আদানি চুক্তি বাতিল হলে ১৭ হাজার কোটি টাকা বাঁচবে!

আদানির সঙ্গে বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় বিদ্যুৎ চুক্তি বাতিলের প্রক্রিয়া চূড়ান্ত পর্যায়ে
টুইট ডেস্ক: ভারতীয় শিল্পগোষ্ঠী আদানির সঙ্গে বাংলাদেশের ১,৬০০ মেগাওয়াট কয়লা-ভিত্তিক বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি (PPA) বাতিলের প্রক্রিয়া এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে বলে সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করেছে। এটি দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় একক বিদ্যুৎ আমদানি চুক্তি, যা ২০১৭ সালে স্বাক্ষরিত হয়েছিল।
বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব মো. হাবিবুর রহমান জানিয়েছেন, চুক্তি বাতিলের প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্র ইতোমধ্যে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হয়েছে এবং অনুমোদন পেলে আদানি পাওয়ারকে আনুষ্ঠানিক নোটিশ পাঠানো হবে।
ঘুষ ও অতিরিক্ত দামের অভিযোগ
যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিস (DOJ) এবং সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (SEC) আদানির বিরুদ্ধে ২৬৫ মিলিয়ন ডলার ঘুষ কেলেঙ্কারির অভিযোগে জরিমানা করেছে। বাংলাদেশে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তদন্তে উঠে এসেছে, আদানি বিদ্যুৎ বিক্রিতে প্রতি ইউনিটে ৪৫ পয়সা অতিরিক্ত দাম নিয়েছে।
অর্থনৈতিক ও জনমতের চাপ
চুক্তি বাতিলের অন্যতম কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে বাড়তি বিদ্যুৎমূল্য ও জনরোষ। বর্তমানে আদানি পাওয়ারের বিল বকেয়া রয়েছে প্রায় ১৭,০০০ কোটি টাকা, যা নিয়ে ছাত্র-জনতা আন্দোলনে ‘আদানি চুক্তি বাতিল’ দাবিটি অন্যতম ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকারের হিসাব অনুযায়ী, চুক্তি বাতিলে বছরে প্রায় ৪,৫০০ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে।
আদানির প্রতিক্রিয়া
আদানি গ্রুপ জানিয়েছে, তারা চুক্তি মেনে চলেছে এবং বাংলাদেশ সরকারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য আদালতে (ICC Arbitration) যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। তাদের দাবি, চুক্তি বাতিল হলে ৫০০ মিলিয়ন ডলার ক্ষতিপূরণ চাওয়া হবে।
সরকারের পাল্টা যুক্তি
বাংলাদেশ পক্ষ বলছে, চুক্তিতে “Corruption Clause” বিদ্যমান — যেখানে ঘুষ প্রমাণিত হলে একতরফাভাবে চুক্তি বাতিলের অধিকার রয়েছে। সেই সঙ্গে আদানির পাওনা বকেয়া অর্থকে “কাউন্টার ক্লেইম” হিসেবে দেখানো হবে।
নতুন বিদ্যুৎ পরিকল্পনা
চুক্তি বাতিলের পর সরকার নেপাল ও ভুটান থেকে মোট ১,৫০০ মেগাওয়াট জলবিদ্যুৎ আমদানির উদ্যোগ নিচ্ছে এবং দেশে ২,০০০ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নের পরিকল্পনা করছে।
সরকারি প্রতিক্রিয়া
বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ এক ভিডিও বার্তায় বলেন, “আদানির সঙ্গে আর এক মিনিটও না। জনগণের টাকা ফেরত আনব।”
পিডিবি চেয়ারম্যানও নিশ্চিত করেছেন যে, ১০ দিনের মধ্যে আনুষ্ঠানিক নোটিশ পাঠানো হবে।
বর্তমান অবস্থা (৬ নভেম্বর বিকেল পর্যন্ত)
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে ফাইল পৌঁছেছে
আইন মন্ত্রণালয়ের চূড়ান্ত ভেটিং চলছে
আদানি পাওয়ারের ঢাকা অফিসে কার্যক্রম স্থগিতের গুঞ্জন
চুক্তি বাতিল হলে এটি শেখ হাসিনা সরকারের সময়ের অন্যতম আলোচিত “আদানি-কাণ্ড”-এর আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি নির্দেশ করবে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাতে নবায়নযোগ্য শক্তির যুগে প্রবেশের এক নতুন অধ্যায় সূচনা করবে।






