দিল্লির দূষণ সংকট: অফিসে ৫০% কর্মী উপস্থিতি

দিল্লির দূষণ সংকট: GRAP-৩-এর অধীনে অফিসে ৫০% কর্মী উপস্থিতি, বাকিরা WFH-এ।

টুইট প্রতি‌বেদক: শীতকালীন কুয়াশা এবং যানবাহন, শিল্প ও ধানের খড়ের জ্বালানি থেকে উদ্ভূত বিষাক্ত ধোঁয়া মিশে দিল্লি-এনসিআর অঞ্চলের বাতাস আবারও ‘ভয়াবহ’ পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় কমিশন ফর এয়ার কোয়ালিটি ম্যানেজমেন্ট (CAQM) গ্রেডেড রেসপন্স অ্যাকশন প্ল্যান (GRAP)-এর স্টেজ-৩ কার্যকর করেছে।

সরকারি এবং বেসরকারি অফিসগুলোতে সর্বোচ্চ ৫০% কর্মীর উপস্থিতি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে, বাকি ৫০% কর্মী ওয়ার্ক ফ্রম হোম (WFH) করবেন।

এই নির্দেশনা ২৪ নভেম্বর দিল্লি সরকারের পরিবেশ বিভাগ থেকে জারি হয়েছে এবং এটি এনভায়রনমেন্ট (প্রটেকশন) অ্যাক্ট, ১৯৮৬-এর ধারা ৫ অনুযায়ী কার্যকর। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন যে, এই ব্যবস্থা না নিলে দূষণের মাত্রা ‘সিরিয়াস’ (AQI ৪০০-এর উপরে) হয়ে যেতে পারে, যা স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি সৃষ্টি করবে।

কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ড (CPCB)-এর সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২৫ নভেম্বর সকালে দিল্লির গড় এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (AQI) ৩৬০-৩৭০-এর মধ্যে রয়েছে, যা ‘ভেরি পুয়ার’ (৩০১-৪০০) বিভাগে পড়ে।

কয়েকটি স্টেশনে, যেমন আনন্দ ভিহার ও বুরারি, AQI ৪০০-এর কাছাকাছি পৌঁছেছে, যা ‘সিরিয়াস’ পর্যায়ের সীমান্তে। প্রধান দূষক হলো PM2.5 (সূক্ষ্ম কণা) এবং PM10, যাদের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ সীমা অতিক্রম করেছে। ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ট্রপিক্যাল মেটিওরোলজির ডিসিশন সাপোর্ট সিস্টেম (DSS) অনুযায়ী, ২৪ নভেম্বর দিল্লির দূষণের ২১.৬% গাড়ি নির্গমন থেকে এসেছে, যা সবচেয়ে বেশি অবদানকারী। ধানের খড় জ্বালানির অবদান মাত্র ১.৮%, তবে শীতকালে কম বাতাসের গতির কারণে দূষণ বাতাসে আটকে থাকে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই পরিস্থিতি শীতের শেষ পর্যন্ত চলতে পারে, যদি না দীর্ঘমেয়াদী ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

GRAP হলো দিল্লি-এনসিআর-এর জন্য স্তরভিত্তিক দূষণ নিয়ন্ত্রণ পরিকল্পনা, যা AQI-এর উপর ভিত্তি করে কার্যকর হয়। সাধারণত স্টেজ-৩ (AQI ৪০১-৪৫০) এবং স্টেজ-৪ (AQI ৪৫০+) এর মধ্যে পার্থক্য থাকে। ২১ নভেম্বর CAQM-এর সংশোধনের পর, স্টেজ-৪-এর কিছু কঠোর ব্যবস্থা এখন স্টেজ-৩-এ চালু হয়েছে, যা দ্রুত হস্তক্ষেপকে সম্ভব করেছে।

স্টেজ-৩-এর মূল ব্যবস্থাসমূহের মধ্যে রয়েছে অফিস উপস্থিতি নিয়ন্ত্রণ। সকল সরকারি এবং বেসরকারি অফিসে সর্বোচ্চ ৫০% কর্মী উপস্থিত থাকবেন, বাকি কর্মী WFH করবেন। প্রশাসনিক সচিব এবং বিভাগীয় প্রধানদের নিয়মিত অফিসে যাওয়া বাধ্যতামূলক। স্ট্যাগার্ড অফিস টাইমিং যেমন ৯টা-৫টা এবং ১০টা-৬টা চালু থাকবে। স্কুল ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও হাইব্রিড মোড কার্যকর করা হয়েছে, বিশেষ করে ক্লাস ৫-এর নিচের শিক্ষার্থীদের জন্য, এবং বাইরের খেলাধুলা সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

পরিবহন খাতে, BS-III পেট্রোল ও BS-III ডিজেল (১০ বছরের পুরনো) গাড়ি চলাচল বন্ধ। ইন্টার-স্টেট বাসের চলাচল সীমিত করা হয়েছে, তবে মেট্রো এবং CNG/ইলেকট্রিক বাসের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। নির্মাণ ক্ষেত্রে ধুলো-সংশ্লিষ্ট কাজ স্থগিত। বায়োমাস জ্বালানি ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে, পাবলিক ট্রান্সপোর্ট বৃদ্ধি করা হয়েছে, এবং মিডিয়ার মাধ্যমে সচেতনতা প্রচার চলছে। এই নিয়ম ১১ নভেম্বর থেকে কার্যকর, তবে সর্বশেষ নির্দেশনা ২৪ নভেম্বর জারি হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের ১৭-১৯ নভেম্বরের শুনানি (MC মেহতা কেস) এই সংশোধনের অনুমোদন দিয়েছে।

স্বাস্থ্যসেবা, ফায়ার সার্ভিস, জেলখানা, পাবলিক ট্রান্সপোর্ট, বিদ্যুৎ-জল সরবরাহ, স্যানিটেশন এবং দূষণ নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত সেক্টরগুলো ১০০% উপস্থিতি বজায় রাখবে। ব্যাঙ্ক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষেত্রে স্পষ্ট নির্দেশনা নেই। তবে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রশ্ন উঠেছে, ব্যাংক কর্মীরাও কি WFH-এর নিয়ম মেনে চলবেন। এক্স-এ এক পোস্টে বলা হয়েছে, “যদি WFH স্বাস্থ্যের জন্য জরুরি হয়, তাহলে ব্যাঙ্কাররা কেন বাদ?”।

দূষণের কারণে শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি, হৃদরোগ এবং শিশু ও বৃদ্ধদের সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়েছে। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন যে, PM2.5 কণা ফুসফুসে প্রবেশ করে রক্তে মিশে যায়, যা দীর্ঘমেয়াদে ক্যান্সারের কারণ হতে পারে। ডাক্তাররা পরামর্শ দিচ্ছেন মাস্ক পরা, বাইরে কম যাওয়া, ঘরে এয়ার পিউরিফায়ার ব্যবহার এবং প্রচুর পানি খাওয়া। সুপ্রিম কোর্ট দৈনিক মজুরদের জন্য ভাতা বৃদ্ধি নির্দেশ করেছে, যারা GRAP-এর কারণে চাকরি হারাচ্ছেন।

সোশ্যাল মিডিয়ায় #DelhiPollution, #GRAPStage3 এবং #WFH ট্রেন্ডিং হয়েছে। এক পোস্টে বলা হয়েছে, “দিল্লির অফিসগুলো ৫০% স্টাফ নিয়ে চলবে, বাকিরা WFH—দূষণের বিরুদ্ধে লড়াই শুরু!”। অন্যরা প্রশ্ন তুলেছে, “এটা সময়সূচী পরিবর্তন, না দূষণের মূল কারণ মোকাবিলা?”। ভাইরাল ছবি ও ভিডিওতে কুয়াশায় ঢাকা দিল্লির দৃশ্য দেখা যাচ্ছে, যা সচেতনতা বাড়াচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, GRAP অস্থায়ী ব্যবস্থা। দীর্ঘমেয়াদী সমাধান হিসেবে প্রয়োজন ইলেকট্রিক ভেহিকল প্রচার, ধানের খড় জ্বালানির বিকল্প ব্যবহার এবং শিল্প নির্গমন নিয়ন্ত্রণ। সুপ্রিম কোর্টের পরবর্তী শুনানি ১০ ডিসেম্বর। এদিকে, দিল্লির নাগরিকরা এই ‘গ্যাস চেম্বার’-এর মধ্যে বেঁচে থাকার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।

উৎস: CPCB এবং CAQM-এর সর্বশেষ তথ্য। স্বাস্থ্য রক্ষায় সতর্ক থাকা অত্যন্ত জরুরি।