বাংলাদেশ নৌবাহিনী: আধুনিকীকরণের নতুন অধ্যায়

বাংলাদেশ নৌবাহিনীর আধুনিকীকরণ: স্থানীয় মিসাইল নৌকা থেকে ব্রিটিশ জরিপ জাহাজ, নতুন যুদ্ধক্ষমতা যোগ হচ্ছে।
টুইট প্রতিবেদক: বাংলাদেশ নৌবাহিনী (বিএন) তার ‘ফোর্সেস গোল ২০৩০’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে দ্রুতগতিতে আধুনিকীকরণ করছে। নৌপ্রধান অ্যাডমিরাল এম নাজমুল হাসানের নেতৃত্বে সাম্প্রতিক পরিকল্পনায় স্থানীয়ভাবে নির্মিত দুটি মিসাইল সজ্জিত লার্জ প্যাট্রোল ক্রাফট (এলপিসি), ব্রিটেনের এক্স-রয়্যাল নেভির জরিপ জাহাজ এইচএমএস এন্টারপ্রাইজ। যুক্তরাষ্ট্র থেকেও চারটি হাই-স্পিড ইন্টারসেপ্টর বোট এবং জাপান থেকে ছয়টি রেসকিউ বোট নৌবহরে যোগ হবে বলে ঘোষণা করা হয়েছে।
এই সব সংযোজন নৌবাহিনীর তিনমাত্রিক ক্ষমতা—সারফেস, সাবমেরিন ও এভিয়েশন—বৃদ্ধি করবে এবং বঙ্গোপসাগরে নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।
ডিফেন্স টেকনোলজি অব বাংলাদেশ (DTB)–এর অফিসিয়াল এক্স অ্যাকাউন্ট @DefenseDtb–এর পোস্টে নৌপ্রধানের পরিকল্পনার বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, নতুন এই অস্ত্র-সজ্জা নৌবাহিনীর মিসাইল আঘাত ক্ষমতা, দ্রুত প্রতিক্রিয়া এবং উদ্ধার অভিযানকে শক্তিশালী করবে। বর্তমানে বিএন–এর ৬৬টি সক্রিয় জাহাজ রয়েছে, যার সঙ্গে এই নতুন যোগাবলী ‘ব্লু ওয়াটার’ অপারেশনকে আরও কার্যকর করবে।
নৌপ্রধানের পরিকল্পনায় দুটি স্থানীয়ভাবে নির্মিত মিসাইল সজ্জিত লার্জ প্যাট্রোল ক্রাফট (এলপিসি) উল্লেখযোগ্য। চট্টগ্রাম ড্রাই ডক লিমিটেড (সিডিডিএল)-এর অধীনে নির্মাণাধীন এই জাহাজগুলো ২,০০০ টনের ওজনের এবং সি-৭০৪ ও ওটোম্যাট এমকে-২ মিসাইল সজ্জিত।
এগুলো দুর্জয়-ক্লাসের অনুরূপ, যা চীনে নির্মিত হয়েছিল এবং ২০১৩ সাল থেকে সক্রিয়। স্থানীয় নির্মাণের মাধ্যমে বাংলাদেশ নৌবাহিনী তার শিল্প সক্ষমতা বাড়াবে এবং আমদানি-নির্ভরতা কমাবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই জাহাজগুলো উপকূলীয় প্যাট্রোল এবং অ্যান্টি-শিপ অপারেশনে কার্যকর হবে।
ব্রিটেনের এক্স-রয়্যাল নেভির হাইড্রোগ্রাফিক সার্ভে জাহাজ এইচএমএস এন্টারপ্রাইজ ২০২৬ সালের মধ্যে বিএনের নৌবহরে যোগ দেবে। রোবাক-ক্লাসের এই জাহাজটির ওজন ৩,৭৪০ টন এবং মাল্টিবিম ইকো সাউন্ডারসহ অত্যাধুনিক সোনার সিস্টেম সজ্জিত, যা সমুদ্রতল জরিপ এবং মাইন সাউন্ডিংয়ে ব্যবহার্য।
২০০৩ সালে কমিশন্ড হওয়া এই জাহাজটি ২০২২ সালে রিটায়ার্ড হয়েছিল। বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনুসের সঙ্গে সাম্প্রতিক ব্রিটিশ নৌসেনা কর্মকর্তাদের বৈঠকে চুক্তি আলোচনার বিষয় ছিল। এই জাহাজটি বঙ্গোপসাগরের খনিজ সম্পদ অনুসন্ধান এবং দুর্যোগ মোকাবিলায় সহায়ক হবে।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে চারটি হাই-স্পিড ইন্টারসেপ্টর বোট (HSIB) ইতিমধ্যেই ডেলিভারি প্রক্রিয়ায় রয়েছে। এগুলো ৪০-৫০ নট স্পিডের এবং অ্যান্টি-স্মাগলিং ও দ্রুত প্যাট্রোলের জন্য ডিজাইন করা। এটি মার্কিন-বাংলাদেশ সামরিক সহযোগিতার অংশ, যা ‘ফোর্সেস গোল ২০৩০’-এর অধীনে ইন্টারন্যাশনাল মিলিটারি এডুকেশন অ্যান্ড ট্রেনিং (IMET) প্রোগ্রামের মাধ্যমে সমর্থিত। এছাড়া, জাপান থেকে ছয়টি রেসকিউ বোট (RB) যোগ হবে, যা সার্চ অ্যান্ড রেসকিউ (SAR) অভিযানে ব্যবহৃত হবে।
জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (JICA) এর মাধ্যমে এই সহায়তা আসছে, যা বাংলাদেশের বন্যা ও ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। নৌপ্রধান গত মাসে বছরব্যাপী ডিপ-সি এক্সারসাইজে এই ধরনের বোটের সফল পরীক্ষা করেছেন, যাতে মিসাইল লঞ্চ এবং ড্রোন-সমর্থিত টার্গেটিং অন্তর্ভুক্ত ছিল।
বাংলাদেশ নৌবাহিনী ২০০৯ সাল থেকে ‘ফোর্সেস গোল ২০৩০’ কার্যক্রম শুরু করেছে। ২০০৮ সালের মায়ানমারের সঙ্গে সংঘাতের পর থেকে আধুনিকীকরণ অব্যাহত রয়েছে। বর্তমানে বিএনের সক্রিয় ফ্লিটে রয়েছে পাঁচটি গাইডেড-মিসাইল ফ্রিগেট, ছয়টি করভেট, দুটি সাবমেরিন (টাইপ ০৩৫জি মিং-ক্লাস) এবং বিভিন্ন প্যাট্রোল ক্রাফট।
চীন, দক্ষিণ কোরিয়া এবং ইউরোপ থেকে কেনা জাহাজের পাশাপাশি স্থানীয় নির্মাণ প্রকল্পগুলো নৌবাহিনীর সক্ষমতা বাড়াচ্ছে।
নৌপ্রধান বলেছেন, “এই আধুনিকীকরণ আমাদের নৌবাহিনীকে বঙ্গোপসাগরের নিরাপত্তা রক্ষায় সক্ষম করবে এবং দুর্যোগ মোকাবিলায় জনগণের পাশে থাকবে।” আসন্ন নির্বাচনের জন্য বিএন ৫,০০০ কর্মী এবং জাহাজ মোতায়েনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই উন্নয়ন ভারতের মহাসাগরীয় অঞ্চলে বাংলাদেশের ভূ-রাজনৈতিক অবস্থানকে শক্তিশালী করবে।







