ইউরোপের সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ বাংলাদেশে

লালদিয়া টার্মিনালে এপিএম টার্মিনালসের বিনিয়োগ: বাংলাদেশের বাণিজ্য ও এফডিআই-এর ‘নতুন যুগের সূচনা’ – প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস।
বিশেষ প্রতিবেদক: অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ডেনমার্কের এপিএম টার্মিনালসের পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনাল (লালদিয়া) প্রকল্পে বিনিয়োগ বাংলাদেশের বাণিজ্য ও বিদেশি প্রত্যক্ষ বিনিয়োগের (এফডিআই) জন্য একটি নতুন যুগের সূচনা করেছে। “এটি দেশের জন্য নতুন শুরু।
ডেনমার্ক ও ইউরোপ থেকে আরও বড় ও বৈচিত্র্যময় বিনিয়োগের দরজা খুলে দেবে,” তিনি বলেন।
সোমবার ( বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় মার্স্ক গ্রুপ ও ডেনিশ সরকারের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা এ কথা বলেন। বৈঠকে মার্স্ক গ্রুপের চেয়ারম্যান রবার্ট মার্স্ক উগলা নেতৃত্ব দেন। এপিএম টার্মিনালস মার্স্ক গ্রুপের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ডেনমার্কের ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট স্টেট মন্ত্রী নিনা গ্যান্ডলোসে হ্যানসেন।
রবার্ট মার্স্ক উগলা বলেন, লালদিয়া টার্মিনালে এ বিনিয়োগ বাংলাদেশে যেকোনো ইউরোপীয় কোম্পানির সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ হবে। ২০৩০ সালে টার্মিনাল চালুর পর চট্টগ্রাম বন্দরে বড় জাহাজ ভিড়তে পারবে, যা দেশের অর্থনীতিকে ব্যাপক গতি দেবে। “এটি হবে একটি টেকসই বন্দর। লক্ষাধিক কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে,” তিনি জানান। তিনি আরও বলেন, এই বিনিয়োগ ইউরোপের অন্যান্য বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে আকৃষ্ট করতে সহায়ক হবে। মার্স্ক গ্রুপ বাংলাদেশের লজিস্টিকস ও সাপ্লাই চেইন খাতেও আরও বিনিয়োগের সুযোগ খুঁজছে।
প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস উল্লেখ করেন, গত জানুয়ারিতে সুইজারল্যান্ডের ডেভোসে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামে রবার্ট মার্স্ক উগলার সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন। সেই বৈঠকের প্রতিশ্রুতি পূরণ করায় তিনি উগলাকে ধন্যবাদ জানান। “আমরা খুব খুশি ও উত্তেজিত,” তিনি বলেন এবং এপিএম টার্মিনালসকে লালদিয়া প্রকল্পের নির্মাণকাজ ত্বরান্বিত করার আহ্বান জানান। “এটি হবে আমাদের অর্থনৈতিক প্রবেশদ্বার। ভবিষ্যতের দরজা খুলে দেবে,” তিনি মন্তব্য করেন।
রবার্ট উগলা জানান, মার্স্ক গ্রুপ একটি ফাউন্ডেশনের মালিকানাধীন এবং অধ্যাপক ইউনূসের কাজ তাদের অনুপ্রাণিত করেছে। তিনি বলেন, “এই বিনিয়োগ স্থানীয় সম্প্রদায়ের ওপর বড় প্রভাব ফেলবে,” এবং নারীদের সহায়তায় বিশেষ উদ্যোগ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।
ডেনমার্কের স্টেট মন্ত্রী নিনা গ্যান্ডলোসে হ্যানসেন সম্প্রতি পাস হওয়া নতুন শ্রম আইনকে প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, এই আইন ইউরোপীয় কোম্পানিগুলোকে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে আরও উৎসাহিত করবে।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী, পিপিপি অথরিটির সিইও ও বিডা’র নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন, এসডিজি বিষয়ক সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত ডেনমার্কের রাষ্ট্রদূত ক্রিশ্চিয়ান ব্রিক্স মোলার। বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী বলেন, “এটি আমাদের জন্য একটি মাইলফলক। অন্তর্বর্তী সরকারের এফডিআই আকর্ষণে দৃঢ় প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন।”
লালদিয়া কন্টেইনার টার্মিনাল প্রকল্পের সংক্ষিপ্ত তথ্য:
বিনিয়োগকারী: এপিএম টার্মিনালস (মার্স্ক গ্রুপ)
অবস্থান: পতেঙ্গা, চট্টগ্রাম বন্দর
চালুর সম্ভাব্য সময়: ২০৩০
প্রত্যাশিত সুবিধা: বড় জাহাজ ভিড়ানো, রপ্তানি-আমদানি বৃদ্ধি, লক্ষাধিক কর্মসংস্থান, টেকসই বন্দর
প্রধান উপদেষ্টার এই বৈঠক ও ডেনিশ বিনিয়োগ বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এটি অন্তর্বর্তী সরকারের বিনিয়োগবান্ধব নীতির সাফল্যের আরেকটি প্রমাণ বহন করছে এবং দেশের বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি করছে।







