গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী প্রথম বছরে এফডিআইয়ে ১৯.১৩% রেকর্ড প্রবৃদ্ধি

গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী প্রথম বছরে বাংলাদেশের এফডিআইয়ে ১৯.১৩% রেকর্ড প্রবৃদ্ধি: অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার প্রমাণ।

টুইট প্রতি‌বেদন: ২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পরবর্তী প্রথম আর্থিক বছরে (এফওয়াই ২০২৪-২৫) বাংলাদেশে বৈদেশিক প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ (এফডিআই) ১৯.১৩% বৃদ্ধি পেয়েছে, যা বিশ্বব্যাঙ্কের তথ্য অনুসারে বিশ্বব্যাপী প্রবণতার সম্পূর্ণ বিপরীত। সাধারণত রাজনৈতিক অস্থিরতার পর এফডিআই হ্রাস পায়, কিন্তু বাংলাদেশ এই ধারা ভেঙে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের আস্থা অর্জন করেছে।

বাংলাদেশ ব্যাঙ্কের তথ্যমতে, নেট এফডিআই ১.৪২ বিলিয়ন ডলার থেকে উন্নীত হয়ে ১.৬৯ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে।

বিশ্বব্যাপী তুলনায় বাংলাদেশের ব্যতিক্রম

বিশ্বব্যাঙ্কের ডাটা বিশ্লেষণে দেখা যায়, গণঅভ্যুত্থান বা রাজনৈতিক অস্থিরতার পরবর্তী বছরে অন্যান্য দেশে এফডিআইয়ের উল্লেখযোগ্য হ্রাস ঘটেছে। উদাহরণস্বরূপ:
শ্রীলঙ্কা (২০২২ অর্থনৈতিক সংকটের পর): এফডিআই ১৯.৪৯% কমেছে।

চিলি (২০১৯ সামাজিক অভ্যুত্থানের পর): ২৫.৬৮% হ্রাস।
সুদান (২০২১ রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর): ২৭.৬০% কমেছে।

ইউক্রেন (২০১৪ বিপ্লবের পর): ৬১.২১% হ্রাস।

মিশর (২০১১ আরব স্প্রিং-এর পর): ১০৭.৫৫% কমেছে।
ইন্দোনেশিয়া (১৯৯৮ অর্থনৈতিক সংকটের পর): ১৬১.৪৯% হ্রাস।

এই প্রবণতার বিপরীতে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা, সরকারি নীতির সঠিকতা এবং বেসরকারি খাতের সক্রিয়তার ফল। প্রথম ত্রৈমাসিকে (জানুয়ারি-মার্চ ২০২৫) এফডিআই ১১৪% বেড়েছে (৮৬৪.৬৩ মিলিয়ন ডলার), এবং প্রথমার্ধে ৬১.৫% প্রবৃদ্ধি (জানুয়ারি-জুন ২০২৫)। তবে দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে সামান্য মন্দা দেখা গেছে, যা পুনরুদ্ধারের অংশ।

বিডা’র নির্বাহী চেয়ারম্যানের মন্তব্য

বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)-এর নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী বলেন, “বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় গুণ হলো শত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও বাউন্স ব্যাক করার অদ্ভুত ক্ষমতা। এই পরিসংখ্যান তার দারুণ একটা প্রতিফলন। সাধারণত গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে বিদেশি বিনিয়োগ প্রচণ্ডভাবে হ্রাস পায়। কিন্তু আমরা দেখছি উল্টা। সঠিক ইকোনমিক পলিসি সেট করা থেকে শুরু করে বাংলাদেশ ব্যাঙ্ক, এনবিআর, ইত্যাদি সংস্থার আন্তরিকতা, আমাদের প্রাইভেট সেক্টরের অদম্য স্পৃহা—সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এটা হয়েছে। আমরা সব সময় বিনিয়োগকারীদের সাহায্য করার আপ্রাণ চেষ্টা করেছি। সব সমস্যার সমাধান অবশ্য হয়নি, কিন্তু সদিচ্ছার কোনো ত্রুটি ছিল না। আমরা শীঘ্রই সারা বছরের একটা আমলনামা (রিপোর্ট কার্ড) প্রকাশ করবো।”

চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা

যদিও এই প্রবৃদ্ধি উত্সাহজনক, তবু নতুন বিনিয়োগের পরিবর্তে পুনর্বিনিয়োগের অংশ বেশি (প্রায় ৭০%)। সরকারের লক্ষ্য: ২০২৫-২৬ সালে এফডিআই আরও বাড়ানো, বিশেষ করে অবকাঠামো, প্রযুক্তি ও সবুজ শক্তিতে।

আন্তর্জাতিক মহলের এই আস্থা বজায় রাখতে নীতিগত সংস্কার অব্যাহত রাখা জরুরি।

সূত্র: সময় নিউজ, দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড, দ্য ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেস