বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সাফল্য, স্যান্ডহার্স্টে ডাবল অ্যাওয়ার্ড

যুক্তরাজ্যের রয়্যাল মিলিটারি অ্যাকাডেমি স্যান্ডহার্স্ট: একসঙ্গে দুই আন্তর্জাতিক পুরস্কার জিতলেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ক্যাডেট।
টুইট ডেস্ক: বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অফিসার ক্যাডেট সাকিব আহসান রিফাত যুক্তরাজ্যের রয়্যাল মিলিটারি অ্যাকাডেমি স্যান্ডহার্স্ট (আরএমএএস) থেকে একই সঙ্গে দুটি মর্যাদাপূর্ণ আন্তর্জাতিক সম্মান—”ইন্টারন্যাশনাল সোর্ড অব অনার” এবং “ইন্টারন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড”—অর্জন করে ইতিহাস গড়েছেন।
এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবার কোনো ক্যাডেট এই দুটি পুরস্কার একসঙ্গে জিতেছেন, যা দেশের সামরিক ক্ষেত্রে এক অভূতপূর্ব মাইলফলক।
১২ ডিসেম্বর স্যান্ডহার্স্টে অনুষ্ঠিত পাসিং-আউট প্যারেডে এই সম্মাননা প্রদান করেন যুক্তরাজ্যের রাজকুমারী অ্যান (Her Royal Highness Princess Anne)। এই অনুষ্ঠানে যুক্তরাজ্যসহ বিশ্বের ১৮টি দেশ থেকে মোট ১৮৪ জন ক্যাডেট অংশগ্রহণ করেছিলেন, যাদের মধ্যে ১৫৭ জন ছিলেন যুক্তরাজ্যের এবং ২৭ জন ছিলেন আন্তর্জাতিক।
অফিসার ক্যাডেট রিফাত সকল আন্তর্জাতিক ক্যাডেটের মধ্যে সেরা চৌকস ক্যাডেট হিসেবে “ইন্টারন্যাশনাল সোর্ড অব অনার” লাভ করেন। একইসঙ্গে একাডেমিক এবং সামরিক বিষয়ে সামগ্রিক সর্বোচ্চ ফলাফলের ভিত্তিতে পুরো কোর্সে তৃতীয় স্থান এবং আন্তর্জাতিক ক্যাডেটদের মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করে “ইন্টারন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড” অর্জন করেন।
রিফাতের যাত্রা
অফিসার ক্যাডেট সাকিব আহসান রিফাত ২০২২ সালে কুমিল্লা ক্যাডেট কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে বাংলাদেশ মিলিটারি অ্যাকাডেমির (বিএমএ) ৮৯তম দীর্ঘমেয়াদি কোর্সে যোগদান করেন। বিএমএ-তে তার অসাধারণ মেধা এবং যোগ্যতার স্বীকৃতিস্বরূপ তাকে এক বছর মেয়াদি কমিশনিং কোর্সের জন্য স্যান্ডহার্স্টে প্রেরণ করা হয়। তিনি ২৫ নভেম্বর ২০২৪ থেকে ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত যুক্তরাজ্যে এই প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করেন।
স্যান্ডহার্স্টের এই কোর্সটি বিশ্বের সবচেয়ে কঠিন সামরিক প্রশিক্ষণগুলোর একটি, যেখানে ক্যাডেটদের শারীরিক, মানসিক এবং নেতৃত্বের দক্ষতা পরীক্ষা করা হয়। রিফাতের এই সাফল্য তার অসাধারণ নিষ্ঠা, শৃঙ্খলা এবং দক্ষতার প্রতিফলন, যা ভবিষ্যতের ক্যাডেটদের জন্য এক নতুন মানদণ্ড স্থাপন করেছে।
পুরস্কারগুলোর গুরুত্ব
“ইন্টারন্যাশনাল সোর্ড অব অনার” হলো স্যান্ডহার্স্টের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কারগুলোর একটি, যা শুধুমাত্র সেরা আন্তর্জাতিক ক্যাডেটকে দেওয়া হয়। এটি ক্যাডেটের সামরিক দক্ষতা, নেতৃত্ব এবং চৌকসতার স্বীকৃতি।
অন্যদিকে, “ইন্টারন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড” দেওয়া হয় একাডেমিক এবং সামরিক ফলাফলে সামগ্রিক সর্বোচ্চ অর্জনের জন্য। বাংলাদেশের জন্য এটি একটি গর্বের মুহূর্ত, কারণ এর আগে কোনো বাংলাদেশি ক্যাডেট এই দুটি পুরস্কার একসঙ্গে জিততে পারেননি।
পূর্বে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কয়েকজন ক্যাডেট স্যান্ডহার্স্ট থেকে পুরস্কার জিতেছেন, কিন্তু এই ডাবল অর্জন প্রথম।
২০২৪ সালে মেজর জেনারেল ফিনলে অ্যাওয়ার্ড জিতেছিলেন একজন বাংলাদেশি ক্যাডেট, কিন্তু রিফাতের এই সাফল্য এক নতুন অধ্যায়।
প্রতিক্রিয়া এবং প্রভাব
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অফিসিয়াল এক্স (পূর্ববর্তী টুইটার) অ্যাকাউন্ট থেকে এই সাফল্যের বিস্তারিত বিবরণ প্রকাশ করা হয়েছে, যাতে ছবি এবং ভিডিও সংযুক্ত রয়েছে। এছাড়া, ডেইলি ড্যাজলিং ডন, টিওবি নিউজ এবং বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে এই খবর ছড়িয়ে পড়েছে, যা বাংলাদেশের জন্য গর্বের উৎস হয়ে উঠেছে।
এই অর্জন শুধুমাত্র সেনাবাহিনীর জন্য নয়, সমগ্র বাংলাদেশের যুবসমাজের জন্য অনুপ্রেরণা। এটি প্রমাণ করে যে কঠোর পরিশ্রম এবং নিষ্ঠার মাধ্যমে বিশ্বমঞ্চে সাফল্য অর্জন সম্ভব।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এই সাফল্যকে “দেশের তরে সর্বত্র” মন্ত্রের প্রতিফলন হিসেবে দেখছে।







