জাপানের সুনামি সতর্কতা প্রত্যাহার, মেগা-কোয়েকের আশঙ্কা: আফটারশক ৫.৫

জাপানে ৭.৫ মাত্রার ভূমিকম্প: উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ধ্বংসলীলা, ২৩ জন আহত, সুনামি সতর্কতা প্রত্যাহার, মেগা-কোয়েকের আশঙ্কা! ভূমিকম্পের পর আফটারশক।

টুইট প্রতিবেদক: জাপানের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় আওমোরি প্রদেশের হাচিনোহে শহরের কাছে ৮ ডিসেম্বর-এ রাত ১১:১৫ মিনিটে (স্থানীয় সময়) ৭.৫ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে। ভূমিকম্পের পর হোকাইডো, আওমোরি ও ইওয়াতে উপকূলীয় এলাকায় ৩ মিটার উচ্চতার সুনামির সতর্কতা জারি করা হয়। টিভি স্ক্রিনে “সুনামি! দৌড়াও!” সতর্কবার্তা ফ্ল্যাশ হয় এবং বোটগুলো জরুরিভাবে বন্দর ছাড়ে।

পর্যবেক্ষণে সর্বোচ্চ ৭০ সেমি (২ ফুট) উচ্চতার তরঙ্গ ইওয়াতে দেখা যায়, যা কয়েকটি বন্দরে ২০–৭০ সেমি পর্যন্ত ছড়ায়। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে সতর্কতা অ্যাডভাইজরিতে নামিয়ে আনা হয়। তবে জাপানের আবহাওয়া সংস্থা (জেএমএ) সতর্ক করেছে যে “মেগা-কোয়েক” (৮ মাত্রার) ঝুঁকি এখনও রয়ে গেছে।

ভূমিকম্পের বিস্তারিত: কেন্দ্র থেকে ছড়িয়ে পড়া ধ্বংস

ভূমিকম্পটি হাচিনোহের উত্তর-পূর্বে প্রায় ৮০ কিলোমিটার দূরে সমুদ্রতলে সংঘটিত হয়। প্রথমে এর মাত্রা ৭.৬ হিসেবে অনুমান করা হয়েছিল, পরে ৭.৫-এ নামানো হয়। কম্পন দীর্ঘস্থায়ী ছিল।

হাচিনোহে শহরে একটি ঐতিহাসিক টোরি গেট (শিন্টো মন্দিরের প্রবেশদ্বার) ধসে পড়ে। ভাঙা কাঁচের গ্লাস-প্লেট, বইয়ের আলমারি উল্টে যাওয়া, হোটেলের দেওয়ালে ফাটল এবং একটি গাড়ি মাটির ফুটোয় পড়ে যায়। স্যাপোরো থেকে সেন্ডাই পর্যন্ত অঞ্চল কম্পিত হয় এবং প্রায় ৮০০টি বাড়িতে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়। বুলেট ট্রেন (টোহোকু শিনকানসেন) মোরিওকা থেকে শিন-আওমোরি পর্যন্ত স্থগিত হয়।

হাচিনোহে শহরে কম্পন জাপানের ১-৭ স্কেলে “উপরের ৬” মাত্রায় অনুভূত হয়। এত তীব্র কম্পনের কারণে স্থায়ী থাকা বা হাঁটতে গিয়ে হামাগুড়ি দিয়ে এগোনো ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না। প্রায় ৯০,০০০ বাসিন্দাকে উদ্ধার নির্দেশ দেওয়া হয়।

ক্ষয়ক্ষতি ও আহত: ২৩ জনের মধ্যে একজনের গুরুতর অবস্থা

ফায়ার অ্যান্ড ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট এজেন্সির প্রতিবেদনে অন্তত ২৩ জন আহত হয়েছেন, যার মধ্যে একজনের অবস্থা গুরুতর। অধিকাংশ আহত ফেলে পড়া বস্তুতে আঘাত পেয়েছেন। স্থানীয় শিক্ষক এবং ব্যবসায়ীরা জানান, কম্পনের তীব্রতা এতটা ছিল যে বই, আলমারি ও প্লেট ভেঙে পড়েছে। মৃত্যুর খবর এখনও পাওয়া যায়নি।

জরুরি টাস্ক ফোর্স গঠন

প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তারাকাইচি জরুরি টাস্ক ফোর্স গঠন করে ক্ষয়ক্ষতির দ্রুত মূল্যায়নের নির্দেশ দেন। প্রতিরক্ষা মন্ত্রী শিনজিরো কোজুমি জানান, হাচিনোহে এয়ারবেসে প্রায় ৪৮০ বাসিন্দা আশ্রয় নিয়েছে এবং ১৮টি হেলিকপ্টার ক্ষয়ক্ষতি মূল্যায়নের জন্য প্রেরিত হয়েছে। জেএমএ এবং ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট কর্মকর্তারা যৌথভাবে আফটারশক এবং সতর্কতা জারি করেছেন।

আফটারশক

৯ ডিসেম্বর ভোরে ৫.৫ মাত্রার একটি উল্লেখযোগ্য আফটারশক ঘটে (উত্তর হোনশুর কাছে, গভীরতা ৩৫ কিলোমিটার)। US Geological Survey (USGS) এটি ৫.১ মাত্রার বলে রিপোর্ট করে। পরবর্তী কয়েক ঘণ্টায় ছোট ছোট কম্পন চলতে থাকে। আজ সকাল পর্যন্ত সুনামি অ্যাডভাইজরি পুরোপুরি প্রত্যাহার করা হয়েছে, তবে আফটারশক চলছে—যার মধ্যে ৫.৫ মাত্রার একটি উল্লেখযোগ্য। সামাজিক মাধ্যমে ভিডিও ভাইরাল হয়েছে, যেখানে হাচিনোহে-র রাস্তায় লোকেরা দৌড়ে পালাচ্ছে এবং টিভি স্ক্রিনে সতর্কতা ফ্ল্যাশ হচ্ছে।

জাপান বিশ্বের সবচেয়ে ভূমিকম্পপ্রবণ দেশ। রেল স্থগিত, বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্নতা এবং উদ্ধার বিলম্বের কারণে স্থানীয় ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মানবিকভাবে, ৪৮০ জন এয়ারবেসে আশ্রয় নিয়েছে এবং হাজারো মানুষ উদ্বিগ্ন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জাপানের দুর্যোগ প্রস্তুতি জীবনরক্ষায় সাহায্য করেছে, তবে মেগা-কোয়েকের আশঙ্কা সতর্কতা বাড়িয়েছে।

এই ৭.৫ মাত্রার ভূমিকম্প জাপানের “রিং অফ ফায়ার” অবস্থানের স্মারক। সরকারের দ্রুত প্রতিক্রিয়া এবং জনগণের প্রস্তুতি ক্ষতি কমিয়েছে, তবে আফটারশক এবং মেগা-কোয়েকের আশঙ্কায় পরবর্তী কয়েক দিন গুরুত্বপূর্ণ।

প্রধানমন্ত্রী তারাকাইচির আহ্বান অনুসারে, উপকূলীয় বাসিন্দারা প্রস্তুতি বজায় রাখুন এবং জেএমএ ও স্থানীয় মিডিয়া নিয়মিত অনুসরণ করুন।