অস্ট্রেলিয়ায় ইহুদি উৎসবে হামলা: মৃত্যু বেড়ে ১৬, ঘটনাস্থলে প্রধানমন্ত্রী

বন্ডি বিচে সন্ত্রাসী হামলা: নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১৫-১৬, প্রধানমন্ত্রী ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে কঠোর বন্দুক আইনের প্রস্তাব।

বিশ্ব ডেস্ক: অস্ট্রেলিয়ার সিডনির আইকনিক বন্ডি বিচে রবিবার (১৪ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় এক ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১৬ জনে দাঁড়িয়েছে। পুলিশ এই ঘটনাকে ইহুদি সম্প্রদায়কে লক্ষ্য করে পরিকল্পিত সন্ত্রাসী হামলা হিসেবে ঘোষণা করেছে।

হামলাটি ঘটে হানুক্কাহ উৎসবের প্রথম দিনে, যখন শত শত মানুষ “চানুকাহ বাই দ্য সি” নামে একটি উৎসবে জড়ো হয়েছিলেন।

হামলাকারীরা ছিলেন বাবা-ছেলে, সাজিদ আক্রাম (৫০) এবং নাভিদ আক্রাম (২৪)। পুলিশের সঙ্গে গুলি বিনিময়ে বাবা নিহত হয়। ছেলে গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এবং পুলিশ হেফাজতে রয়েছেন।

নিহতদের মধ্যে রয়েছেন একটি ১০ বছরের শিশু, চাবাদ অফ বন্ডির সহকারী রাবাই এলি শ্ল্যাঙ্গার (৪১) এবং অন্যান্য ইহুদি সম্প্রদায়ের সদস্যরা। আহতের সংখ্যা ৪০-এর বেশি, যাদের মধ্যে দু’জন পুলিশ অফিসারও রয়েছেন।

ঘটনাস্থল থেকে একটি গাড়িতে ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি) উদ্ধার করা হয়েছে, যা বোম্ব স্কোয়াড নিষ্ক্রিয় করেছে।

পুলিশ কমিশনার মাল ল্যানিয়ন জানিয়েছেন, হামলাকারীদের কাছ থেকে লাইসেন্সপ্রাপ্ত আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার হয়েছে।
সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) সকালে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি অ্যালবানিজ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। তিনি এই হামলাকে “বিশুদ্ধ মন্দতা, ইহুদি-বিদ্বেষ এবং সন্ত্রাসবাদের কাজ” বলে অভিহিত করেছেন।

অ্যালবানিজ ঘোষণা করেছেন যে, ন্যাশনাল ক্যাবিনেটের বৈঠকে কঠোরতর বন্দুক নিয়ন্ত্রণ আইনের প্রস্তাব নেওয়া হবে। এর মধ্যে রয়েছে ব্যক্তি প্রতি আগ্নেয়াস্ত্রের সংখ্যা সীমিত করা, লাইসেন্সের সময়সীমা নির্ধারণ এবং নিয়মিত পর্যালোচনা। তিনি বলেন, “লাইসেন্স চিরকালীন হওয়া উচিত নয়, কারণ মানুষের পরিস্থিতি বদলাতে পারে বা তারা উগ্রবাদী হয়ে উঠতে পারে।”

নিউ সাউথ ওয়েলসের প্রিমিয়ার ক্রিস মিন্সও বন্দুক আইন পরিবর্তনের পক্ষে সওয়াল করেছেন। অস্ট্রেলিয়ায় ১৯৯৬ সালের পোর্ট আর্থার গণহত্যার পর কঠোর বন্দুক নিয়ন্ত্রণ আইন চালু হয়েছিল, কিন্তু এই ঘটনা সেই আইনের আরও শক্তিশালীকরণের দাবি উঠিয়েছে।

হামলার পর বন্ডি বিচ এলাকা বন্ধ রাখা হয়েছে এবং তদন্ত চলছে। ইহুদি সম্প্রদায়ের নেতারা এই ঘটনাকে “সবচেয়ে খারাপ আশঙ্কার বাস্তবায়ন” বলে বর্ণনা করেছেন। বিশ্ব নেতারা নিন্দা জানিয়েছেন, যার মধ্যে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু অস্ট্রেলিয়ার সরকারকে ইহুদি-বিদ্বেষ মোকাবিলায় নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ করেছেন।

এই হামলা অস্ট্রেলিয়ার ইতিহাসে সাম্প্রতিককালের সবচেয়ে মারাত্মক সন্ত্রাসী ঘটনা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে, যা দেশটির শান্তিপূর্ণ সমাজে গভীর আঘাত হেনেছে।