হায়লি গুব্বি ছাই বাংলাদেশের ওপর: আকাশ ধূসর

ইথিওপিয়ার হায়লি গুব্বি আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত: বাংলাদেশের আকাশে ছাইয়ের সম্ভাব্য প্রভাব।
টুইট প্রতিবেদক: ইথিওপিয়ার আফার অঞ্চলে অবস্থিত প্রাচীন হায়লি গুব্বি আগ্নেয়গিরি প্রায় ১২ হাজার বছর পর প্রথমবারের মতো অগ্ন্যুৎপাত ঘটিয়েছে। ২৩ নভেম্বরের এই বিস্ফোরণকে ভূতাত্ত্বিকরা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা হিসেবে বিবেচনা করছেন।
অগ্ন্যুৎপাতের পর আগ্নেয়গিরি থেকে ১৪ কিলোমিটার উচ্চতা পর্যন্ত ধোঁয়া, ছাই ও গ্যাস আকাশে উঠে যায় এবং দ্রুত পূর্ব দিকে ছড়িয়ে পড়ে। ইতোমধ্যে এর প্রভাব পড়েছে ইয়েমেন, ওমান, ভারত ও উত্তর পাকিস্তানে, যেখানে আকাশ ধোঁয়াটে হয়ে যায় এবং দৃশ্যমানতা হ্রাস পায়।
ভারতের উত্তরাঞ্চলে ছাইয়ের কারণে দিল্লি, পাঞ্জাব, রাজস্থান ও গুজরাটে একাধিক ফ্লাইট বাতিল হয়েছে। বিমানবন্দরে সতর্কতা জারি করা হয়েছে এবং কিছু এলাকায় সূর্যালোক দুর্বল হয়ে পড়েছে। ভারতের আবহাওয়া বিভাগ এবং টুলুজ ভলক্যানিক অ্যাশ অ্যাডভাইজরি সেন্টার (VAAC) জানিয়েছে, ছাইয়ের মেঘ ১০০–১৫০ কিলোমিটার/ঘণ্টা বেগে অগ্রসর হচ্ছে এবং পূর্ব দিকের পথে বাংলাদেশসহ আরও কয়েকটি দেশে পৌঁছাচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, আজ ২৫ নভেম্বর রাতের দিকেই ছাইয়ের মেঘ ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল অতিক্রম করবে এবং ২৬ নভেম্বর সকাল থেকে বাংলাদেশের আকাশেও এর সামান্য প্রভাব দেখা যেতে পারে। বাংলাদেশের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলে—বিশেষ করে সিলেট, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার—বাতাসে সালফার ডাইঅক্সাইড (SO₂) গ্যাসের মাত্রা কিছুটা বেড়ে যেতে পারে। তবে দেশের সাধারণ বায়ুর মান (AQI) মারাত্মকভাবে খারাপ হবে না বলে ধারণা করা হচ্ছে।
স্বাস্থ্যঝুঁকির ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞরা জানান, আগ্নেয় ছাইয়ের ক্ষুদ্র কণা চোখ, গলা ও শ্বাসযন্ত্রে জ্বালা সৃষ্টি করতে পারে। হাঁপানি, সিওপিডি বা ব্রঙ্কাইটিস রোগীদের ঝুঁকি তুলনামূলক বেশি থাকবে। দীর্ঘক্ষণ বাইরে থাকলে মাথাব্যথা বা শ্বাসকষ্ট বাড়তে পারে। তাই জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বাইরে বের হলে মাস্ক ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন এবং শিশু-বৃদ্ধদের অপ্রয়োজনীয় বাইরে না যাওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন।
এই অগ্ন্যুৎপাতের সবচেয়ে বড় প্রভাব পড়তে পারে বিমান চলাচলে। বাংলাদেশের প্রধান বিমানবন্দর—ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট—নিয়ে কর্তৃপক্ষ উচ্চ সতর্কতায় রয়েছে। কারণ ছাইয়ের ক্ষুদ্র কণা বিমানের ইঞ্জিনে ঢুকে বিপজ্জনক ক্ষতি করতে পারে। ফলে কিছু আন্তর্জাতিক রুটে ফ্লাইট বিলম্ব বা বাতিল হওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। যাত্রীদের ফ্লাইট আপডেট নিয়মিত চেক করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
কৃষিক্ষেত্রে তুলনামূলক প্রভাব কম হলেও, কিছু অঞ্চলে মাটির পৃষ্ঠে সূক্ষ্ম ছাই জমতে পারে। এতে জমির অম্লতা সামান্য বেড়ে যেতে পারে, যদিও বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এই প্রভাব খুবই সামান্য হবে বলে পূর্বাভাস। প্রাকৃতিক দৃশ্যমানতার ক্ষেত্রে, বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে ছাইয়ের কারণে সূর্যাস্তের আকাশ লাল-কমলা বা গোলাপি রঙে আরও উজ্জ্বল দেখা যেতে পারে।
বাংলাদেশ আবহাওয়া বিভাগ জানিয়েছে যে পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক মনিটরিং সেন্টারগুলোর আপডেটও নিয়মিতভাবে নজরে রাখা হচ্ছে। প্রভাব ১–২ দিনের মধ্যেই কমে আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে জনসাধারণকে অযথা আতঙ্কিত না হয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।






