বেনিনে সেনা অভ্যুত্থান প্রতিহত: ১৪ গ্রেপ্তার, রাষ্ট্রপতি টালন নিরাপদ

বেনিনে অভ্যুত্থানের চেষ্টা প্রতিহত: ১৪ সেনা গ্রেপ্তার, রাষ্ট্রপতি টালন নিরাপদ; পশ্চিম আফ্রিকায় অস্থিরতার ছায়া

বিশ্ব ডেস্ক: বেনিনের রাষ্ট্রপতি প্যাট্রিস টালনের বিরুদ্ধে সেনাদের অভ্যুত্থানের চেষ্টা রবিবার (৭ ডিসেম্বর) ভোরে শুরু হলেও তা সফলভাবে প্রতিহত করা হয়েছে। সরকারি সূত্র জানিয়েছে, ১৪ জন সেনা গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যার মধ্যে ৭ জন বুর্কিনা ফাসোর নাগরিক।

ইকোয়াস (ECOWAS)-এর স্ট্যান্ডবাই ফোর্স সাহায্যের জন্য মোতায়েন করা হয়েছে, যার মধ্যে নাইজেরিয়ার যুদ্ধবিমানও অংশ নিয়েছে। রাষ্ট্রপতি টালন লাইভ টিভি ব্রিফিংয়ে বলেন, “পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে, বিদ্রোহীদের এই বিশ্বাসঘাতকতা অশোধ্য থাকবে না।” এই ঘটনা পশ্চিম আফ্রিকায় অস্থিরতা বাড়ানোর আশঙ্কা জাগিয়েছে, যেখানে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বুর্কিনা ফাসো, মালি ও নাইজারে সফল অভ্যুত্থান হয়েছে।

ঘটনাটি ৭ ডিসেম্বর ভোর ৫টায় লেফটেন্যান্ট কর্নেল পাস্কাল টিগ্রি নেতৃত্বে একদল বিদ্রোহী সেনা রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন স্টেশন দখল করে। তারা ‘মিলিটারি কমিটি ফর রিফাউন্ডেশন’ (CMR) গঠন করে টালনকে ক্ষমতাচ্যুত ঘোষণা এবং সংবিধান স্থগিত ঘোষণা করে। তাদের অভিযোগ ছিল উত্তরাঞ্চলের নিরাপত্তা ব্যর্থতা এবং সেনাদের পরিবারের অবহেলা। সকাল ৮:৫৪ নাগাদ অভ্যন্তরীণ মন্ত্রী আলাসান সেইদু ফেসবুকে ভিডিও পোস্ট করে বলেন, “ছোট দলের মাটিনি প্রতিহত হয়েছে।” কোটোনুতে গানশট শোনা গেছে, তবে সৈন্যরা দ্রুত প্যাট্রোল চালায়।

দুপুর ১২:৩০ নাগাদ সরকারি স্পোকসম্যান উইলফ্রিড লেআন্ড্রে হুংগবেজি জানিয়ে দেন, ১৪ জন গ্রেপ্তার করা হয়েছে। নাইজেরিয়ার তিনটি যুদ্ধবিমান বিদ্রোহীদের টেলিভিশন স্টেশন ও ক্যাম্প থেকে দূরে সরিয়েছে। সন্ধ্যা ৬:৪২ নাগাদ রাষ্ট্রপতি টালন লাইভ ব্রিফিংয়ে বলেন, “সরকার ও সেনাবাহিনী অভ্যুত্থান প্রতিহত করেছে। শিকার ও বন্দীদের জন্য আমার চিন্তা আছে। বিদ্রোহীরা পলাতক, তাদের শাস্তি হবে।” রাত ১১:১২ নাগাদ ইকোয়াস স্ট্যান্ডবাই ফোর্স মোতায়েন করা হয়, যা নাইজেরিয়া, সিয়েরা লিওন, আইভরি কোস্ট এবং গানা থেকে আসে। নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট বোলা টিনুবু সেনাদের প্রশংসা করেন।

দুই পক্ষের বক্তব্যে দেখা যায়, রাষ্ট্রপতি টালন বলেন, “আমাদের দ্রুত মোবিলাইজেশন এই অ্যাডভেঞ্চারারদের প্রতিহত করেছে। এই বিশ্বাসঘাতকতা অশোধ্য।” অভ্যন্তরীণ মন্ত্রী আলাসান সেইদু বলেন, “ছোট দলের মাটিনি, সেনাবাহিনী প্রজাতন্ত্রের প্রতি অনুগত।”

অপরপক্ষে, লেফটেন্যান্ট কর্নেল পাস্কাল টিগ্রি দাবি করেছেন, “উত্তর বেনিনের নিরাপত্তা ব্যর্থতা এবং সেনাদের পরিবারের অবহেলা টালনের নীতির ফল। আমরা নতুন যুগের আশা দেব—ভ্রাতৃত্ব, ন্যায় ও কাজ।” টিগ্রি এখনো পলাতক।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়ায় ইকোয়াস অভ্যুত্থানকে “অসাংবিধানিক” হিসেবে নিন্দা জানিয়েছে এবং স্ট্যান্ডবাই ফোর্স মোতায়েন করেছে। আফ্রিকান ইউনিয়নও টালনের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে। ফ্রান্স নাগরিকদের বাড়িতে থাকার আহ্বান জানিয়েছে এবং দূতাবাস অভ্যুত্থানের নিন্দা করেছে।

যুক্তরাষ্ট্র নাগরিকদের সতর্ক করেছে এবং জানিয়েছে প্রেসিডেন্ট টালন নিরাপদে আছেন। নাইজেরিয়া বিমান হামলায় সাহায্য করেছে। অন্যদিকে, রাশিয়ান-সমর্থিত সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টগুলো অভ্যুত্থানকে সমর্থন করেছে, যা সাহেল অঞ্চলের জিহাদি হুমকির ইঙ্গিত দিচ্ছে।

হতাহত সংখ্যা এখনও নিশ্চিত নয়। রাষ্ট্রপতি টালন “শিকার ও বন্দী” উল্লেখ করেছেন, কিন্তু রিসোর্টিভ যুদ্ধ বা বড় সংঘর্ষ হয়নি। কোটোনুতে সৈন্য প্যাট্রোল চলছে, সীমান্ত সাময়িকভাবে বন্ধ হলেও এখন খোলা। শহর শান্তিপূর্ণ থাকলেও পর্যটন ও বাণিজ্যে প্রভাব পড়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বুর্কিনা ফাসোর জঙ্গিদের জড়িত থাকার কারণে এটি সাহেল অঞ্চলের জিহাদি হুমকির সঙ্গে সম্পর্কিত হতে পারে।

বেনিনে শেষ সফল অভ্যুত্থান ১৯৭২ সালে হয়েছিল। রাষ্ট্রপতি টালন ২০১৬ সাল থেকে ক্ষমতায়, কিন্তু বিরোধীদের দমনের অভিযোগ রয়েছে। ইকোয়াসের হস্তক্ষেপ ডেমোক্র্যাসি রক্ষায় সফল হলেও, দীর্ঘমেয়াদী স্থিতিশীলতার জন্য কূটনৈতিক সহায়তা এবং সতর্ক নজরদারি প্রয়োজন। পরিস্থিতি বর্তমানে স্থিতিশীল, তবে তদন্ত চলমান।