বান্দরবানে আসছে ৯০’র দশকের রক কিংবদন্তি

বান্দরবান সরকারি কলেজের সুবর্ণ জয়ন্তীতে আসছেন জনপ্রিয় ব্যান্ড শিল্পী হাসান ও ‘আর্ক’ ব্যান্ড।
অসীম রায় (অশ্বিনী): পাহাড়ি রাজধানী বান্দরবানের সাংস্কৃতিক আকাশে নতুন আলোর রেখা আঁকতে প্রস্তুত হয়েছে দেশের জনপ্রিয় রক ব্যান্ড ‘আর্ক’ এবং তার কিংবদন্তি লিড ভোকালিস্ট সৈয়দ হাসানুর রহমান, যিনি পরিচিতি হাসান নামে।
প্রথমবারের মতো এই ব্যান্ডটি বান্দরবান সরকারি কলেজের ৫০ বছর পূর্তি (সুবর্ণ জয়ন্তী) উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে অংশ নেবে।
আগামী ২৬ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় কলেজ ক্যাম্পাসে হাসান ও তার দল সংগীতের মায়াজাল বিস্তার করবেন, যা শিক্ষার্থী-শিক্ষক, প্রাক্তন ছাত্রছাত্রী এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে আগ্রহ সৃষ্টি করেছে।
হাসান ও ‘আর্ক’ ব্যান্ডের সংগীতময় যাত্রা
সৈয়দ হাসানুর রহমান (জন্ম: ১৯ এপ্রিল, ১৯৬৯) বাংলাদেশী সঙ্গীতের এক অনন্য কণ্ঠের অধিকারী। তিনি ‘আর্ক’ ব্যান্ডের প্রতিষ্ঠাতা ও লিড ভোকালিস্ট হিসেবে পরিচিত, যা ১৯৯০-এর দশকের শেষভাগে দেশব্যাপী জনপ্রিয়তা অর্জন করে। ব্যান্ডটির গানগুলো, যেমন ‘বাংলাদেশ’, ‘প্রেমের সমাধি তাজমহল’ এবং ‘যারে যা উড়ে যা’, রক সঙ্গীতের সাথে বাংলা লিরিক্সের অসাধারণ মিশ্রণ ঘটিয়ে শ্রোতাদের মনে স্থায়ী ছাপ ফেলেছে। হাসানের কণ্ঠশক্তি এবং স্টেজ উপস্থাপনা তাকে ‘৯০স-এর সংগীত সেনসেশন’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
ব্যান্ডের সঙ্গীতশিল্পীদের মধ্যে রয়েছেন তুলু (ভোকাল) এবং পঞ্চম (কম্পোজার), যারা বাংলাদেশের রক দৃশ্যকে সমৃদ্ধ করেছে। এই ব্যান্ডের গানগুলো শুধু দেশীয় শ্রোতাদের নয়, প্রবাসী বাঙালিদের মধ্যেও অত্যন্ত জনপ্রিয়।
হাসানের সঙ্গীত জীবন নিয়ে কৌতূহলী অনেকেরই মনে প্রশ্ন জাগে, কারণ তিনি ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে খুব কমই কথা বলেন। তবে তার গানের মাধ্যমে দেশপ্রেম, প্রেম এবং জীবনের দার্শনিকতা ফুটে ওঠে, যা তরুণ প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করে চলেছে।
বান্দরবান সরকারি কলেজের গৌরবময় অধ্যায়
কলেজটি প্রতিষ্ঠিত ১৯৭৫ সালে ৯.৫১ একর জমির উপর। বান্দরবান সরকারি কলেজ পার্বত্য চট্টগ্রামের শিক্ষাক্ষেত্রে এক মাইলফলক।
১৯৮০ সালের মার্চ মাসে জাতীয়করণের মাধ্যমে এটি সরকারি স্বীকৃতি লাভ করে এবং বান্দরবান জেলায় উচ্চশিক্ষার প্রসারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে।
কলেজটি বিজ্ঞান, মানবিক এবং বাণিজ্য বিভাগে হাজারো শিক্ষার্থীকে শিক্ষা প্রদান করে, যার মধ্যে স্থানীয় পাহাড়ি সম্প্রদায়ের ছাত্রছাত্রীরা উল্লেখযোগ্য। ৫০ বছরের এই যাত্রায় কলেজটি শুধু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই নয়, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক কেন্দ্র হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
সুবর্ণ জয়ন্তীর এই অনুষ্ঠানটি কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের মিলনমেলা এবং স্মৃতিকথার আয়োজনের সাথে যুক্ত। রেজিস্ট্রেশনের শেষ তারিখ ছিল আজকের ১০ নভেম্বর, যাতে প্রাক্তন ছাত্রছাত্রীরা অংশগ্রহণ করতে পারেন।
ফেসবুক পোস্টগুলোতে দেখা যায়, অনেক প্রাক্তন শিক্ষার্থী এই অনুষ্ঠানকে ‘গৌরবের উচ্ছ্বাস’ হিসেবে বর্ণনা করছেন এবং হাসানের আগমনকে বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে তুলে ধরছেন।
অনুষ্ঠানের আয়োজন ও হাসানের বার্তা
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২৬ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় কলেজ ক্যাম্পাসে হাসান ও ‘আর্ক’ ব্যান্ডের সদস্যরা লাইভ পারফর্মেন্স দেবেন। এতে ব্যান্ডের হিট গানগুলোর পাশাপাশি বিশেষভাবে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে তৈরি সংগীত পরিবেশিত হবে, যা পাহাড়ি পরিবেশের সাথে মিলেমিশে এক অনন্য অভিজ্ঞতা প্রদান করবে। অনুষ্ঠানে রয়েছে স্মৃতি আলোচনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং মিলনমেলা।
হাসান নিজেই একটি ভিডিও বার্তায় বলেন, “আমরা আর্ক ব্যান্ড আসছি আগামী ২৬ ডিসেম্বর পাহাড় কন্যা বান্দরবানে। দেখা হবে বান্দরবান সরকারি কলেজ ক্যাম্পাসে। দেখা হবে গানে গানে, প্রাণে প্রাণে।” এই বার্তা ফেসবুক এবং অনলাইন মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে, যা অনেককে অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করছে।
সংগীতের মাধ্যমে স্মৃতির উদযাপন
বান্দরবান সরকারি কলেজের এই সুবর্ণ জয়ন্তী শুধু একটি উৎসব নয়, বরং পঞ্চাশ বছরের শিক্ষা-সংস্কৃতির এক সমৃদ্ধ অধ্যায়ের উদযাপন। হাসান ও ‘আর্ক’ ব্যান্ডের অংশগ্রহণ এই অনুষ্ঠানকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলবে, যা পাহাড়ি যুবকদের মধ্যে সঙ্গীতের প্রতি আগ্রহ জাগিয়ে তুলবে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য এটি এক অপূর্ব সুযোগ, যেখানে পাহাড়ের হাওয়ায় মিশে যাবে রকের তাল।






