বাহরাইনে সি-এসআইপিএ বৈঠক: যুক্তরাজ্যের অংশগ্রহণ

সি-এসআইপিএ বার্ষিক বৈঠক বাহরাইনে: যুক্তরাজ্যের যোগদানে ত্রিপক্ষীয় নিরাপত্তা জোটের নতুন অধ্যায়।

বিশ্ব ডেস্ক: বাহরাইনে অনুষ্ঠিত হলো কমপ্রিহেনসিভ সিকিউরিটি ইন্টিগ্রেশন অ্যান্ড প্রসপারিটি অ্যাগ্রিমেন্ট। সংক্ষেপে সি-এসআইপিএ (C-SIPA)-এর ডিফেন্স ওয়ার্কিং গ্রুপের (DWG) বার্ষিক বৈঠক।

এতে অংশ নেন বাহরাইন, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের উচ্চপদস্থ সামরিক প্রতিনিধি ও নিরাপত্তা উপদেষ্টারা।

এই বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয় আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা সম্মেলন IISS মানামা ডায়ালগ ২০২৫-এর পাশাপাশি। এতে সভাপতিত্ব করেন বাহরাইনের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ও সুপ্রিম ডিফেন্স কাউন্সিলের সেক্রেটারি জেনারেল এইচএইচ শেখ নাসের বিন হামাদ আল খলিফা।

যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন ইউএস সেন্ট্রাল কমান্ড (CENTCOM)-এর কমান্ডার অ্যাডমিরাল ব্র্যাড কুপার, এবং যুক্তরাজ্যের পক্ষ থেকে ডিফেন্স স্টাফের চিফ এয়ার চিফ মার্শাল স্যার রিচার্ড নাইটন।

সি-এসআইপি কি?

২০২৩ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর ওয়াশিংটনে যুক্তরাষ্ট্র ও বাহরাইনের মধ্যে স্বাক্ষরিত হয় এই চুক্তি। বাহরাইনের ক্রাউন প্রিন্স সালমান বিন হামাদ আল খলিফা এবং যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন এতে স্বাক্ষর করেন।

চুক্তির মূল লক্ষ্য হলো প্রতিরক্ষা, নিরাপত্তা, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ খাতে পারস্পরিক সহযোগিতা জোরদার করা এবং মধ্যপ্রাচ্যে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি নিশ্চিত করা।

২০২৪ সালের ডিসেম্বরে যুক্তরাজ্য এই চুক্তিতে যোগদানের প্রোটোকলে স্বাক্ষর করে, যা ২০২৫ সালের মাঝামাঝি আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যকর হয়। এর ফলে সি-এসআইপিএ একটি ত্রিপক্ষীয় জোটে রূপ নেয়।

সভায় আলোচনার প্রধান বিষয়সমূহ

যুক্তরাজ্যের যোগদানকে স্বাগত জানানো হয়, এবং বলা হয় এটি আঞ্চলিক প্রতিরোধ ক্ষমতা ও নিরাপত্তা সহযোগিতা আরও শক্তিশালী করবে।

আর্টিকেল II অনুযায়ী, কোনো সদস্য রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব বা ভূখণ্ডে হামলাকে ‘গুরুতর উদ্বেগ’ হিসেবে বিবেচনা করার সিদ্ধান্ত পুনর্ব্যক্ত করা হয়।

আঞ্চলিক হুমকি, বিশেষ করে ইরান-সমর্থিত গোষ্ঠী ও সাইবার নিরাপত্তা ঝুঁকি মোকাবিলায় যৌথ পদক্ষেপের ওপর জোর দেওয়া হয়।

ডিফেন্স টেকনোলজি, সামরিক প্রশিক্ষণ ও গোয়েন্দা সহযোগিতা বৃদ্ধি সংক্রান্ত রোডম্যাপ পর্যালোচনা করা হয়।

অর্থনৈতিকভাবে, বাহরাইন ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ১৭ বিলিয়ন ডলারের প্রতিরক্ষা ও সাইবার বিনিয়োগ আকর্ষণ করেছে—যা ভবিষ্যতে আরও সম্প্রসারিত হবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।

সভায় অংশগ্রহণকারীরা

বাহরাইন: এইচএইচ শেখ নাসের বিন হামাদ আল খলিফা।

যুক্তরাষ্ট্র: অ্যাডমিরাল ব্র্যাড কুপার (CENTCOM কমান্ডার)।

যুক্তরাজ্য: এয়ার চিফ মার্শাল স্যার রিচার্ড নাইটন।

কৌশলগত ও আঞ্চলিক গুরুত্ব

এই বৈঠককে মধ্যপ্রাচ্যের সমষ্টিগত নিরাপত্তার জন্য একটি “কৌশলগত মাইলফলক” হিসেবে দেখা হচ্ছে। ত্রিপক্ষীয় সহযোগিতার মাধ্যমে বাহ্যিক হুমকি মোকাবিলা, আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা রক্ষা এবং ভবিষ্যতে আরও GCC সদস্য রাষ্ট্রের অংশগ্রহণের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা হয়।

সভাটি এমন সময়ে অনুষ্ঠিত হয়, যখন বাহরাইনে IISS মানামা ডায়ালগ ২০২৫-এ ক্রাউন প্রিন্স সালমান বিন হামাদ আল খলিফা যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের প্রতিনিধিদের সাথেও পৃথক বৈঠক করেন।

CENTCOM-এর অফিসিয়াল X (টুইটার) অ্যাকাউন্টে সভার ছবি প্রকাশিত হয়েছে, যেখানে তিন দেশের প্রতিনিধিদের যৌথ আলোচনায় দেখা যায়। বাহরাইন নিউজ এজেন্সি (BNA) ও যুক্তরাষ্ট্র পররাষ্ট্র দপ্তরও বৈঠকটির আনুষ্ঠানিক বিবৃতি প্রকাশ করেছে।

বাহরাইনে অনুষ্ঠিত এই সভা সি-এসআইপিএ চুক্তিকে আরও শক্তিশালী করেছে। যুক্তরাজ্যের যোগদানের মাধ্যমে এটি একটি ত্রিপক্ষীয় নিরাপত্তা ও সহযোগিতার প্ল্যাটফর্মে পরিণত হয়েছে—যা মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি, স্থিতিশীলতা ও পারস্পরিক সমৃদ্ধির নতুন দিগন্ত খুলে দিচ্ছে।

সূত্র: USCENTCOM অফিসিয়াল প্রেস রিলিজ, যুক্তরাষ্ট্র পররাষ্ট্র দপ্তর,বাহরাইন নিউজ এজেন্সি (BNA), CENTCOM X পোস্ট।