ব্যাংকের কর্মীদের ইনসেনটিভ বোনাস বন্ধের নির্দেশ দিল বাংলাদেশ ব্যাংক

বোনাস বন্ধে ব্যাংক কর্মীদের ক্ষোভ: মন ভাঙলে সেবাও ভাঙবে।

টুইট ডেস্ক: ব্যাংকের আর্থিক স্বাস্থ্য পুরোপুরি সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কোনো ধরনের ইনসেনটিভ বোনাস দেওয়া যাবে না। এমনকি অ্যাক্রুড (Accrued) ও আনরিয়েলাইজড (Unrealized) লাভ দেখিয়েও বোনাস প্রদান সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

সোমবার (৯ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ থেকে সব তফসিলি ব্যাংকের এমডি ও সিইওদের কাছে পাঠানো এক সার্কুলার লেটারে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

সার্কুলারে বলা হয়েছে, যেসব ব্যাংকের ক‌য়েক‌টি সমস্যাগুলোর যেকোনো একটি রয়েছে, সেসব ব্যাংক এক টাকাও ইনসেনটিভ বোনাস দিতে পারবে না। যেমন-

প্রভিশন ঘাটতি (Provision Shortfall) থাকলে;

রিটেইনড আর্নিংস (Retained Earnings) শূন্য বা লোকসানে থাকলে;

মুনাফা থেকে প্রভিশন ঘাটতি পূরণের পরেও বোনাস দেওয়ার মতো পর্যাপ্ত অর্থ না থাকলে;

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশ বিলম্বে বা আংশিক পালন করলে;

বিশেষ করে দুর্বল, সমস্যাগ্রস্ত ও রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর প্রতি এ নির্দেশ কঠোরভাবে মানতে বলা হয়েছে।

২০২৫ অর্থবছর থেকে এ নির্দেশনা কার্যকর হবে বলে সার্কুলারে উল্লেখ করা হয়েছে।

ব্যাংকিং খাতের বিশ্লেষকরা বলছেন, খেলাপি ঋণ ও প্রভিশন ঘাটতির কারণে অনেক ব্যাংকই এখন বোনাস দিতে পারবে না। ফলে হাজার হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারীর বর্ধিত আয়ের পথ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।

তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই পদক্ষেপকে ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা ফেরানোর জন্য জরুরি বলে মনে করছেন অনেকে।

বোনাস বন্ধে ব্যাংক কর্মীদের ক্ষোভ

বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন সার্কুলারে ইনসেনটিভ বোনাস বন্ধের ঘোষণায় সারা দেশের ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ দেখা গে‌ছে।

“যারা হাজার হাজার কোটি টাকা লুটেছে, তারা বিদেশে বাড়ি কিনছে। আর আমরা যারা শাখায় খেটে মুনাফা এনেছি, আমাদের বোনাস বন্ধ?” — এমন প্রশ্নই এখন সবার মুখে মুখে।

ভালো চলা বেসরকারি ব্যাংকের কর্মীরাও ক্ষুব্ধ। তারা বলছেন, “দশটা খারাপ ব্যাংকের কারণে পঞ্চাশটা ভালো ব্যাংকের লাখো কর্মী কেন শাস্তি পাবে?”

কর্মচারী নেতারা জানিয়েছেন, দুর্নীতিবাজদের শাস্তি দিন। সাধারণ কর্মীদের প্রাপ্য কেড়ে নেবেন না।

অনেকেই বলছেন, এই সিদ্ধান্তে কর্মীদের মন ভেঙে গেলে ব্যাংকের সেবার মান আরও খারাপ হবে।

আন্দোলনের সম্ভাবনা

ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য পরিষদের একজন কেন্দ্রীয় নেতা জানিয়েছেন, আগামী সপ্তাহে জরুরি সভা ডাকা হয়েছে। প্রয়োজনে তারা মানববন্ধন, প্রতিবাদ সভা, এমনকি আইনি পদক্ষেপও নেবেন।

তিনি বলেন, “আমরা চাই, যে ব্যাংকের সমস্যা আছে, সেখানে শুধু বোর্ড ও টপ ম্যানেজমেন্টের বোনাস-সুবিধা বন্ধ হোক। সাধারণ কর্মীদের দিয়ে দুর্নীতির খেসারত দেওয়ানো যায় না।”

বিশ্লেষকদের মত

ব্যাংকিং বিশ্লেষকেরা বলছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের এই সিদ্ধান্ত ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা ফেরাতে সাহায্য করবে ঠিকই, কিন্তু সাধারণ কর্মীদের মনোবল ভেঙে দিতে পারে। ফলে সেবার মান কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

তারা পরামর্শ দিয়েছেন, বোনাস বন্ধের পরিবর্তে ‘পারফরম্যান্স-ভিত্তিক’ একটি স্বচ্ছ নীতিমালা করা উচিত ছিল, যাতে ভালো ব্যাংকের ভালো কর্মীরা বঞ্চিত না হন।