বিএনপির নতুন কৌশল: অন্তর্বর্তী সরকারের মিত্র থেকে নির্বাচনী মঞ্চে প্রস্তুতি?

বিএনপির বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থান: অন্তর্বর্তী সরকারের মিত্র, নির্বাচনের পথে সতর্ক অগ্রযাত্রা।
নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট পার্টি (বিএনপি) বর্তমানে বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে একটি সংবেদনশীল ও পরিবর্তনশীল পর্যায়ে অবস্থান করছে। ১৯৭৮ সালে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের হাতে প্রতিষ্ঠিত দলটি স্বাধীনতা-পরবর্তী বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক ধারার প্রধান বাহক হলেও, ২০২৫ সালের নভেম্বর নাগাদ এটি নতুন এক বাস্তবতায় নিজেদের পুনঃসংগঠনের চেষ্টা করছে।
ঐতিহ্য ও ভাবাদর্শ
বিএনপি তার রাজনৈতিক দর্শনের কেন্দ্রবিন্দুতে রেখেছে “বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ” বা Bangladeshi Nationalism—যা ধর্মীয় সহনশীলতা, জাতীয় সার্বভৌমত্ব ও বাজারভিত্তিক অর্থনীতির পক্ষে অবস্থান নেয়। দলটি দীর্ঘদিন ধরেই ইসলামি মূল্যবোধকে সম্মান জানালেও কট্টরপন্থা পরিহার করে আসছে। দলীয় অর্থনৈতিক নীতিতে রয়েছে বেসরকারিকরণ, ব্যবসায়িক উদারতা ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির বিকাশের ওপর জোর।
বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট
২০২৪ সালের জুলাই বিপ্লবের পর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের অন্যতম প্রধান সমর্থক দল হিসেবে বিএনপি বর্তমানে ক্ষমতার পরোক্ষ অংশীদার। দলটি সরকারের সঙ্গে সহযোগিতায় থাকলেও বারবার নির্বাচনের ত্বরান্বিত আয়োজনের দাবি জানাচ্ছে।
সাম্প্রতিক এক সংবাদ সম্মেলনে (২ নভেম্বর ২০২৫) বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সতর্ক করে বলেন, “দেশের শত্রুরা নতুন অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টায় লিপ্ত”—যার ইঙ্গিত আওয়ামী লীগের অবশিষ্ট প্রভাবমণ্ডলীর দিকে।
নির্বাচনী প্রস্তুতি ও কর্মসূচি
১৩তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি মাঠে সক্রিয়। দলটি ২০২৪ সালের জুলাই বিপ্লবকে “জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস” হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে এবং ২ নভেম্বর থেকে শুরু হয়েছে ১০ দিনের কর্মসূচি। পাশাপাশি নতুন দলগুলো—বিশেষত ছাত্রনেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টি (এনসিপি)—বিএনপির ভোটব্যাংকে প্রতিযোগিতামূলক চাপ সৃষ্টি করছে।
চ্যালেঞ্জ ও সমালোচনা
দলীয় পর্যবেক্ষকরা বলছেন, বিএনপি বর্তমানে “অভ্যন্তরীণ নেতৃত্ব সংকট”-এর মুখোমুখি। চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার অসুস্থতা ও নিষ্ক্রিয় ভূমিকার কারণে নেতৃত্বের ঘাটতি প্রকট হচ্ছে।
২০২৫ সালের জুন মাসে পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে—দলের জনপ্রিয়তা হ্রাস পাচ্ছে, কারণ তরুণ ভোটারদের বড় অংশ নতুন রাজনৈতিক বিকল্পের দিকে ঝুঁকছে।
অন্যদিকে, জামায়াত-ই-ইসলামীর সঙ্গে নতুন করে ঘনিষ্ঠতা দলটিকে “কট্টরপন্থী মিত্র” হিসেবে সমালোচনার মুখে ফেলতে পারে।
বিদেশনীতি ও কৌশলগত ভারসাম্য
বিএনপি চীন, ভারত ও পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখার চেষ্টা করছে। গত দুই বছরে দলটির তিনটি প্রতিনিধি দল চীন সফর করেছে। বিএনপি দাবি করছে—“নতুন বাংলাদেশের” বিদেশনীতি যেন “জাতীয় স্বার্থে নিরপেক্ষ ভারসাম্য” রক্ষা করে।
ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, বিএনপির ভবিষ্যৎ নির্ভর করবে এর সাংগঠনিক সংস্কার ও তরুণ নেতৃত্বের অন্তর্ভুক্তির ওপর। দলটি যদি সংস্কারকেন্দ্রিক পথে এগোয় এবং গণমানুষের নতুন প্রত্যাশা বুঝতে পারে, তবে পুনরায় প্রধানধারায় ফিরে আসা সম্ভব।
তবে বর্তমান বাস্তবতায় বিএনপি “পুরনো দলের ভাবমূর্তি” থেকে বের হয়ে নতুন রাজনৈতিক প্রজন্মকে আকৃষ্ট করতে পারছে না বলেই অনেকের অভিমত।






