শক্তিশালী ভূমিকম্প, দেশজুড়ে আতঙ্ক

বাংলাদেশে ২১ নভেম্বরের ভূমিকম্প: ঢাকাসহ বহু জেলায় তীব্র কম্পন অনুভূত, আতঙ্কে রাস্তায় মানুষের ঢল।
টুইট প্রতিবেদক: শুক্রবার সকালে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে শক্তিশালী ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। স্থানীয় সময় সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে হওয়া এই ভূমিকম্পে উচ্চতলা ভবনগুলো দুলে ওঠে এবং মুহূর্তেই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
ভূমিকম্পের কেন্দ্র ছিল নরসিংদীর ঘোরাশাল এলাকা থেকে প্রায় ১৪ কিলোমিটার পশ্চিম-দক্ষিণ-পশ্চিমে, আর এর গভীরতা ছিল মাত্র ১০–১৫ কিলোমিটার, যা একে আরও বিপজ্জনকভাবে অনুভূত করতে সাহায্য করেছে।
এই ভূমিকম্পটি ইন্দো-অস্ট্রেলিয়ান প্লেটের সীমান্তবর্তী অঞ্চলে ঘটেছে, যা বাংলাদেশকে ভূমিকম্পপ্রবণ করে তোলে।
মাত্রায় ভিন্নতা, তবে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ৫.৫
আন্তর্জাতিক সিসমিক সংস্থাগুলোর রিপোর্টে কিছুটা পার্থক্য দেখা যায়—USGS ও BMD ৫.৫, GFZ ৫.৭, EMSC ৬.০ এবং INGV ৫.৬ মাত্রা প্রকাশ করেছে। তবে আন্তর্জাতিকভাবে USGS-এর ৫.৫ মাত্রা-ই সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত হচ্ছে।
কীভাবে কেঁপেছে দেশ
ঢাকার বহু এলাকা—মিরপুর, গুলশান, বাড্ডা, মোহাম্মদপুর, মতিঝিল, উত্তরা—সহ দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল, সিলেট-চট্টগ্রাম অঞ্চল এবং সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে তীব্রভাবে কম্পন অনুভূত হয়। উচ্চতলা অফিস ও আবাসিক ভবনের ভেতরের মানুষজন দ্রুত রাস্তায় নেমে আসে।
কম্পনের সময়কাল ছিল ১৫–৩০ সেকেন্ড, কোথাও আরও দীর্ঘ বলে মনে হওয়ায় আতঙ্ক আরও বৃদ্ধি পায়।
এখন পর্যন্ত কোনো বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির তথ্য পাওয়া যায়নি।
কোথাও বিল্ডিং ধসের খবর নেই, তবে ভয়ে দৌড়ে বের হওয়ার সময় কয়েকজন সামান্য আঘাত পেয়েছে।
বিশেষজ্ঞ সংস্থা QLARM ধারণা করেছিল ক্ষতির সংখ্যা ২৮০–৩৫০০ হতে পারে, তবে বাস্তবে তা অনেক কম এবং নিয়ন্ত্রিত পরিস্থিতি বজায় রয়েছে।
দেশ-বিদেশে অনুভূত কম্পন
ভূমিকম্পের ঢেউ পৌঁছায় ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, কলকাতা, আসাম, ত্রিপুরা, মেঘালয়সহ উত্তর-পূর্বাঞ্চলে। কলকাতায় IMD সতর্কতা জারি করে।
নেপাল ও মিয়ানমারের কিছু অঞ্চলেও কম্পন অনুভূত হয়েছে। মোট প্রভাবের পরিধি ছিল ৩০০ কিলোমিটার।
সরকারি সতর্কতা ও তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ
বাংলাদেশ আবহাওয়া দফতর (BMD) দ্রুত সতর্কতা জারি করে জানায়—খোলা জায়গায় থাকা, গ্যাস/বিদ্যুৎ লাইন পরীক্ষা করা, ভবনের বাইরে নিরাপদ স্থানে অবস্থান।
পরবর্তী কম্পনের (aftershock) জন্য প্রস্তুত থাকা
ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ, সেনাবাহিনী ও জেলা প্রশাসনের টিম বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করছে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় আতঙ্কের ঝড়
X (টুইটার)–এ ভূমিকম্প ঘিরে হাজারো পোস্ট ভেসে আসে:
“জীবনে এমন ভূমিকম্প কখনো অনুভব করিনি”
“ঢাকার বিল্ডিং কাঁপছে, সবাই রাস্তায় নেমে এসেছে”
অনেক ব্যবহারকারী ভিডিও ও ছবি শেয়ার করেছেন, যেখানে অফিস ভবন খালি করে মানুষকে রাস্তায় জড়ো হতে দেখা যায়।
বিশেষজ্ঞ মতামত
ভূমিকম্পটি ছিল টেকটোনিক ধরণের, যা ঢাকার নিকটবর্তী সক্রিয় ফল্টলাইনকে আবারও স্মরণ করিয়ে দিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঢাকা ৭.০ মাত্রার একটি বড় কম্পনের ক্ষেত্রে ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়তে পারে।
সতর্কতা ও পরামর্শ
আফটারশক হলে টেবিল/মজবুত আসবাবের নিচে আশ্রয় নিন
লিফট ব্যবহার করবেন না।
গ্যাস ও বিদ্যুতের সংযোগ পরীক্ষা করুন।
পরিবার ও প্রতিবেশীদের সাথে যোগাযোগ রাখুন।
BMD, USGS-এর অফিসিয়াল আপডেট অনুসরণ করুন।
২১ নভেম্বরের ভূমিকম্পটি দেশের মানুষের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করলেও বড় ক্ষতি হয়নি—এটাই স্বস্তির বিষয়। ভূমিকম্পপ্রবণ দেশে নিরাপত্তা সচেতনতা বাড়ানোই এখন জরুরি।






