১.৮৬ লাখ দিয়ে ফোন, পেলেন মার্বেল টাইলস: চাঞ্চল্যকর ঘটনা!

অনলাইনে ১.৮৬ লাখ টাকার ফোন অর্ডার, অতঃপর… টাইলসের ধাক্কা!
বিশ্ব ডেস্ক: দীপাবলির উৎসবের ছোঁয়ায় মন ভরিয়ে এক তরুণ সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারের স্বপ্ন ভেঙে গেছে। বেঙ্গালুরুর প্রেমানন্দ নামের এই ৪৩ বছর বয়সী ব্যক্তি অ্যামাজনের মাধ্যমে ১ লক্ষ ৮৬ হাজার ৯৯৯ টাকার স্যামসাং গ্যালাক্সি জেড ফোল্ড ৭ ফোন অর্ডার করেন। ক্রেডিট কার্ডে পুরো অর্থ পরিশোধ করে অপেক্ষায় থাকেন।
কিন্তু ডেলিভারির পর বক্স খুলে যা পান, তা ফোন নয়—দুটি মার্বেল টাইলস! এই ঘটনা শুধু একজনের নয়, ই-কমার্স কেনাকাটার নিরাপত্তা নিয়ে জাতীয় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে এসেছে। ভাইরাল ভিডিওতে ধরা পড়া এই প্রতারণার তদন্ত চলছে, এবং অ্যামাজন ইতোমধ্যে পুরো টাকা ফেরত দিয়েছে।
প্রেমানন্দের ঘটনা ১৪ অক্টোবর, ২০২৫ শুরু হয়। দীপাবলির উপলক্ষে তিনি অ্যামাজন অ্যাপে স্যামসাং গ্যালাক্সি জেড ফোল্ড ৭ ফোনটি অর্ডার করেন, যা ভারতে ২৫ জুলাই, ২০২৫ থেকে বিক্রয় শুরু হয়েছে। এই ফোনটি ফোল্ডেবল ডিজাইন, কাটিং-এজ স্পেকস এবং প্রফেশনাল ইউজারদের জন্য আদর্শ, যার দাম ১.৮৬ লাখ টাকারও বেশি। প্রেমানন্দ ক্রেডিট কার্ডে পুরো অর্থ পরিশোধ করে ১৯ অক্টোবর ডেলিভারির অপেক্ষায় থাকেন—যা দীপাবলির একদিন আগে পৌঁছায়। ক্যামেরা চালু করে আনবক্সিং করেন, যাতে প্রমাণ থাকে। কিন্তু বক্স খুলতেই তাজ্জব—ফোনের বদলে দুটি সাধারণ মার্বেল টাইলস! এই ‘বেইট অ্যান্ড সুইচ’ প্রতারণায় প্রেমানন্দের স্বপ্ন ভেঙে যায়, এবং তিনি অবিলম্বে অ্যামাজনের সাথে যোগাযোগ করেন।
ভাইরাল ভিডিও এবং সামাজিক প্রতিক্রিয়া
ঘটনার ভিডিওটি ‘কর্নাটকা পোর্টফোলিও’ নামক একটি এক্স (পূর্বতন টুইটার) হ্যান্ডেল থেকে পোস্ট হয়, যা ইতোমধ্যে সাড়ে সাত লক্ষের বেশি ভিউ পেয়েছে। ভিডিওতে প্রেমানন্দের হতাশ মুখমণ্ডল এবং টাইলসের ছবি স্পষ্টভাবে ধরা পড়েছে, যা নেটিজেনদের মধ্যে ক্ষোভের ঢেউ তুলেছে। লাইক, কমেন্ট এবং শেয়ারের বন্যা বয়ে গেছে—অনেকে বলছেন, “ই-কমার্সের নিরাপত্তা কোথায়?” এবং “অ্যামাজনকে দায়ী করতে হবে।” এই ঘটনা শুধু প্রেমানন্দের নয়, ভারতে ই-কমার্সের বৃদ্ধির সাথে প্রতারণার ঝুঁকিকে তুলে ধরেছে। ইন্ডিয়ান সাইবার ক্রাইম কো-অর্ডিনেশন সেন্টার (I4C)-এর তথ্য অনুসারে, ২০২৫ সালের প্রথমার্ধে ভারতে ৭,০০০ কোটি টাকার সাইবার ফ্রড হয়েছে, যার মধ্যে ডেলিভারি স্ক্যামের অংশ উল্লেখযোগ্য।
পুলিশ তদন্ত এবং অ্যামাজনের পদক্ষেপ
ঘটনার পর প্রেমানন্দ জাতীয় সাইবার ক্রাইম রিপোর্টিং পোর্টাল এবং বেঙ্গালুরু পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশ একটি FIR (ফার্স্ট ইনফরমেশন রিপোর্ট) রেজিস্টার করে তদন্ত শুরু করে, যা ‘বেইট অ্যান্ড সুইচ’ ফ্রডের অধীনে পড়ে। তদন্তে জানা গেছে, এই ধরনের প্রতারণায় ডেলিভারি পার্টনার বা থার্ড-পার্টি সাপ্লায়ার জড়িত থাকতে পারে। অ্যামাজনের তরফে ইতোমধ্যে পুরো ১.৮৬ লাখ টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে, এবং তারা বলেছে, “আমরা গ্রাহকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সব পদক্ষেপ নিচ্ছি।” কিন্তু পুলিশের তদন্ত চলছে, এবং এর ফলে আরও কয়েকজন গ্রাহকের অনুরূপ অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনা অ্যামাজনের ভারতীয় অপারেশনকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে, যেখানে ২০২৫ সালে ই-কমার্স সেলস ৫০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে।
ই-কমার্স ফ্রডের বৃহত্তর প্রেক্ষাপট
ভারতে ই-কমার্সের বুমের সাথে ফ্রডের ঘটনাও বেড়েছে। ২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসে I4C-এর তথ্য অনুসারে, ৭,০০০ কোটি টাকার সাইবার ফ্রড হয়েছে, যার মধ্যে ডেলিভারি স্ক্যাম ২৫%। এই ধরনের প্রতারণায় সাধারণত ফোনের বদলে ইট, টাইলস বা পুরনো জিনিস পাঠানো হয়, যা ‘রিপ্লেসমেন্ট ফ্রড’ নামে পরিচিত। অ্যামাজনের মতো প্ল্যাটফর্মগুলোতে থার্ড-পার্টি সেলারদের কারণে এই সমস্যা বাড়ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গ্রাহকরা আনবক্সিং ভিডিও রেকর্ড করুন, ট্র্যাকিং চেক করুন এবং অর্থ পরিশোধের আগে সেলার রিভিউ দেখুন। সরকার ২০২৫ সালে ই-কমার্স রেগুলেশন বাড়িয়েছে, কিন্তু ফ্রডের হার ৩০% বেড়েছে।
সতর্কতা এবং প্রতিরোধের উপায়
আনবক্সিং রেকর্ড করুন: ডেলিভারি নেওয়ার সময় ক্যামেরা চালু রাখুন।
পেমেন্ট মোড: কোড অন ডেলিভারি (COD) বেছে নিন, অগ্রিম পেমেন্ট এড়ান।
সেলার চেক: থার্ড-পার্টি সেলারের রেটিং এবং রিভিউ দেখুন।
অভিযোগ: ফ্রড হলে I4C পোর্টাল বা পুলিশে রিপোর্ট করুন।
প্রেমানন্দের মতো ঘটনা ই-কমার্সের আনন্দকে ছায়া ফেলছে। অ্যামাজনের মতো জায়ান্ট কোম্পানিগুলোকে এখন আরও দায়িত্বশীল হতে হবে। আরও তথ্যের জন্য অ্যামাজনের সাপোর্ট বা স্থানীয় পুলিশের সাথে যোগাযোগ করুন।






