পাহাড়ি শিশুদের স্বপ্ন পূরণ করলো বিজিবি: দুর্গম পাহাড়ে বানালো স্কুল!

থানচির দুর্গম বুলুপাড়ায় বিজিবির উদ্যোগে নতুন প্রাথমিক বিদ্যালয় উদ্বোধন।
যেখানে রাস্তা নেই, বিদ্যুৎ নেই, সরকারি স্কুলের নামও শোনেনি কেউ… সেখানে বিজিবি গড়ে তুললো একটা পুরোদস্তুর প্রাথমিক বিদ্যালয়!
অসীম রায় (অশ্বিনী), বান্দরবান: বান্দরবানের থানচি উপজেলার রেমাক্রি ইউনিয়নের অত্যন্ত দুর্গম বুলুপাড়া সীমান্তে প্রান্তিক পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর শিক্ষাবঞ্চিত শিশুদের জন্য একটি নতুন প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।
বুধবার (৩ ডিসেম্বর) আলীকদম ব্যাটালিয়ন (৫৭ বিজিবি) কর্তৃক নির্মিত এই বিদ্যালয়ের শুভ উদ্বোধন করেন ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আব্দুল্লাহ আল মেহেদী পিএসসি।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অধিনায়ক নিজে প্রায় ৫০ জন শিক্ষার্থীর হাতে বই, খাতা, কলম, পেনসিল, রাবারসহ শিক্ষা উপকরণ এবং চকলেট-বিস্কুট তুলে দেন। তিনি বলেন, “দক্ষিণ-পূর্ব সীমান্তের দুর্গম পার্বত্য এলাকায় সীমান্ত সুরক্ষার পাশাপাশি নৃ-গোষ্ঠী ও পাহাড়ি-বাঙালি জনগোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে আমরা নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছি। ‘অপারেশন উত্তরণ’ কর্মসূচির আওতায় চিকিৎসাসেবা, খাদ্য ও পোশাক বিতরণ, শীতবস্ত্র প্রদান, অগ্নিকাণ্ড ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের ত্রাণসহ বিভিন্ন মানবিক কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। এসব উদ্যোগ পার্বত্য অঞ্চলে শান্তি ও সৌহার্দ্য বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।”
তিনি আরও উল্লেখ করেন, “সীমান্তবর্তী প্রান্তিক এলাকার শিশুরা যাতে শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত না হয়, সেই লক্ষ্যেই বুলুপাড়ায় এই বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। ভবিষ্যতেও বিজিবির এ ধরনের মানবিক ও সামাজিক কর্মকাণ্ড অব্যাহত থাকবে।”
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বুলুপাড়ার তিনটি পাড়ার প্রায় ৫০টি পরিবারের ৭০-৮০ জন শিক্ষাবঞ্চিত শিশু এই বিদ্যালয়ের মাধ্যমে প্রথমবারের মতো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার আওতায় আসবে। দুর্গম ভূখণ্ডের কারণে দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষা ব্যবস্থার বাইরে থাকা এসব শিশুর জন্য বিদ্যালয়টি নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার এই উদ্যোগকে ‘মহতী ও সময়োপযোগী’ আখ্যা দিয়ে স্থানীয় জনগোষ্ঠী, জনপ্রতিনিধি, অভিভাবক, কারবারি ও হেডম্যানরা বিজিবির প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। তাঁদের মতে, দুর্গম পাহাড়ে বিজিবি শুধু নিরাপত্তা বাহিনী নয়, বরং উন্নয়ন ও মানবিক সহায়তার এক নির্ভরযোগ্য সঙ্গী হয়ে উঠেছে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিজিবির বিভিন্ন পদমর্যাদার সদস্য, স্থানীয় কারবারি, অভিভাবক এবং এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।
এ ধরনের উদ্যোগের মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামের দুর্গম জনপদে শিক্ষার প্রসারের পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় সেবা ও জনকেন্দ্রিক উন্নয়নের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপিত হলো বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।






