আসামে বাংলাভাষী মুসলিমদের উচ্ছেদ: শিশু–নারীর আর্তনাদ, গৃহহীন শত শত পরিবার

মানবাধিকার সংগঠন বলছে—“এটি শুধুই উচ্ছেদ নয়, এটি মানবতার লঙ্ঘন”।

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ভারতের আসাম রাজ্যের গোয়ালপাড়া জেলায় রোববার (৯ ন‌ভেম্বর) সকাল থেকে শুরু হয়েছে ব্যাপক উচ্ছেদ অভিযান। রাজ্য সরকারের দাবি, এটি দহিকাটা সংরক্ষিত বনাঞ্চলে ‘বনভূমি দখলমুক্তকরণ’-এর অংশ।

তবে মানবাধিকার সংস্থাগুলোর অভিযোগ—এই অভিযানে টার্গেট করা হয়েছে বাংলাভাষী মুসলিম জনগোষ্ঠীকে।

অভিযানের বিবরণ

গোয়ালপাড়ার দহিকাটা রিজার্ভ ফরেস্টে দুই দিনব্যাপী (৯-১০ নভেম্বর) এই অভিযান চলবে। প্রায় ১,১৪০ বিঘা (১৫৩ হেক্টর বা ৩৭৬ একর) জমি থেকে ৫৮০-৬০০ পরিবার উচ্ছেদ করা হচ্ছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এদের অধিকাংশই বহু বছর ধরে বসবাসরত বাংলাভাষী মুসলিম পরিবার।

অভিযানে মোতায়েন করা হয়েছে এক হাজারের বেশি পুলিশ, বনকর্মী ও ব্ল্যাক কমান্ডো। প্রায় ৪০টি এক্সকাভেটর দিয়ে ঘরবাড়ি ও স্থাপনা ভাঙা হচ্ছে। সরকারি দাবি—অভিযান শান্তিপূর্ণ; তবে স্থানীয়দের মতে, কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে এবং অনেকে ঘর হারিয়ে পথে বসেছেন।

সরকারের অবস্থান

আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা ৭ নভেম্বর ঘোষণা দেন—“বনভূমি রক্ষা ও অবৈধ দখল রোধে অভিযান চলবে। কোনো চাপেই এটি বন্ধ হবে না।” সরকার দাবি করছে, ২০২১ সাল থেকে প্রায় ১.১৯ লাখ বিঘা বনভূমি পুনরুদ্ধার করা হয়েছে এবং এটি ‘জনমিতিক আগ্রাসন’ রোধের প্রচেষ্টা।

সমালোচনা ও উদ্বেগ

মানবাধিকার সংস্থা এবং বিরোধী দলগুলোর অভিযোগ, এই উচ্ছেদ কার্যক্রম আসলে সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক পদক্ষেপ।

কোনো পুনর্বাসনের ব্যবস্থা রাখা হয়নি

অনেকের কাছে বৈধ জমির কাগজ থাকলেও তা উপেক্ষা করা হয়েছে। শিশু ও নারীসহ বহু মানুষ গৃহহীন হ‌য়ে পড়ে‌ছে।

একজন ক্ষতিগ্রস্ত বলেন, “আমরা এখানে দশকের পর দশক ধরে আছি। এখন আমাদের বলা হচ্ছে, আমরা অবৈধ দখলদার।”

সামাজিক প্রতিক্রিয়া

সামাজিক মাধ্যমে #AssamEviction হ্যাশট্যাগে তীব্র প্রতিক্রিয়া চলছে। কেউ বলছেন, ‘বনভূমি রক্ষা হচ্ছে’; আবার কেউ এটিকে ‘সাম্প্রদায়িক নিপীড়ন’ আখ্যা দিচ্ছেন।

আসামের এই উচ্ছেদ অভিযান শুধু বনায়ন বা নিরাপত্তার প্রশ্ন নয়—এটি ভারতের নাগরিকত্ব, অভিবাসন ও সংখ্যালঘু অধিকার নিয়ে দীর্ঘদিনের বিতর্ককে আবার সামনে নিয়ে এসেছে।

পরিস্থিতি উত্তপ্ত, এবং রাজ্য সরকারের পরবর্তী পদক্ষেপ নজরে রাখছে দেশজুড়ে মানবাধিকার সংগঠনগুলো।