প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে নির্বাচন প্রস্তুতি বৈঠক

নির্বাচনের প্রস্তুতি: প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে যমুনায় গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক, ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের পথে এগিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত।
ঢাকা প্রতিনিধি: বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে বুধবার (২৯ অক্টোবর) রাষ্ট্রীয় অতিথিগৃহ জমুনায় নির্বাচন প্রস্তুতির উপর একটি উচ্চপর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই বৈঠকে নির্বাচন কমিশন, আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখা, ভোটার তালিকা সংশোধন এবং রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সমন্বয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
প্রধান উপদেষ্টা জোর দিয়ে বলেন, ফেব্রুয়ারি ২০২৬-এ একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া পুনরুদ্ধার করতে হবে।
রাষ্ট্রীয় অতিথিগৃহ যমুনা, যা প্রধান উপদেষ্টার অফিসিয়াল রেসিডেন্স হিসেবে কাজ করছে, এই বৈঠকের আয়োজনস্থল হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে। বৈঠকে নির্বাচন কমিশনের সদস্যরা, উপদেষ্টা পরিষদের সংশ্লিষ্ট সদস্য, আইনশৃঙ্খলা কর্মকর্তা এবং রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস বৈঠকে বলেন, “জুলাইয়ের জাতীয় ঘোষণাপত্র ২০২৫-এর বাস্তবায়নের সুপারিশসমূহ অনুসারে জাতীয় ঐক্য কমিশনের প্রতিবেদন আমরা গ্রহণ করেছি। এটি নির্বাচনের পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।” তিনি আরও জানান, নির্বাচনের সময়সূচী ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে ঘোষণা করা হবে এবং নভেম্বরের শেষ নাগাদ প্রধান প্রস্তুতি সম্পন্ন হবে।
এই বৈঠকের প্রেক্ষাপটে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে চলমান সংলাপের কথা উল্লেখযোগ্য।
সম্প্রতি বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী এবং ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টি (এনসিপি)-এর সঙ্গে আলোচনায় নির্বাচনের প্রস্তুতি, পুলিশের স্থানান্তর এবং নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করার বিষয়ে ইতিবাচক ফলাফল পাওয়া গেছে। বিএনপির সেক্রেটারি জেনারেল মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধিদলের সঙ্গে গতকালের বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা বলেছিলেন, “আমরা যা প্রয়োজনীয় তা করব যাতে শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত হয়।” একইভাবে, জামায়াত এবং এনসিপির সঙ্গে আলোচনায় রাজনৈতিক অংশগ্রহণ এবং নির্বাচনী সংস্কারের উপর জোর দেওয়া হয়েছে।
তবে, নির্বাচনের পথে কিছু চ্যালেঞ্জও উঠে এসেছে। জাতীয় ঐক্য কমিশনের সুপারিশের মধ্যে নির্বাচনের আগে রেফারেন্ডামের প্রস্তাব নিয়ে বিতর্ক চলছে, যা নির্বাচনের সময়সূচীকে প্রভাবিত করতে পারে। বিএনপির স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, “কমিশনের সুপারিশগুলো সরকারের সমর্থন পেলেও, এটি নির্বাচনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।” এছাড়া, আইনশৃঙ্খলা এবং ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজ ত্বরান্বিত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা জানিয়েছেন, পুলিশ এবং নির্বাচন কর্মকর্তাদের স্থানান্তর তার সরাসরি তত্ত্বাবধানে হবে।
এই বৈঠকের পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশনের কর্মপরিকল্পনা অনুসারে, নভেম্বরের মধ্যে ভোটার তালিকা প্রকাশ এবং ডিসেম্বরে সময়সূচী ঘোষণার লক্ষ্য রাখা হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জুলাইয়ের ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পর গঠিত হয়েছে এবং তার প্রধান লক্ষ্য হলো গণতান্ত্রিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা। বৈঠকের ফটোগুলো প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে প্রকাশ করা হয়েছে, যাতে প্রধান উপদেষ্টা এবং উপস্থিত কর্মকর্তাদের অংশগ্রহণের ছবি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
এই উদ্যোগগুলোর মাধ্যমে বাংলাদেশে একটি স্বচ্ছ নির্বাচনের আশা জাগছে, যা দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যতের জন্য মাইলফলক হয়ে উঠবে। রাজনৈতিক দলগুলো এবং সরকারের মধ্যে চলমান সংলাপ এই প্রক্রিয়াকে আরও শক্তিশালী করবে বলে আশা করা হচ্ছে।







