর বাঙালি জাতির আত্মপরিচয় অর্জনের দিন, পরাধীনতার শৃঙ্খল ভাঙার দিন। ১৯৭১ সালে আমাদের সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য যারা নিজেদের জীবন বিসর্জন দিয়েছিলেন সেই অকুতোভয় শহিদ মুক্তিযোদ্ধা, যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং নির্যাতিত মা-বোনদের প্রতি জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা। তাঁরা যুদ্ধ করেছিলেন এদেশের মাটির জন্য, পতাকার জন্য এবং একটি বৈষম্যহীন বাংলাদেশ বিনির্মাণের জন্য। মহান মুক্তিযুদ্ধে স্বজনহারা প্রতিটি পরিবারের প্রতি জানাচ্ছি আমার গভীর সমবেদনা।

বজলুর রশীদ বলেন, ২০২৪ সালে জুলাই-আগস্ট এ সংগঠিত গণঅভ্যুত্থান সে ঐতিহাসিক ধারাবাহিকতারই একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। বৈষম্যহীন বাংলাদেশ বিনির্মাণে ২০২৪ সালে যারা আত্মাহুতি দিয়েছেন, আহত হয়েছেন তাদের শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি।

উপস্থিত সকলের উদ্দেশে তিনি বলেন, ১৬ই ডিসেম্বর শুধুমাত্র আমরা বিজয় অর্জন করিনি বরং একটি ন্যায়ভিত্তিক ও মানবিক বাংলাদেশ বিনির্মাণের স্বপ্ন দেখেছিলাম। মহান মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা ছিল শোষণ, বঞ্চনা ও বৈষম্যের অবসান ঘটিয়ে সকল মানুষের সমান অধিকার নিশ্চিত করা। এই জন্য সাম্য, ন্যায়বিচার এবং মানবিক মূল্যবোধকে আমাদের সমাজে প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

এসময় ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রসঙ্গ তুলে বিভাগীয় কমিশনার এটাকে ‘গণতান্ত্রিক অধিকার চর্চার ঐতিহাসিক সুযোগ’ আখ্যা দেন। একইসাথে তিনি একটি শান্তিপূর্ণ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে বিজয় দিবসে তাঁর দৃঢ় প্রত্যয় পুনর্ব্যক্ত করেন।

জেলা প্রশাসক আফিয়া আখতার এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি মোহাম্মদ শাহজাহান, আরএমপি কমিশনার ড. মো. জিল্লুর রহমান এবং পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নাঈমুল হাছান বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ের বিভিন্ন সরকারি, বেসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত দপ্তর ও সংস্থার প্রধান, বীরমুক্তিযোদ্ধা, রাজনীতিক, ব্যবসায়ী, সাংবাদিক, বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের পরিবেশনায় ডিসপ্লে প্রদর্শন করা হয়।

এরপর বেলা এগারোটায় রাজশাহী জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে জেলা পর্যায়ে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানে সংবর্ধনা দেয়া হয়। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বীরমুক্তিযোদ্ধা এবং শহিদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যদের হাতে ফুল ও উপহার সামগ্রী তুলে দেওয়া হয়। সংবর্ধনা শেষে একই স্থানে এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়।