এলডিসি উত্তরণ নয়, এটা জনগণের সঙ্গে প্রতারণা: জনগণকে জিজ্ঞাসা না করেই সিদ্ধান্ত?

  • এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন ও জাতীয় স্বার্থ: জনগণের অংশগ্রহণ ছাড়া ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করা অনুচিত।
  • গাজীপুরের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী থেকে নারায়ণগঞ্জের তরুণী—সাধারণ মানুষদের জীবনে এলডিসি উত্তরণ ও নীতিগত সিদ্ধান্তের প্রভাব গভীর।

বদিউল আলম লিংকন: বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান মঙ্গলবার ম‌ধ্যেরাতে (২৪ নভেম্বর) একাধিক স্ট্যাটাসে এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন প্রক্রিয়া নিয়ে গুরুতর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

তিনি বলেছেন, এটি কেবল অর্থনৈতিক বা কূটনৈতিক বিষয় নয়, এটি লাখো মানুষের জীবন-জীবিকা ও ভবিষ্যতের প্রশ্ন।

তিনি লি‌খেন, গাজীপুরের একজন ক্ষুদ্র গার্মেন্টস কারখানা মালিককে কল্পনা করুন। এক দশকেরও বেশি সময় ধরে তিনি নিজের হাতে ব্যবসা গড়ে তুলেছেন। শতাধিক শ্রমিককে কর্মসংস্থান দিয়েছেন, পাতলা মার্জিনে ব্যবসা চালিয়েছেন, বৈশ্বিক বাজারে কঠিন প্রতিযোগিতার মুখে টিকে আছেন।

হঠাৎ একদিন, কোনো পূর্বঘোষণা ছাড়াই, সেই শুল্ক-সুবিধাগুলো যা তার পণ্যকে প্রতিযোগিতামূলক রেখেছিল, নীরবে উঠে যায়। অর্ডার কমে, কারখানা চালানো দায় হয়, শ্রমিকদের বেতন দেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। এই মানুষটির কষ্ট কোনো শিরোনাম হয় না, কিন্তু বাস্তবতা হাড়ে হাড়ে টের পান তিনি।

একইভাবে নারায়ণগঞ্জের এক তরুণী, যে সদ্য গ্র্যাজুয়েশন শেষ করেছে, দেখছে তার বাবার ওভারটাইম বন্ধ হয়ে গেছে, শিফট কমেছে, চাকরি অনিশ্চিত। রপ্তানি আয়ে চাপ পড়ায় যে সংকট তৈরি হচ্ছে, তা সাধারণ মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে যাচ্ছে।

তারেক রহমানের ভাষায়, “এই মানুষগুলো কখনো এই সিদ্ধান্তে ভোট দেয়নি। তাদের সঙ্গে প্রকৃত তথ্য শেয়ারও করা হয়নি।”

বিএনপি বারবার বলছে, ২০২৬ সালের এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের সময়সীমা অটল রাখা একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। এই সিদ্ধান্ত একটি অ-নির্বাচিত অস্থায়ী সরকার নিচ্ছে, যার কোনো জনগণের ম্যান্ডেট নেই। অথচ এই সিদ্ধান্ত দেশের অর্থনীতির দীর্ঘমেয়াদি কাঠামোকে প্রভাবিত করবে।

সরকারের বক্তব্য হচ্ছে, সময়সীমা পেছানো ‘অসম্ভব’, জাতিসংঘ নাকি এটিকে ‘অপমান’ হিসেবে দেখবে। কিন্তু তারেক রহমান স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, অ্যাঙ্গোলা, সামোয়া, ভানুয়াতুসহ একাধিক দেশ অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা ও বৈশ্বিক সংকটের কারণ দেখিয়ে গ্র্যাজুয়েশনের সময়সীমা স্থগিত বা সমন্বয় করেছে। জাতিসংঘের নিয়মেই এই সুযোগ আছে।

তিনি আরও বলেছেন, “সময়সীমা পেছানোর বিকল্পকে প্রকাশ্যে বাদ দিয়ে আমরা নিজেদের দর কষাকষির শক্তিই দুর্বল করে দিচ্ছি।”

সরকারের নিজস্ব নথিতেই স্বীকার করা হয়েছে যে, বর্তমানে দেশের অর্থনীতি যে চাপের মুখে আছে—ব্যাংকিং খাতে সংকট, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে টানাপোড়েন, ঋণের ঝুঁকি বৃদ্ধি, রপ্তানি প্রবৃদ্ধির ধীরগতি—এই পরিস্থিতিতে এলডিসি-উত্তর বাস্তবতা মোকাবিলা করা অত্যন্ত কঠিন হবে।

তারেক রহমান স্পষ্ট করেছেন, “এটি গ্র্যাজুয়েশনের বিপক্ষে দাঁড়ানো নয়। বাংলাদেশ এই অগ্রগতির যোগ্যতা অর্জন করেছে। কিন্তু যোগ্যতা অর্জন করা এবং প্রস্তুত থাকা দুটো আলাদা বিষয়।”

তিনি চট্টগ্রাম বন্দরের প্রসঙ্গও তুলেছেন—যেখানে একইভাবে কৌশলগত বিকল্প বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, জনগণের আলোচনাকে উপেক্ষা করা হয়েছে।

শেষে তিনি বলেছেন, “কৌশলগত ধৈর্য দুর্বলতা নয়। গণতান্ত্রিক বৈধতা বিলম্ব নয়। বাংলাদেশের মানুষ কখনো তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে নীরব ছিল না। তারা চায় তাদের কথা শোনা হোক, অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া হোক, সম্মান করা হোক।”

আগামী ফেব্রুয়ারি ২০২৬-এর জাতীয় নির্বাচনকে তিনি এই প্রশ্নে একটি historical সুযোগ হিসেবে দেখছেন—যেখানে দেশের মানুষ নিজেরাই তাদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে, ‘সবার আগে বাংলাদেশ’ এই অঙ্গীকার নিয়ে।