বান্দরবানে শান্তি চুক্তির ২৮তম বর্ষপূর্তি উদযাপন

পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের দাবিতে বান্দরবানে গণসমাবেশ। শান্তি-উন্নয়ন-সম্প্রীতির বার্তা পাহাড়ে।

অসীম রায় (অশ্বিনী), বান্দরবান: নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে পার্বত্য শান্তি চুক্তির ২৮তম বর্ষপূর্তি উদযাপিত হচ্ছে বান্দরবানে। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউটসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে আয়োজন করা হয়েছে স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচি, আলোচনা সভা এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক থানজামা লুসাই বলেন, প্রাকৃতিক ও নৈসর্গিক সৌন্দর্যে ভরপুর পার্বত্য চট্টগ্রাম ১২ ভাষাভাষি ও ১১ উপজাতীয় সম্প্রদায়ের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও বৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ এক অনন্য ভূখণ্ড। দীর্ঘ সংঘাতের অবসান ঘটাতে ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি’ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

তিনি আরও বলেন, চুক্তির বাস্তবায়নের ফলে এই অঞ্চলে উন্নয়ন ও সম্প্রীতির যে ধারা সূচিত হয়েছে, তা পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর জীবনমান বদলে দিয়েছে।

তিনি জানান, চুক্তি পরবর্তী সময়ে গঠিত পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়, আঞ্চলিক পরিষদ এবং পুনর্গঠিত জেলা পরিষদ পাহাড়ের মানুষের উন্নয়ন ও কল্যাণে নিরলসভাবে কাজ করছে। নৈসর্গিক সৌন্দর্য অক্ষুণ্ণ রেখে পর্যটন শিল্পের প্রসারে সরকার বিভিন্ন জনবান্ধব উদ্যোগ নিয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

এ সময় সেনাবাহিনীর বান্দরবান সদর জোনের কমান্ডার লে. কর্নেল মোহাম্মদ হুমায়ুন রশীদ বলেন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বনায়ন, কৃষি সম্প্রসারণ, মৎস্য ও পশুসম্পদ, সুপেয় পানি, কফি ও কাজুবাদাম চাষ, অবকাঠামো নির্মাণ এবং পর্যটন সুবিধা বৃদ্ধির মাধ্যমে পার্বত্য অঞ্চলে ব্যাপক উন্নয়ন চলমান রয়েছে। তিনি আরও জানান, উন্নয়ন সহযোগী দেশগুলোর আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় তিন পার্বত্য জেলায় সমন্বিত উন্নয়ন কার্যক্রম এগিয়ে যাচ্ছে।

উৎসবমুখর এ আয়োজনে সেনা রিজিয়নের জিএস-টু মেজর পারভেজ রহমান, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এসএম হাসান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জিনিয়া চাকমা, পার্বত্য জেলা পরিষদের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ নজরুল ইসলামসহ সরকারি বিভিন্ন দফতরের কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে রাজারমাঠ প্রাঙ্গণে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস) এবং বান্দরবান জেলা কমিটির উদ্যোগে পৃথক এক গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সংগঠনের জেলা কমিটির সভাপতি সুমন মারমার সভাপতিত্বে সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদক উ উইন মং জলি। বক্তারা অভিযোগ করেন, দীর্ঘ ২৮ বছর পরও শান্তি চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন হয়নি; ফলে আদিবাসী সমাজে হতাশা বাড়ছে। বক্তারা দ্রুত সময়ের মধ্যে চুক্তির সব ধারা বাস্তবায়নের দাবি জানান।

চুক্তির ২৮তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের উদ্যোগে পায়রা উড়িয়ে দিনের কর্মসূচির উদ্বোধন করা হয়। পরে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউটে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়, যেখানে বক্তারা শান্তি, সম্প্রীতি ও পারস্পরিক সহাবস্থানের আহ্বান জানান।