বার্মাছড়িতে ইউপিডিএফের রাজনৈতিক চাপ: সরকারের নিষ্ক্রিয়তা ঘিরে বিতর্ক

খাগড়াছড়ির বার্মাছড়িতে সেনা ক্যাম্প নিয়ে উত্তেজনা: ইউপিডিএফের প্রতিবাদ ও সেনাবাহিনীর পদক্ষেপ প্রত্যাহার!
টুইট প্রতিবেদক: পার্বত্য চট্টগ্রামের খাগড়াছড়ি জেলার লক্ষ্মীছড়ি উপজেলার বার্মাছড়ি এলাকায় সেনাবাহিনীর অস্থায়ী ক্যাম্প স্থাপনের প্রচেষ্টা জাতিগত উত্তেজনা এবং প্রতিবাদের জন্ম দিয়েছে। ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)-সমর্থিত স্থানীয়রা এটিকে ধর্মীয় বিহারের জমি দখলের চেষ্টা বলে অভিহিত করে বিক্ষোভ চালিয়েছে, যখন সেনাবাহিনী এটিকে নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের জন্য একটি সাধারণ চেকপয়েন্ট বলে দাবি করেছে।
সাম্প্রতিক তথ্য অনুসারে, সেনাবাহিনী এই পরিকল্পনা থেকে সরে এসেছে, কিন্তু ওই অঞ্চলে সশস্ত্র গোষ্ঠীর কার্যকলাপ নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, অক্টোবরের মাঝামাঝি সময় থেকে সেনাবাহিনী বার্মাছড়ির আর্য কল্যাণ বনবিহারের অশিল্প এলাকায় একটি অস্থায়ী নিরাপত্তা পয়েন্ট স্থাপনের উদ্যোগ নেয়। এটি ১৯৩৪ সালের কলকাতা গেজেট অনুসারে রাষ্ট্রীয় খাস জমি হিসেবে চিহ্নিত, যা বনভূমি হিসেবে সংরক্ষিত।
তবে ইউপিডিএফ-সমর্থিত গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের নেতৃত্বে স্থানীয়রা দাবি করেছে যে এটি বিহারের সম্পত্তি এবং ‘ধর্মীয় অস্পর্শ্যতা’ লঙ্ঘন করছে। গত ২৪ অক্টোবর শুক্রবার সকালে বার্মাছড়ি বাজারে বিক্ষোভ ঘোষণা করা হয়, যাতে নারী-শিশুসহ শতাধিক লোক অংশ নিয়েছে।
স্থানীয় সূত্র অনুসারে, সেনারা একটি গ্রামবাসীর বাড়ি নির্মাণস্থলীয় জায়গায় হেলিপ্যাডের চিহ্ন দিয়ে কাজ শুরু করেছিল, যা ‘জমি দখল’ হিসেবে দেখা হয়েছে। এর ফলে এলাকায় ‘মানব ঢাল’ গঠন করে প্রতিরোধ চলেছে, এবং রামগড়ে পোস্টারিংয়ের মাধ্যমে প্রতিবাদ ছড়িয়ে পড়েছে।
সেনাবাহিনীর অবস্থান ও প্রত্যাহার
সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এটি কোনো বড় ক্যাম্প নয়, বরং ৪-৫ জন সৈন্যের একটি ছোট চেকপয়েন্ট, যা স্থানীয় নিরাপত্তা এবং সশস্ত্র গোষ্ঠীর কার্যকলাপ রোধের জন্য।
একটি সাম্প্রতিক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ইউপিডিএফ এই ঘটনাকে ‘জাতিগত দমনমূলক’ বলে প্রোপাগান্ডা ছড়াচ্ছে, যা জাতীয় সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে।
২৭ অক্টোবরের আইএসপিআর (ইন্টার সার্ভিসেস পাবলিক রিলেশনস) জানিয়েছে, উত্তেজনা এড়াতে পরিকল্পনা থেকে সরে আসা হয়েছে। এর আগে ১৮ অক্টোবর খিরাম সেনা ক্যাম্প থেকে ২০ সদস্যের দল এসে পরিদর্শন করেছিল।
খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকার বলেন, “ডকুমেন্টস অনুসারে জমিটি খাস, এবং আমরা সমাধানের চেষ্টা করছি। কয়েকদিনের মধ্যে ফল জানা যাবে।” নির্বাহী অফিসার তাহমিনা আফরোজও নিশ্চিত করেছেন যে রাষ্ট্রীয় স্বার্থ রক্ষায় কাজ চলছে।
ইউপিডিএফের ভূমিকা ও সাম্প্রতিক অভিযান
ইউপিডিএফ এই ঘটনাকে ‘সামরিক দখলদারিত্ব’ বলে চিহ্নিত করে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার চালিয়েছে। সংগঠনের সমর্থকরা দাবি করেছে যে এটি শান্তিচুক্তির লঙ্ঘন এবং আদিবাসী অধিকারের উপর আঘাত।
তবে সেনাবাহিনী অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে পানছড়ি এলাকায় ইউপিডিএফের গোপন আস্তানায় অভিযান চালিয়ে পিস্তল, গোলাবারুদ, ব্যানার এবং ওয়াকি-টকি চার্জার উদ্ধার করেছে।
আরও উদ্বেগজনক যে, গোয়েন্দা সূত্র জানায় রাংঙ্গামাটির সাজেক এলাকায় ভারত-সীমান্তবর্তী নাহাবা থেকে ইউপিডিএফের জন্য ৩০ হাজারের বেশি গোলাবারুদসহ ২৩টি অস্ত্রের কনসাইনমেন্ট প্রবেশের অপেক্ষায়। এতে ১৩৫ সদস্যের সশস্ত্র দল প্রস্তুত, এবং পিসিজেএসএস (পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি)-এর সাথে সংঘর্ষ ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। এছাড়া, অস্ত্র চোরাচালানের অভিযোগে সেনা মোতায়েন বেড়েছে।
আসন্ন ঝুঁকি ও বিশ্লেষণ
২৯ অক্টোবর বনবিহারে ‘মহাসংঘদান’ অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি চলছে, যাতে উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমার উপস্থিতির প্রচার সত্ত্বেও প্রশাসনের অনুমোদন নেই। এতে উত্তেজনা বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা সতর্ক করেছেন যে, ইউপিডিএফের ‘অঘোষিত প্রশাসনিক’ প্রভাব এবং সরকারের নীরবতা রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণকে দুর্বল করতে পারে। পূর্ব তিমুর বা দক্ষিণ সুদানের মতো আন্তর্জাতিক উদাহরণ তুলে ধরা হয়েছে যে, সামরিক দুর্বলতা বিচ্ছিন্নতাবাদকে উস্কে দেয়।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষ থেকে স্পষ্ট নির্দেশনার অভাবে সেনাবাহিনী অপেক্ষমাণ, যা পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলেছে। স্থানীয়রা বলছেন, এলাকায় আতঙ্কের পরিবেশ বিরাজ করছে। বিশেষজ্ঞরা গোয়েন্দা-সামরিক সমন্বয়ের পরামর্শ দিচ্ছেন যাতে সংকট এড়ানো যায়।
পার্বত্য চট্টগ্রামে ১৯৯৭-এর শান্তিচুক্তির পরও সংঘাতের ধারা অব্যাহত, এবং এই ঘটনা সেই চক্রকে নতুন করে জাগিয়ে তুলতে পারে।






