রাজশাহীতে ভেজাল গুড়ের দাপট, খাঁটি উৎপাদকরা লোকসানে

মোহাম্মদ আলী : শীতের আগমনে পুঠিয়াসহ রাজশাহীর গ্রামাঞ্চলে শুরু হয়েছে খেজুর রস সংগ্রহ ও গুড় তৈরির মৌসুম। ভোরে ভোরে গাছিরা গাছ থেকে রস নামাচ্ছেন, ঘরে ঘরে চলছে খাঁটি খেজুরের গুড় তৈরির প্রস্তুতি। বাজারে উঠতে শুরু করেছে খুরি, পাটালি ও ঝোলা গুড় যার ঘ্রাণে মুগ্ধ ক্রেতারা।

তবে মৌসুমের এই পরিচিত দৃশ্যের আড়ালে এবার দেখা দিয়েছে উদ্বেগজনক বাস্তবতা। বাজারে এবার খাঁটি গুড়ের পাশাপাশি ব্যাপকভাবে মিলছে চিনি মেশানো ভেজাল গুড়। অসাধু উৎপাদকরা কম খরচে লাভ বেশি করতে চিনি ও রাসায়নিক মিশিয়ে গুড় তৈরি করছে। এতে প্রতারিত হচ্ছেন ভোক্তা, আর লোকসানের মুখে পড়ছেন প্রকৃত গাছি ও চাষিরা।

স্থানীয় কৃষক উজ্জল বলেন, “এক মণ খাঁটি গুড় বানাতে কমপক্ষে ৫২০০ টাকা খরচ হয়। কিন্তু বাজারে চিটাগুড় বা চিনি মেশানো গুড় কম দামে বিক্রি হচ্ছে। তাই আমাদের খাঁটি গুড়ের দাম উঠছে না—এবার বড় লোকসান হবে।”

তথ্য অনুযায়ী, খাঁটি গুড়ের উৎপাদন খরচ: প্রতি কেজি ১৩০–১৪০ টাকা, ভেজাল গুড়ের বিক্রি মূল্য: প্রতি কেজি ১৫০–১৬০ টাকা,সস্তা হওয়ায় অনেক ক্রেতা না বুঝেই ভেজাল গুড় কিনছেন।

ভেজালের কারণে স্বাস্থ্যঝুঁকি। গাছিরা অভিযোগ করছেন, কিছু অসাধু ব্যক্তি চিনি ও রাসায়নিক মিশিয়ে এমন গুড় তৈরি করছে, যা দেখতে ভালো হলেও স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।

পুঠিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ডা. সুচনা বলেন, “চিনি মেশানো গুড় খেলে দাঁতের ক্ষয়, হজমের সমস্যা, অতিরিক্ত ওজন, ডায়াবেটিস ও লিভারের জটিলতা পর্যন্ত দেখা দিতে পারে।”

উপজেলা কৃষি অফিসার স্মৃতি রানী সরকার জানান, ২০২৪–২৫ অর্থবছরে পুঠিয়ায় ২৯০ হেক্টর জমিতে খেজুর চাষ হয়েছে। তিনি জানান, “নিপাহ ভাইরাস সংক্রমণ রোধে কাঁচা খেজুর রস না খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছি। পাশাপাশি আমরা জেনেছি, কিছু অসাধু চাষি গুড়ে চিনি মিশিয়ে বাজারজাত করছে।”

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পুঠিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লিয়াকত সালমান বলেন, “স্যানিটারি ইন্সপেক্টরকে খোঁজ নিতে বলা হয়েছে। আমি এখানে নতুন আসছি। এমন অভিযোগের প্রমাণ মিললে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

স্থানীয়রা বলছেন, বাজারে নিয়মিত মনিটরিং, মোবাইল কোর্ট পরিচালনা, ভেজালকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তি। এসব কার্যক্রম জোরদার না হলে খাঁটি গুড় উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

গাছিদের আশা, শীত বাড়ার সাথে সাথে সচেতন ক্রেতারা খাঁটি গুড় চিনতে শিখবেন, ন্যায্য মূল্য দেবেন এবং ঐতিহ্যবাহী এই শিল্প আবার টিকে থাকবে।