বান্দরবানে নিরাপদ সড়কের ডাক: পুলিশের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ উদ্যোগ!

- বান্দরবানে নিরাপদ সড়ক গড়তে পুলিশের মতবিনিময় সভা।
- স্টেকহোল্ডারদের সমন্বয়ে দুর্ঘটনা রোধের প্রত্যয়।
অসীম রায় (অশ্বিনী): বান্দরবান: পাহাড়ি জেলা বান্দরবানে ক্রমবর্ধমান যানবাহনের চাপ ও জটিল ভূ-প্রকৃতির কারণে সড়ক দুর্ঘটনা উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে। এই বাস্তবতায় বান্দরবান জেলা পুলিশ মঙ্গলবার বিকেলে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে আয়োজন করে “যথাযথ ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে নিরাপদ ও সুশৃঙ্খল সড়ক নিশ্চিতকরণ” শীর্ষক এক মতবিনিময় সভা।
সভায় জেলা প্রশাসন, পৌরসভা, পরিবহন মালিক, শ্রমিক ইউনিয়ন, শিক্ষক ও গণমাধ্যম প্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডাররা অংশগ্রহণ করেন।
সভায় সভাপতিত্ব করেন বান্দরবানের পুলিশ সুপার মোঃ শহিদুল্লাহ কাওছার, পিপিএম (বার)। তিনি বলেন, “সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে পুলিশের একক প্রচেষ্টা যথেষ্ট নয়। পরিবহন মালিক, শ্রমিক, পৌরসভা, জেলা প্রশাসন—সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে। একসঙ্গে উদ্যোগ নিলেই নিরাপদ সড়ক বাস্তবায়ন সম্ভব।”
ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ও সচেতনতা
সভায় জানানো হয়, বান্দরবানের ট্রাফিক পুলিশের সংখ্যা মাত্র ১৪ জন, অথচ পুরো জেলার রাস্তাঘাট এখন কয়েকগুণ ব্যস্ত। বিশেষ করে শহরের কলেজ রোড, বান্দরবান-রুমা ও বান্দরবান-থানচি সড়কে প্রতিদিন যানজট ও দুর্ঘটনার ঝুঁকি থাকে।
পুলিশ সুপার জানান, চালক ও পথচারীদের ট্রাফিক সচেতনতা বাড়াতে প্রতি শুক্রবার বিনামূল্যে চালক প্রশিক্ষণ ক্যাম্প আয়োজন করা হবে। এছাড়া ডিসেম্বর থেকে জেলার প্রতিটি স্কুলে ‘রোড সেফটি ক্লাব’ চালু করা হবে।
যানবাহন ফিটনেস ও পার্কিং পরিকল্পনা
সভায় আলোচনা হয়, জেলার পুরনো ও ফিটনেসবিহীন গাড়িগুলো দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ। এ বিষয়ে পুলিশ সুপার ঘোষণা দেন, বাধ্যতামূলক বার্ষিক ফিটনেস চেকিং ও মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে।
বান্দরবান পৌরসভা জানায়, শহরের বাজার এলাকায় দুটি নির্দিষ্ট পার্কিং লট নির্মাণের প্রস্তাব ইতোমধ্যে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে।
স্কুল জোনে নিরাপত্তা ব্যবস্থা
অভিভাবক ও শিক্ষক প্রতিনিধিরা স্কুলের সামনে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারের দাবি জানান। পুলিশ সুপার বলেন, সকাল ৮টা থেকে ১০টা এবং দুপুর ১টা থেকে ৩টা পর্যন্ত ট্রাফিক পুলিশ মোতায়েন থাকবে। এছাড়া জেব্রা ক্রসিং ও সাইনবোর্ড স্থাপন করবে পৌরসভা।
দুর্ঘটনার পরিসংখ্যান ও বাস্তব চিত্র
পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে বান্দরবানে মোট ৪৭টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে, যাতে ১৮ জন নিহত ও ৬৪ জন আহত হন।
দুর্ঘটনার প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয় —
বেপরোয়া গতি: ৪২%
ফিটনেসবিহীন যানবাহন: ৩১%
অতিরিক্ত যাত্রীবাহী ও অভিজ্ঞতাহীন চালক: ১৭%
বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, পাহাড়ি সড়কের তীব্র বাঁক, ঘন কুয়াশা ও অতিরিক্ত যাত্রীবাহী গাড়ির কারণে বান্দরবানে দুর্ঘটনার হার চট্টগ্রাম বিভাগের অন্য জেলার তুলনায় প্রায় ২৭% বেশি।
গৃহীত সিদ্ধান্তসমূহ
সভা শেষে একটি কর্মপরিকল্পনা ঘোষণা করা হয়।
১৫ দিনের মধ্যে বান্দরবান শহরের ট্রাফিক জোনিং ম্যাপ প্রকাশ।
প্রতি শুক্রবার চালক প্রশিক্ষণ ও লাইসেন্স সচেতনতা ক্যাম্প।
ডিসেম্বর থেকে স্কুলভিত্তিক রোড সেফটি ক্লাব চালু।
মোবাইল কোর্ট পরিচালনায় পৌরসভা ও বিআরটিএ’র যৌথ অংশগ্রহণ।
সভায় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল), বান্দরবান পৌরসভার কাউন্সিলরবৃন্দ (ওয়ার্ড ১, ৩ ও ৫), জেলা পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, বাস-মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়নের প্রতিনিধি, বান্দরবান প্রেসক্লাবের সাংবাদিক, স্থানীয় শিক্ষক ও অভিভাবক প্রতিনিধি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই সভাটি বান্দরবানের সড়ক নিরাপত্তায় একটি টার্নিং পয়েন্ট, যা ভবিষ্যতে পাহাড়ি সড়কে দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে নতুন দৃষ্টান্ত তৈরি করতে পারে।







