খালেদা জিয়ার ফ্লাইং আইসিইউ প্রস্তুত: কাতারের রাজকীয় এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে যাচ্ছেন লন্ডন

খালেদা জিয়াকে লন্ডনে নেওয়ার প্রস্তুতি: জোবাইদা রহমান ঢাকায় পৌঁছানোর পর যাত্রা শুরু হতে পারে।

টুইট প্রতিবেদক: রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে সংকটাপন্ন অবস্থায় চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডনে নেওয়ার প্রস্তুতি ত্বরান্বিত হয়েছে। দলের উচ্চপর্যায়ের সূত্র জানিয়েছে, কাতারের পাঠানো বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে তাঁকে লন্ডন পাঠানোর লজিস্টিকসমূহ প্রায় সম্পন্ন।

চিকিৎসকদের চূড়ান্ত অনুমোদন পাওয়ার সাথে সাথেই যাত্রা শুরু হতে পারে।

দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্ত্রী ও চিকিৎসক ড. জোবাইদা রহমান লন্ডন থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন। তিনি পৌঁছে খালেদা জিয়ার সার্বিক স্বাস্থ্য পর্যালোচনা করবেন এবং অবস্থা অনুকূল থাকলে সঙ্গে লন্ডন যাবেন বলে বিএনপির সূত্র জানিয়েছে।

বিবিসি বাংলার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জোবাইদা রহমান খালেদা জিয়ার মেডিকেল বোর্ডের সদস্য হিসেবে লন্ডন থেকে নিয়মিত যোগাযোগ করছেন এবং চিকিৎসা পরামর্শ দিচ্ছেন।

কাতারের এয়ার অ্যাম্বুলেন্স: যাত্রার সময়সূচি

কাতার সরকার বিএনপির অনুরোধে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স প্রদান করতে প্রস্তুত ছিলেন। এমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির বিশেষ উদ্যোগে এই ‘রয়্যাল ফ্লিট’ বিমানটি ঢাকায় অবতরণ করেছে। চিকিৎসকদের সম্মতি পাওয়ার সাথে সাথেই এটি যাত্রা শুরু করবে।

সূত্র জানিয়েছে, শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) দুপুরেই এয়ার অ্যাম্বুলেন্স রওনা হতে পারে। খালেদা জিয়ার সঙ্গে ব্যক্তিগত চিকিৎসকসহ মোট ১৪ জন যাবেন, যার মধ্যে কাতারের ৪ জন চিকিৎসক এবং প্যারামেডিকসহ দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞরা অন্তর্ভুক্ত।

এই এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি একটি ‘ফ্লায়িং আইসিইউ’ – এতে ভেন্টিলেটর, ডিফিব্রিলেটর, ইনফিউশন পাম্প এবং কার্ডিয়াক মনিটরসহ উন্নত চিকিৎসা সুবিধা রয়েছে, যা দীর্ঘ দূরত্বের মেডিকেল ইভ্যাকুয়েশনের জন্য ডিজাইন করা।

স্বাস্থ্য অবস্থা: স্থিতিশীল, কিন্তু সতর্কতা অব্যাহত

বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থায় তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি। চিকিৎসকরা অবস্থাকে ‘স্থিতিশীল’ বলছেন, কিন্তু ফ্লাইংয়ের জন্য আরও স্থিতিশীলতা প্রয়োজন। তাঁর চিকিৎসায় যুক্তরাজ্যের বিশেষজ্ঞ ড. রিচার্ড বিলসহ দেশি-বিদেশি চিকিৎসকদের সমন্বয়ে গঠিত মেডিকেল বোর্ড কাজ করছে। বুধবার যুক্তরাজ্য এবং চীন থেকে বিশেষজ্ঞদের নতুন দুটি দল যুক্ত হয়েছে।

গত ২৩ নভেম্বর ফুসফুস ও হৃদযন্ত্রের গুরুতর সংক্রমণ নিয়ে তাঁকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরবর্তীকালে কিডনি জটিলতা, হৃদরোগ ও নিউমোনিয়ায় অবস্থা অবনতি হয় এবং ১ ডিসেম্বর ভেন্টিলেশনে নেওয়া হয়। বহু বছর ধরে তিনি আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, ফুসফুস এবং লিভার সিরোসিসসহ নানা রোগে ভুগছেন। গত বছরের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পর মুক্তি পেয়ে জানুয়ারিতে লন্ডনে যান এবং ১১৭ দিন পর মে মাসে দেশে ফিরেন। দেশে ফেরার পরও নিয়মিত হাসপাতালে যাওয়া হচ্ছিল।

নিরাপত্তা ও লজিস্টিকস: ভিআইপি সুবিধা

খালেদা জিয়াকে ‘অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি’ (ভিভিআইপি) ঘোষণার পর হাসপাতাল এলাকায় এসএসএফ ও পিজিআর সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় জানিয়েছে, এয়ার ট্রান্সপোর্টের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৪টার মধ্যে হাসপাতালের নিকটস্থ উন্মুক্ত মাঠে সেনাবাহিনী ও বিমানবাহিনীর হেলিকপ্টারের পরীক্ষামূলক অবতরণ-উড্ডয়ন ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। এ বিষয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য না ছড়ানোর অনুরোধ করা হয়েছে।

সামাজিক মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া

এক্স (পূর্বের টুইটার)-এ এই খবর ট্রেন্ডিং। তারেক রহমানের পোস্টে বিশ্বের নেতা, কূটনীতিক এবং দেশবাসীর সমর্থনের জন্য ধন্যবাদ জানানো হয়েছে। এক পোস্টে বলা হয়েছে, “তারেক রহমান লন্ডনে অপেক্ষা করুন, খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য উন্নত হলে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে নিয়ে যাওয়া যাবে।”

এই উদ্যোগ বিএনপির জন্য আশার আলো এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার সংকেত। চিকিৎসকদের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় সবাই।

সুত্র বলছেন, আজ সন্ধ্যার পর বা শুক্রবার এভারকেয়ার হাসপাতাল থেকে যে কোনো মুহূর্তে কাতারের রয়্যাল এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে লন্ডনের উদ্দেশে রওনা হবেন দেশনেত্রী।