সরকারের ইচ্ছানুযায়ী নির্বাচন নিয়ন্ত্রিত ছিল : জি এম কাদের

নিজস্ব প্রতিবেদক : জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলেছেন, ৭ জানুয়ারি ‘সঠিক’ নির্বাচন হয়নি। এটি সরকারের ইচ্ছানুযায়ী একটি নিয়ন্ত্রিত নির্বাচন ছিল। এই সরকারকে কেউ বিশ্বাস করবে না, সরকারের গ্রহণযোগ্যতা যেটা ছিল, সেটাও থাকবে না।

সোমবার দুপুর ১২টায় রংপুর নগরীর স্কাই ভিউ ভবনে নির্বাচন পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “সরকারের নিয়ন্ত্রণে নির্বাচন হয়েছে। সরকার যেখানে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে চেয়েছে, সেখানে সুষ্ঠু করেছে।

তিনি বলেন, যেখানে তাদের লোকজনকে জেতাতে চেয়েছে, সেখানে তারা আমাদের লোকজনকে ভয়ভীতি দেখিয়ে ও জোর করে সিল মেরে হারিয়ে দিয়েছে। সার্বিকভাবে নির্বাচন ভালো হয়নি। আমাদের বিশ্বাস এই নির্বাচন গ্রহণযোগ্যতা পাবে না।

জি এম কাদের বলেন, “আমরা নির্বাচনের দিন অসহায় ছিলাম। সকাল থেকেই বিভিন্ন আসনে সমস্যা নিয়ে কথা বলেছি নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে। কিন্তু সমাধানের কথা বললেও সমাধান হয়নি। প্রিজাইডিং অফিসারসহ প্রশাসন তাদের পক্ষে কাজ করেছে। ঢাকা-১ আসনে জোর করে সিল মেরে সালমা ইসলামকে হারিয়ে দিয়েছে।”

তিনি আরও বলেন, “কুমিল্লা-১, জামালপুর-৩, নরসিংদী-২, কক্সবাজার-৪, লালমনিরহাট-৩, গাইবান্ধা-৩, নারায়ণগঞ্জ-১ এবং রংপুর-৪ ও ৬ আসনে আমাদের লোকদের মেরে জোর করে সিল দিয়েছে। আমরা অসহায় হয়ে গেছি। এসব আসনে আমরা প্রশাসনের কিংবা নির্বাচন কমিশনের কোনো সহযোগিতা পাইনি। প্রশাসন নিরপেক্ষ থাকলে আমরা এসব আসনে জয়ী হয়ে আসতাম।”

জোট হয়ে নির্বাচনের বিষয়ে তিনি বলেন, “আগেই বলেছি আমরা জোটগতভাবে নির্বাচনে অংশ নেইনি। সরকার তাদের মিডিয়া দিয়ে জোটের কথা বলে বিভ্রান্ত ছড়িয়েছে। সরকার সমঝোতার কথা বলে ২৬ আসনে নৌকার প্রার্থী প্রত্যাহার করে নিয়েছে। তবে সেই সব আসনে শক্তিশালী আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী দিয়ে, তাদের পক্ষে কাজ করেছে। আমরা এজন্যই বলেছি, আমরা কোনো জোটে বা সমঝোতায় নির্বাচনে অংশ নেইনি।”

নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করবেন কীনা, এ প্রশ্নে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান বলেন, “আমরা নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করছি না। ফলাফল প্রত্যাখ্যান করার মতো কোনো কারণ আমাদের সামনে নেই। তারপরও দলের এমপিদের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এখন পর্যন্ত আমরা সংসদে যাব না এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।”

দল হিসেবে জাতীয় পার্টির অবস্থান এখন কী সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “জাতীয় পার্টি যেখানে ছিল সেখানেই আছে। আমাদের বিরুদ্ধে সবসময় ষড়যন্ত্র হয়, আমরা সেই ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে এগিয়ে যাব।”

নির্বাচনে অংশ নেওয়া ভুল ছিল কীনা, জানতে চাইলে তিনি বলেন, “নির্বাচনে অংশ নেওয়া ভুল, না সঠিক ছিল এখনই বলা যাবে না। তবে সময়ই বলে দেবে। সংসদে যাওয়ার ব্যাপারে আমরা নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেব। তবে ভোট প্রত্যাখ্যানের কিছু নাই। যারা জয়ী হয়েছি, আমরা ভোটের মাধ্যমে জয়ী হয়েছি।”

জাতীয় পার্টির তৃণমূলের নেতাকর্মীদের নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার বিষয়ে সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, “এটি সিদ্ধান্তহীনতা নয়, বরং এটি সঠিক সিদ্ধান্ত। তৃণমূলের নেতাকর্মীরা তাদের মতামতে আমাকে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে দলের স্বার্থে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য বলেছিলেন। নির্বাচন বর্জন করার মতো কোনো সিদ্ধান্ত ছিল না। দলকে রক্ষা করাসহ এই ঘোলাটে পরিস্থিতিতে দলের ভালোর জন্য আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”

এ সময় জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান, রংপুর মহানগরের সভাপতি ও সিটি মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা, সাধারণ সম্পাদক এসএম ইয়াসীর, জেলা কমিটির সদস্য সচিব হাজী আব্দুর রাজ্জাক, চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা ও কারমাইকেল কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি আলাউদ্দিন মিয়াসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।

এরপরে জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান মরহুম হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের কবর জিয়ারত করতে যান জি এম কাদের।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রংপুর-৩ (সদর ও সিটি কর্পোরেশন) আসনে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের (লাঙ্গল)। আগে এ আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন তার ভাতিজা এরশাদপুত্র রাহগীর আলমাহি সাদ।

জাতীয় পার্টি এবারের নির্বাচনে ১১টি আসনে জয় পেয়েছে। বর্তমান সংসদে তাদের নির্বাচিত সংসদ সদস্য রয়েছেন ২৩ জন। এর ফলে জাতীয় পার্টির আসন সংখ্যা কমে অর্ধেকের নিচে নামল। ওদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জয়ী হয়েছেন ৬২ জন। তাঁদের বেশির ভাগই আওয়ামী লীগের নেতা।