ক্ষমতায় এলে দুর্নীতি নির্মূল করবে বিএনপি: তারেক রহমান

বিএনপির দেশ গড়ার পরিকল্পনায় দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণের প্রত্যাশা: তারেক রহমানের আহ্বান

টুইট প্রতিবেদক: বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট পার্টি (বিএনপি) ক্ষমতায় এলে দুর্নীতির লাগাম শক্তভাবে টেনে ধরবে এবং আইনশৃঙ্খলা স্থিতিশীল করবে বলে দাবি করেছেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তাঁর মতে, দুর্নীতি ও আইনশৃঙ্খলার অবনতি রোধ না করলে দেশের কোনো উন্নয়ন পরিকল্পনাই সফল হবে না—এ কাজ কেবল জাতীয়তাবাদী দল বিএনপিই করতে সক্ষম।

রোববার (৭ ডিসেম্বর) ঢাকার কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন অডিটরিয়ামে ‘বিএনপির দেশ গড়ার পরিকল্পনা’ শীর্ষক কর্মসূচিতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।

দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে বিএনপির আত্মবিশ্বাস

তারেক রহমান বলেন, “দুর্নীতি ও আইনশৃঙ্খলার লাগাম টেনে ধরতে হবে। এই দুইটি কাজ সফল না হলে নারী, কৃষি, স্বাস্থ্যখাত—কোনো পরিকল্পনাই বাস্তবায়িত হবে না। আর এই কাজ বাংলাদেশে কেউ করতে পারলে তা জাতীয়তাবাদী দলই পারবে।” তিনি দাবি করেন, বিএনপি অতীতেও এটি করেছে এবং ভবিষ্যতেও করতে পারবে।

তিনি বিএনপির ২০০১–২০০৬ শাসনামলের উদাহরণ তুলে ধরে বলেন, তখন আওয়ামী লীগের শাসনামলে দুর্নীতিগ্রস্ত অর্থনীতিকে ধাপে ধাপে পুনরুদ্ধার করা হয়েছিল। একটি আন্তর্জাতিক রিভিউতে বিএনপির আমলে দুর্নীতি কমানোর অগ্রগতির তথ্য তুলে ধরা হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

বিএনপির ৩১ দফা রাষ্ট্র সংস্কার পরিকল্পনায় দুর্নীতি দমনে কঠোর পদক্ষেপের কথা উল্লেখ রয়েছে—স্বচ্ছতা-জবাবদিহিতা নিশ্চিতে অর্থনৈতিক সংস্কার কমিশন গঠন, প্রশাসনকে মাফিয়া-প্রভাবমুক্ত করা, বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনা এবং দায়ীদের বিচারের আওতায় আনার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে। দলটি দাবি করে, গত ১৫ বছরে (আওয়ামী লীগের শাসনামলে) ২৪০ বিলিয়ন ডলার লুট হয়েছে এবং ২৯টি উন্নয়ন প্রকল্প থেকেই ৮ বিলিয়ন ডলারের অনিয়ম ঘটেছে।

৫ আগস্টের ঘটনা ও জাতীয় সরকার প্রসঙ্গ

তারেক রহমান বলেন, “৫ আগস্ট স্বৈরাচার সরকার পালিয়ে যায়। তখন মহাসচিব আমাকে জাতীয় সরকারের বিষয়ে জানান। আমি বলেছিলাম—আমরা জনগণের রায়কে শ্রদ্ধা করবো, জনগণের কাছেই ফিরবো। জাতীয় সরকারে আমরা যাব না।”

২০২৪ সালের জুলাই–আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পর শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে গেলে মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়, যাকে বিএনপি ‘জুলাই বিপ্লব’ হিসেবে উল্লেখ করে। তারেক রহমান বলেন, এরপরও দেশে অস্থিরতা ও দুর্নীতির চক্র সক্রিয়। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কিছু কর্মকর্তা “পুরনো দুর্নীতির পথে ফিরে গেছে”—যা রোধ করার আহ্বান জানান তিনি।

গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও ষড়যন্ত্র প্রতিরোধ

তারেক রহমান বলেন, “দেশ নিয়ে নানারকম ষড়যন্ত্র চলছে। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ছাড়া সেই ষড়যন্ত্র ঠেকানো সম্ভব নয়। জনগণের মতামত প্রতিষ্ঠিত হলে সব ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হবে।”

তিনি ১৯৭১-এর উদাহরণ টেনে বলেন, দেশের উন্নয়ন ও পুনর্গঠনে জাতীয় ঐক্য জরুরি। পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকে সমালোচনা করে তিনি বলেন, তারা আওয়ামী লীগের মতো বিএনপির বিরুদ্ধে প্রোপাগান্ডা ছড়াচ্ছে।

তারেক রহমান বলেন, তাকে “দুর্নীতির প্রতীক” হিসেবে তুলে ধরা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তিনি ২০০৭ সাল থেকে লন্ডনে নির্বাসনে আছেন এবং ২০২৫ সালে বেশ কিছু মামলায় খালাস পেয়েছেন।

২০২৬ সালের নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি মাঠে সক্রিয়, দলের সাংগঠনিক কাঠামো পুনর্গঠন করছে এবং স্বচ্ছতা—জবাবদিহিতাকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। তারেক রহমানের দেশে ফেরার সম্ভাবনা নিয়েও দলে আলোচনা চলছে।