রাবির চারুকলা অনুষদের শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অনিয়মের অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের চিত্রকলা, প্রাচ্যকলা ও ছাপচিত্র বিভাগে প্রভাষক নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ও মূল্যায়ন পদ্ধতিকে ‘হাস্যকর’, ‘প্রশ্নবিদ্ধ’ ও ‘উদ্দেশ্যমূলক’ বলে অভিযোগ করেছেন পরীক্ষায় অংশ নেওয়া অধিকাংশ প্রার্থী। গত ১০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত ওই পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে আবেদনকারীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও আপত্তির সৃষ্টি হয়েছে।
অংশগ্রহণকারী প্রার্থীদের দাবি, চারুকলা অনুষদের প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষার মতোই প্রায় একই ধরণের প্রশ্নপত্র দিয়ে শিক্ষক নিয়োগের মতো গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে, যা অত্যন্ত অযৌক্তিক ও পেশাগতভাবে অগ্রহণযোগ্য। তাদের ভাষায়, “যেখানে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা যাচাইয়ের কথা, সেখানে ভর্তি পরীক্ষার মানের প্রশ্নপত্র প্রয়োগ করা স্পষ্টতই উদ্দেশ্যমূলক।”
তত্ত্বীয় ৩৭.৫ নম্বর, ব্যবহারিক মাত্র ১২.৫ — প্রশ্নবিদ্ধ নম্বর বণ্টন
অভিযোগকারীদের মতে, চারুকলা অনুষদের মূল শক্তি ব্যবহারিক কাজ হলেও ৫০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষায় তত্ত্বীয় অংশে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৩৭.৫ নম্বর এবং ব্যবহারিকে মাত্র ১২.৫ নম্বর। অথচ অনার্স কোর্সে মোট ২২০০ নম্বরের মধ্যে ১৬৫০ নম্বরই ব্যবহারিক বিষয়ভিত্তিক।
জানা গেছে, বিভাগের প্ল্যানিং কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছিল—নিয়োগ পরীক্ষায় ৬০ শতাংশ ব্যবহারিক এবং ৪০ শতাংশ তত্ত্বীয় রাখা হবে। তবে পরীক্ষায় এই সিদ্ধান্ত ‘সম্পূর্ণ উপেক্ষা’ করা হয়েছে।
প্রার্থীরা অভিযোগ করেন, “ব্যবহারিক বিষয়ে দক্ষতা যাচাই ছাড়া চারুকলায় মানসম্মত শিক্ষক নির্বাচন অসম্ভব। এমন প্রশ্নপত্র কেবল তত্ত্বীয় বিষয়ে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রয়োগযোগ্য, ব্যবহারিক শিক্ষক বাছাইয়ে নয়।”
পোর্টফোলিও বা ব্যবহারিক দক্ষতা যাচাইয়ের সুযোগই ছিল না
প্রার্থীদের অভিযোগ, পরীক্ষায় তাদের চিত্রকর্ম, ব্যবহারিক দক্ষতা বা পোর্টফোলিও উপস্থাপনের কোনও সুযোগ রাখা হয়নি। এমনকি উত্তরপত্রে গোপন কোড বা সংকেত ব্যবহার করে পছন্দের প্রার্থীকে চিহ্নিত করার সুযোগও ছিল বলে সন্দেহ প্রকাশ করেন তারা।
বিভাগীয় সভাপতির ভূমিকায় প্রশ্ন
চিত্রকলা, প্রাচ্যকলা ও ছাপচিত্র বিভাগের সভাপতি ড. বনি আদমের অধীনে অনুষ্ঠিত এ পরীক্ষা নিয়ে আরও বিতর্ক তৈরি হয়েছে। প্রার্থীরা দাবি করেন, ড. বনি আদম নিজেও অতীতে নিয়মবহির্ভূতভাবে প্রাচ্যকলা গ্রুপে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। বিজ্ঞপ্তি ছিল প্রাচ্যকলা শাখায়, অথচ তিনি পাশ করেছিলেন ছাপচিত্র থেকে—এমন অভিযোগ পূর্বেও উঠেছিল। তাদের ভাষায়, “নিয়োগ পরীক্ষার ন্যায়পরায়ণতা তার অধীনে প্রশ্নবিদ্ধ হওয়াই স্বাভাবিক।”

এমন পরিস্থিতিতে ক্ষুব্ধ আবেদনকারীরা জানান, ব্যবহারিক ফোকাস রেখে নিয়মতান্ত্রিকভাবে পুনরায় পরীক্ষা নেওয়া না হলে তারা আইনি উদ্যোগ নিতে বাধ্য হবেন। তারা আরও বলেন, “এ ধরনের প্রহসনমূলক পরীক্ষা গ্রহণ করে চারুকলায় যোগ্য শিক্ষক বাছাই করা সম্ভব নয়। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের উচিত বিষয়টির দ্রুত তদন্ত করা।”
এ বিষয়ে রাবি চারুকলা অনুষদের চিত্রকলা, প্রাচ্যকলা ও ছাপচিত্র বিভাগের সভাপতি ড. বনি আদমের সাথে মুঠো ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ভাই এসব অভিযোগ আমলে নিয়েন না। নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ স্বচ্ছ হয়েছে। এখানে আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ভিত্তিহীন। প্রতিবেদককে তিনি রবিবার চারুকলা অনুষদে দেখা করতেও বলেন।






