পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ২৮ বছর: জেএসএস-এর আট দফা দাবি

পার্বত্যাঞ্চলের শান্তি ও উন্নয়নের আহ্বান
চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন না হওয়ায় হতাশা ও উদ্বেগ। ভূমি কমিশন ও আঞ্চলিক পরিষদের ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবি!

বান্দরবান প্রতি‌নি‌ধি: পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ২৮তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে বান্দরবানে নানা কর্মসূচির মধ্যে গণসমাবেশ, আলোচনা সভা এবং র‍্যালি অনুষ্ঠিত হয়েছে।

এই উপলক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস) চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নসহ তাদের আট দফা দাবি পুনর্ব্যক্ত করেছে।

প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উ উইন মং জলি, সহ-সাধারণ সম্পাদক, পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি। সভার সভাপতিত্ব করেন সুমন মারমা, সভাপতি, পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি, বান্দরবান জেলা কমিটি। অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক সেলিম রেজা নিউটন।

উ উইন মং জলি বক্তব্যে বলেন, “পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ২৮ বছর অতিক্রান্ত হলেও চুক্তি বাস্তবায়িত না হওয়ায় পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার কাঙ্ক্ষিত রাজনৈতিক ও শান্তিপূর্ণ সমাধান এখনো অর্জিত হয়নি। চুক্তি বিরোধী ষড়যন্ত্র প্রতিহত করে আমরা পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি ও সমৃদ্ধি নিশ্চিত করতে বৃহত্তর আন্দোলন জোরদার করার আহ্বান জানাই।”

তিনি আরও উল্লেখ করেন, পার্বত্যাঞ্চলের পরিস্থিতি দিন দিন সংঘাতপূর্ণ ও সহিংস হয়ে উঠছে। “১৯৯৭ সালে চুক্তি স্বাক্ষরের সময় পার্বত্যাঞ্চলে স্থায়ী শান্তি, উন্নয়ন এবং সম্প্রদায়গুলোর মধ্যে আস্থা পুনর্গঠন করার যে সুযোগ সৃষ্টি হয়েছিল, তা আজ দিন দিন ধুলিস্যাৎ হচ্ছে। পার্বত্যবাসী হতাশা ও অসন্তোষের মধ্যে এই বর্ষপূর্তি পালন করতে বাধ্য হচ্ছে।”

জেএসএস-এর সংবাদ সম্মেলনে আট দফা দাবি পুনর্ব্যক্ত করা হয়েছে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:

দ্রুত ভূমি কমিশনের বিধিমালা প্রণয়ন ও বিচারিক কার্যক্রম শুরু করা।

পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির আলোকে ১৯০০ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসনবিধি কার্যকর রাখা।

সাধারণ প্রশাসন, পুলিশ, ভূমি ও ভূমি ব্যবস্থাপনা, উপজাতীয় আইন ও সামাজিক বিচার সংক্রান্ত ক্ষমতা আঞ্চলিক পরিষদ ও তিন পার্বত্য জেলা পরিষদে হস্তান্তর করা।

শুধুমাত্র স্থায়ী বাসিন্দাদের নিয়ে ভোটার তালিকা প্রণয়ন এবং তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ ও আঞ্চলিক পরিষদের নির্বাচন আয়োজন।

প্রত্যাগত জেএসএস সদস্যদের যথাযথ পুনর্বাসন।

পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সমতলের আদিবাসীদের জাতিসত্তার সাংবিধানিক স্বীকৃতি।

চুক্তি বাস্তবায়নে সরকারের রোডম্যাপ বা কর্মপরিকল্পনা ঘোষণার আহ্বান।

অধ্যাপক সেলিম রেজা নিউটন বলেন, “চুক্তি বাস্তবায়ন না হলে পার্বত্যাঞ্চলের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের সম্ভাবনা হারাতে পারে। পার্বত্য চুক্তি শুধুমাত্র পাহাড়ের শান্তি নয়, এটি সমগ্র দেশের জন্য অনুসরণীয় রাজনৈতিক দৃষ্টান্ত হিসেবে বিবেচিত।”

গণসমাবেশ ও আলোচনা সভার মাধ্যমে পার্বত্য চুক্তি বিরোধী ও জুম্ম স্বার্থ পরিপন্থী কার্যক্রম প্রতিহত করে বৃহত্তর আন্দোলনে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়। পার্বত্য চুক্তির ২৮তম বর্ষপূর্তির এই উদযাপন প্রতিফলিত করেছে পার্বত্যবাসীর আশা, উদ্বেগ এবং দেশের নাগরিক সমাজের সহমর্মিতা।

পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাংলাদেশের ভৌগোলিক, সাংস্কৃতিক ও কৌশলগত দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দীর্ঘ সময় ধরে চলা সংঘাত ও সহিংসতার পর ১৯৯৭ সালে এই শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

তবে বাস্তবায়নের অপ্রতুলতা ও বিতর্ক পাহাড়ের বৈষম্য ও জটিলতা আরও বাড়িয়েছে, যার ফলে চুক্তির প্রাথমিক লক্ষ্য পূরণে ব্যর্থতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।