তুরস্কের বিমানিকা শক্তি: KIZILELMA-এর ঐতিহাসিক BVR সাফল্য

তুরস্কের আকাশশক্তি উত্থান: KIZILELMA–এর ঐতিহাসিক BVR সাফল্য বিশ্ব নিরাপত্তা কাঠামোয় বড় পরিবর্তনের সংকেত!

টুইট প্রতিবেদন: তুরস্কের প্রতিরক্ষা শিল্প বিশ্বের বিমানিকা ক্ষেত্রে এক নতুন যুগের সূচনা করেছে। ৩০ নভেম্বর ২০২৫-এ ব্ল্যাক সি-এর উপরে পরিচালিত এক ঐতিহাসিক পরীক্ষায়, বাইকার টেকনোলজিজের (Baykar) নির্মিত KIZILELMA নামক অস্ত্র-বহনকারী নির্বাহিত যুদ্ধবিমান (UCAV) প্রথমবারের মতো বিশ্বের প্রথম জেট-চালিত ড্রোন।

একটি উচ্চ-গতির জেট টার্গেট ড্রোনকে ৬০ কিলোমিটার দূরত্ব থেকে BVR (Beyond Visual Range) এয়ার-টু-এয়ার মিসাইল দিয়ে ধ্বংস করেছে।

এই সাফল্য তুরস্ককে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ইউরোপ এবং চীনের মতো ঐতিহ্যবাহী শক্তিগুলোর বিকল্প হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে, বিশেষ করে ড্রোন-কেন্দ্রিক এবং ভবিষ্যৎমুখী প্রযুক্তিতে। এই ঘটনা তুরস্কের বিস্তৃত অস্ত্র পোর্টফোলিওর অংশ, যা ২০২৫ সালে বিশ্বের ৬৫% ড্রোন রপ্তানি বাজার নিয়ন্ত্রণ করেছে এবং এখন ম্যানড ফাইটার মার্কেটেও প্রবেশ করেছে।

KIZILELMA-এর ঐতিহাসিক পরীক্ষা: বিশ্বের প্রথম UCAV BVR সাফল্য

সিনোপ প্রদেশের কাছে ব্ল্যাক সি-এর উপরে পরিচালিত এই পরীক্ষায় KIZILELMA তার Aselsan-নির্মিত MURAD-100A অ্যাকটিভ ইলেকট্রনিক্যালি স্ক্যানড অ্যারে (AESA) রাডার দিয়ে টার্গেটকে ৬৫ কিলোমিটার দূরত্ব থেকে লক করে। পরে TÜBİTAK SAGE-এর নির্মিত Gökdoğan রাডার-গাইডেড BVR মিসাইল (৬৫-১০০ কিমি রেঞ্জ) ছুড়ে দেওয়া হয়, যা টার্গেটকে ‘পিনপয়েন্ট অ্যাকিউরেসি’ দিয়ে ধ্বংস করে।

বাইকারের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “এটি বিশ্বের প্রথম নির্বাহিত যুদ্ধবিমান যা BVR এয়ার-টু-এয়ার ক্ষমতা প্রমাণ করেছে।” পরীক্ষায় মেরজিফোন এয়ার বেস থেকে ৫টি F-16 ফাইটার জেট যোগ দিয়ে ম্যানড-আনম্যান্ড টিমিং (MUM-T) কনসেপ্ট প্রদর্শন করে, যেখানে বাইকারের চেয়ারম্যান সেলচুক বাইরাক্তার এবং Aselsan-এর জেনারেল ম্যানেজার আহমেত আকিয়োল F-16-এর ককপিট থেকে পর্যবেক্ষণ করেন। একটি Bayraktar AKINCI UCAV ভিডিও রেকর্ড করে।

এই পরীক্ষা KIZILELMA-এর দ্রুত উন্নয়নের প্রমাণ – ২০২২ সালের প্রথম ফ্লাইট থেকে ২০২৫-এর নভেম্বরে লাইভ ফায়ার পর্যন্ত মাত্র তিন বছর। বাইকারের মতে, এটি লয়্যাল উইংম্যান ক্লাস প্ল্যাটফর্ম হিসেবে ভবিষ্যতের ফাইটার যেমন GCAP-এর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। ইতালির সাথে যৌথ উৎপাদন চলছে, যা ইউরোপীয় বাজারে তুরস্কের প্রবেশকে শক্তিশালী করবে।

তুরস্কের ড্রোন রাজত্ব: ৬৫% বিশ্বব্যাপী বাজার নিয়ন্ত্রণ

তুরস্কের ড্রোন রপ্তানি ২০২৫ সালে রেকর্ড স্তরে পৌঁছেছে – প্রথম ১০ মাসে প্রতিরক্ষা রপ্তানি ৩১% বেড়ে ৬.৭ বিলিয়ন ডলার হয়েছে, যার মধ্যে ড্রোনের অংশ সবচেয়ে বড়। বাইকারের মতে, তুরস্ক বিশ্বের UAV রপ্তানির ৬৫% বাজার নিয়ন্ত্রণ করে, যার ৯০% রাজস্ব আন্তর্জাতিক বিক্রয় থেকে আসে।

Bayraktar TB2 ৩৬টি দেশে এবং AKINCI ১৬টি দেশে রপ্তানি হয়েছে, যার মধ্যে NATO সদস্যরা (যেমন লিথুয়ানিয়া, পোল্যান্ড) এবং আফ্রিকা-মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো অন্তর্ভুক্ত।

এই সাফল্যের কারণ: কম দাম, যুদ্ধক্ষেত্রে প্রমাণিত কার্যকারিতা এবং ‘নো-স্ট্রিংস অ্যাটাচড’ নীতি। লিবিয়া, ইউক্রেন এবং আফ্রিকায় TB2-এর সাফল্য তুরস্ককে ‘ড্রোন ডিপ্লোম্যাসি’-র নেতা করেছে। ২০২৪ সালে মোট প্রতিরক্ষা রপ্তানি ৭.১ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে, এবং ২০২৫-এর শেষে ১০ বিলিয়নের লক্ষ্য।

ম্যানড ফাইটার মার্কেটে প্রবেশ: Hürjet এবং KAAN-এর সাফল্য

তুরস্ক শুধু ড্রোন নয়, ম্যানড ফাইটারেও প্রবেশ করেছে। Turkish Aerospace Industries (TAI)-এর Hürjet লাইট ফাইটার/অ্যাডভান্সড জেট ট্রেইনার ২০২৫ সালে স্পেনকে রপ্তানি হয়েছে – সেপ্টেম্বরে স্পেনের কাউন্সিল অফ মিনিস্টার্স ৪৫টি Hürjet কেনার অনুমোদন দেয়, যা ২০২৮ থেকে ডেলিভারি শুরু হবে। এটি স্পেনের পুরনো F-5 ফ্লিট প্রতিস্থাপন করবে। জুলাইয়ে Airbus-এর সাথে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, যাতে স্প্যানিশ সাবসিস্টেম ইন্টিগ্রেশন এবং যৌথ উৎপাদন অন্তর্ভুক্ত। Hürjet-এর মেয়ডেন ফ্লাইট ২০২৩ সালে হয়েছে, এবং এখন ১২০+ ফ্লাইট আওয়ার পূর্ণ করেছে।

এছাড়া, ৫ম প্রজন্মের স্টেলথ ফাইটার KAAN-এর ইন্দোনেশিয়ার সাথে অংশীদারিত্ব ২০২৫ সালের জুনে Indo Defence Expo-তে চুক্তিবদ্ধ হয় – ৪৮টি KAAN কেনার জন্য, মোট ১০ বিলিয়ন ডলারের চুক্তি। ইন্দোনেশিয়া প্রথম রপ্তানি গ্রাহক, যা ২০২৮ থেকে ডেলিভারি শুরু হবে এবং ২০৩৫-এর মধ্যে সম্পূর্ণ। এতে প্রযুক্তি হস্তান্তর এবং স্থানীয় উৎপাদন অন্তর্ভুক্ত, যা ইন্দোনেশিয়ার প্রতিরক্ষা শিল্পকে শক্তিশালী করবে। KAAN-এর প্রথম ফ্লাইট ২০২৪ সালে হয়েছে, এবং এটি F-16-এর মতো GE F110 ইঞ্জিন ব্যবহার করে।

তুরস্কের এয়ার-টু-এয়ার মিসাইল পোর্টফোলিও

এই মিসাইলগুলো GÖKTUĞ প্রোগ্রামের অংশ, যা ২০১৩ সাল থেকে চলে এবং F-16, Hürjet, KAAN এবং JF-17-এ ব্যবহারযোগ্য। অক্টোবর ২০২৫-এ F-16 থেকে Bozdoğan এবং Gökdoğan-এর লাইভ টেস্ট সফল হয়েছে, যা US AIM-9X এবং AMRAAM-এর উপর নির্ভরতা শেষ করেছে।

রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক স্বাধীনতা

তুরস্কের এই অগ্রগতি তার প্রতিরক্ষা রপ্তানিকে ২০২৫-এ ১০ বিলিয়ন ডলারের লক্ষ্যে নিয়ে যাবে, যা অর্থনীতিকে শক্তিশালী করবে এবং রাজনৈতিক ‘স্ট্রিংস’ থেকে মুক্তি দেবে। NATO-সদস্য স্পেন এবং ইন্দোনেশিয়ার মতো অংশীদাররা তুরস্ককে ইউরোপ-এশিয়ায় প্রভাবশালী করছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি ড্রোন যুদ্ধের নতুন যুগের সূচনা, যেখানে তুরস্ক ‘গেম-চেঞ্জার’।