দুদক অধ্যাদেশ অনুমোদন: ক্ষমতা বৃদ্ধি ও স্বচ্ছতা জোরদার

দুদক অধ্যাদেশ অনুমোদন: ক্ষমতা বৃদ্ধি ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে নতুন পদক্ষেপ
টুইট ডেস্ক: অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ চূড়ান্তভাবে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) অধ্যাদেশ অনুমোদন করেছে। নতুন অধ্যাদেশের মাধ্যমে দুদকের ক্ষমতা ও কার্যকারিতা বৃদ্ধি পাচ্ছে, যাতে কমিশন আরও কার্যকরভাবে দুর্নীতি মোকাবিলা করতে পারে।
এছাড়া, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে কমিশনের কর্মকর্তাদের নিজস্ব সম্পদের হিসাব দাখিল এবং প্রতি ছয় মাস অন্তর কাজের প্রতিবেদন অনলাইনে প্রকাশ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের সাপ্তাহিক বৈঠকের পর সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানান, “বর্তমানে তিনজন কমিশনারের সমন্বয়ে কাজ করা দুদককে পাঁচজন কমিশনারের মাধ্যমে কার্যকর করা হবে। এর মধ্যে একজন নারী এবং একজন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ থাকবেন। এটি লিঙ্গসমতা ও প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ।”
প্রেস সচিব আরও জানিয়েছেন, চূড়ান্ত অধ্যাদেশে পূর্বের খসড়ায় থাকা ‘বাছাই কমিটি’ সংক্রান্ত বিধান বাদ দেওয়া হয়েছে। তবে কর্মকর্তাদের সম্পদের হিসাব দাখিল এবং কাজের প্রতিবেদন অনলাইনে প্রকাশের বিধান সংরক্ষণ করা হয়েছে, যা দুদকের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করবে এবং জনগণের আস্থা বৃদ্ধি করবে।
অধ্যাদেশে প্রধান পরিবর্তনগুলো হলো: কমিশনার সংখ্যা বৃদ্ধি করে তিন থেকে পাঁচ করা, যার মধ্যে একজন নারী ও একজন আইটি বিশেষজ্ঞ থাকবেন; প্রতি ছয় মাস অন্তর কাজের প্রতিবেদন অনলাইনে প্রকাশ; কর্মকর্তাদের নিজস্ব সম্পদের হিসাব দাখিল বাধ্যতামূলক করা; এবং বাছাই কমিটি সংক্রান্ত বিধান বাদ দেওয়া।
উপদেষ্টা পরিষদের একই বৈঠকে আরও তিনটি অধ্যাদেশের খসড়া অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে মানব পাচার ও অভিবাসী চোরাচালান প্রতিরোধ ও দমন অধ্যাদেশ, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) অধ্যাদেশ এবং জাতীয় মানবাধিকার কমিশন (সংশোধন) অধ্যাদেশ অন্তর্ভুক্ত। নতুন বিধানগুলো যথাক্রমে মানব পাচার ও চোরাচালান রোধ, রাজউকের কার্যকারিতা বৃদ্ধি এবং কমিশনকে আটককেন্দ্র ও জেল পরিদর্শনের ক্ষমতা প্রদান করবে।
সাম্প্রতিক সময়ে দুদকের কার্যক্রমও উল্লেখযোগ্য। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, অনিয়ম ও ঘুষ গ্রহণের অভিযোগে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুদক। এছাড়া কমিশন জানিয়েছে, যারা কমিশনের ওপর অন্যায় চাপ প্রয়োগ করবে তাদের নাম প্রকাশ করা হবে। নতুন অধ্যাদেশ এই ধরনের কার্যক্রমকে আরও শক্তিশালী করবে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই উদ্যোগকে স্বাগত জানানো হয়েছে। তবে দুদকের অতীত কার্যক্রম নিয়ে কিছু সমালোচনাও রয়েছে। একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, “দুদক, মানবাধিকার কমিশনসহ চারটি অধ্যাদেশ অনুমোদন—এটি অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কারের অংশ।” এই প্রতিক্রিয়া থেকে বোঝা যায়, জনগণ দুর্নীতি দমনে আরও কঠোর পদক্ষেপ আশা করছে।
নতুন অধ্যাদেশগুলো অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কারমুখী উদ্যোগের অংশ, যা দেশের প্রশাসনিক ও আইনি কাঠামোকে শক্তিশালী করবে। বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া এবং এর কার্যকারিতা ভবিষ্যতে দেশের দুর্নীতি দমন ও স্বচ্ছতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।






