খালেদা জিয়ার নিরাপত্তায় এসএসএফ-এর হেলিকপ্টার ট্রায়াল বৃহস্পতিবার: সরকারের স্পষ্ট বার্তা

এভারকেয়ার হাসপাতালের নিকট সেনা-বিমানবাহিনীর হেলিকপ্টার উড্ডয়ন: নিরাপত্তা প্রটোকলের অংশ, বিভ্রান্তি এড়ানোর আহ্বান।

খালেদা জিয়ার VVIP নিরাপত্তায় SSF-এর উদ্যোগে পরীক্ষামূলক অবতরণ-উড্ডয়ন, রুটিন কার্যক্রম নিশ্চিত।

টুইট ডেস্ক: রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালের নিকটবর্তী দুটি উন্মুক্ত মাঠে বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) দুপুর ১২টা থেকে ২টার মধ্যে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও বিমানবাহিনীর হেলিকপ্টারের পরীক্ষামূলক অবতরণ ও উড্ডয়ন পরিচালনা করা হবে। এটি বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী (SSF)-এর নিরাপত্তা প্রটোকলের অংশ।

সরকার জনগণকে এ বিষয়ে কোনো ধরনের অপপ্রচার বা বিভ্রান্তি ছড়ানো থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে বুধবার (৩ ডিসেম্বর) দুপুরে জারি করা একটি বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এই কার্যক্রমটি সম্পূর্ণভাবে SSF-এর নিরাপত্তা ব্যবস্থার অংশ। এভারকেয়ার হাসপাতালের পাশে অবস্থিত দুটি খোলা মাঠে সেনাবাহিনী ও বিমানবাহিনীর হেলিকপ্টারগুলো পরীক্ষামূলক অবতরণ ও উড্ডয়ন করবে। এটি কোনো জরুরি বা অস্বাভাবিক ঘটনার সূচনা নয়, বরং VVIP নিরাপত্তার জন্য নিয়মিত অনুশীলন।

বিজ্ঞপ্তিতে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে: “এ বিষয়ে কোন ধরনের অপপ্রচার বা বিভ্রান্তি থেকে বিরত থাকার জন্য অনুরোধ করা হলো।” এই আহ্বানের পটভূমি হলো, সাম্প্রতিক সময়ে এভারকেয়ার হাসপাতালকে ঘিরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন গুজব ছড়িয়েছে, যা জনমনে অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে।

খালেদা জিয়ার চিকিৎসা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা

এই কার্যক্রমের প্রেক্ষাপটে রয়েছে বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসা। গত ২৩ নভেম্বর রাতে শ্বাসকষ্টের কারণে তাঁকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ২৭ নভেম্বর তাঁর অবস্থা আরও খারাপ হওয়ায় তাঁকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (CCU) নেওয়া হয়। বর্তমানে তিনি হার্ট ডিজিজ, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিস, লিভার সিরোসিস, কিডনি জটিলতা সহ একাধিক রোগে ভুগছেন।

সরকারের উদ্যোগে খালেদা জিয়াকে ‘ভেরি ভেরি ইম্পর্ট্যান্ট পার্সন’ (VVIP) ঘোষণা করা হয়েছে। স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স (SSF) আইন, ২০২১-এর ধারা ২(ক)-এর অধীনে এই ঘোষণা করা হয়েছে, যা তাৎক্ষণিক কার্যকর। ২ ডিসেম্বর দুপুর ২:২০ মিনিটে SSF-এর কার্যকরীরা হাসপাতালে পৌঁছে VVIP নিরাপত্তা শুরু করে। এর পাশাপাশি প্রেসিডেন্সিয়াল গার্ড রেজিমেন্ট (PGR), পুলিশ ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সদস্যরা মোতায়েন করা হয়েছে। হাসপাতালের চতুর্থ তলার একটি বিশেষ কেবিনে খালেদা জিয়া থাকছেন, এবং নিরাপত্তার জন্য আশপাশের কেবিনগুলো খালি রাখা হয়েছে।

২ ডিসেম্বর রাতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, নৌবাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল এম নাজমুল হাসান এবং বিমানবাহিনীর প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খান খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য জানতে হাসপাতালে গিয়েছিলেন। ইন্টার সার্ভিসেস পাবলিক রিলেশনস ডিরেক্টরেট (ISPR) নিশ্চিত করেছে।

আন্তর্জাতিক চিকিৎসা সহায়তা

খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিত্সক ডা. এজিএম জহিদ হোসেন জানিয়েছেন, স্থানীয় ও বিদেশী বিশেষজ্ঞদের মেডিকেল বোর্ড তাঁর চিকিৎসা পর্যবেক্ষণ করছে। ৩ ডিসেম্বর দুপুরে যুক্তরাজ্য থেকে একটি চার সদস্যের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দল ঢাকায় পৌঁছেছে। এদের নেতৃত্বে ড. রিচার্ড বুয়েল, যারা সরাসরি CCU-তে গিয়ে খালেদা জিয়ার অবস্থা পরীক্ষা করেছেন। এছাড়া চীন থেকে আরেকটি চিকিৎসক দলও আগত হবে বলে জানানো হয়েছে। ডা. জহিদ বলেছেন, “চিকিৎসায় সাড়া পাওয়া যাচ্ছে এবং এবার সুস্থতার সম্ভাবনা রয়েছে।”

রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও গুজবের ঝড়

খালেদা জিয়ার অসুস্থতার খবর ছড়াতে না ছড়াতে বিএনপি নেতা-কর্মীরা হাসপাতালের সামনে ভিড় করেছেন, যা আশপাশের ট্রাফিক জ্যামের কারণ হয়েছে। বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সমর্থকদের ভিড় এড়িয়ে চলার আহ্বান জানিয়েছেন। এ

দিকে, খালেদা জিয়ার পুত্র ও বিএনপির অ্যাকটিং চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডন থেকে ফিরছেন কি না, সে নিয়ে গুজব চলছে। গত শুক্রবার তারেকের ফেসবুক পেজ থেকে জানানো হয়েছে, “এমন গুরুতর মুহূর্তে মায়ের স্নেহ পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা যেকোনো ছেলের থেকে আলাদা নয়।”

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হেলিকপ্টার উড্ডয়ন নিয়ে ‘কোনো বড় ঘটনা ঘটতে চলেছে’—এমন গুজব ছড়িয়েছে। সরকার এগুলোকে অপপ্রচার বলে উল্লেখ করে জনগণকে সতর্ক করেছে।