অনিয়মের অভিযোগে আল-আরাফাহ ব্যাংকের এমডিকে অব্যাহতি

বাধ্যতামূলক ছুটির পর অব্যাহতি, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন।
টুইট প্রতিবেদক: বেসরকারি খাতের শীর্ষস্থানীয় ইসলামী ব্যাংকগুলোর একটি, আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ফরমান আর চৌধুরীকে চাকরি থেকে অপসারণ করা হয়েছে।
সোমবার (২৭ অক্টোবর, ২০২৫) বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদনের পর ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করে। গত এপ্রিল মাস থেকে তিনি বাধ্যতামূলক ছুটিতে ছিলেন, যা অর্থ তছরুপ ও অনিয়মের অভিযোগের সঙ্গে জড়িত।
এই ঘটনা ব্যাংক খাতে চলমান সংস্কার প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে, যা সাম্প্রতিক সরকার পতনের পর তীব্রতর হয়েছে।
জানা গেছে, ফরমান আর চৌধুরীকে গত ১৩ এপ্রিল ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের বৈঠকে তিন মাসের বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো হয়। এর সঙ্গে ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) ও প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা (সিএফও) মোহাম্মদ নাদিম, ডিএমডি ও তথ্য প্রযুক্তি বিভাগের প্রধান আমিনুল ইসলাম ভূঁইয়া এবং ট্রেজারি বিভাগের প্রধান মোহাম্মদ আব্দুর রহমানকেও একইভাবে ছুটিতে পাঠানো হয়।
অভিযোগের মূলে ছিল এজেন্ট ব্যাংকিং বিভাগ থেকে অর্থ তছরুপের বিষয়। এছাড়া, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাম্প্রতিক পরিদর্শনে ফরমান আর চৌধুরী ও মোহাম্মদ নাদিমের বিরুদ্ধে প্রণোদনা বোনাসের নামে অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার অভিযোগ ওঠে, যা পরে প্রায় ৫৪ লাখ টাকা ফেরত দেওয়া হলেও তদন্তের সূত্রে আরও অনিয়মের প্রমাণ পাওয়া যায়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদনপ্রাপ্ত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ফরমান আর চৌধুরীকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বলেন, “পর্ষদের সিদ্ধান্তে কেন্দ্রীয় ব্যাংক অনুমোদন দিয়েছে, যা ব্যাংক খাতের স্বচ্ছতা ও সংস্কারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।” এরপর ব্যাংকের নতুন এমডি নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হবে বলে জানা গেছে।
ফরমান আর চৌধুরী ২০১৮ সালের ১ অক্টোবর থেকে আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের এমডি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। ২০২১ সালে দ্বিতীয় মেয়াদে পুনর্নিয়োগ পাওয়া সত্ত্বেও, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে বদল এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তীব্র পরিদর্শনের ফলে এই অপসারণ ঘটেছে। তার আগে তিনি শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকে পাঁচ বছর এবং ওয়ান ব্যাংকে ছয় বছর এমডি হিসেবে কাজ করেছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ থেকে এমবিএ ডিগ্রিধারী চৌধুরী ১৯৮৬ সালে আমেরিকান এক্সপ্রেস ব্যাংকে কর্মজীবন শুরু করেন এবং ব্যাংকিং অপারেশন, ক্রেডিট ও মার্কেটিংয়ে দীর্ঘ অভিজ্ঞতা অর্জন করেন।
এই অপসারণের প্রেক্ষাপটে ব্যাংক খাতের সামগ্রিক পরিস্থিতি উল্লেখযোগ্য। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর বাংলাদেশ ব্যাংক ১৫টি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করে, যার মধ্যে আল-আরাফাহও ছিল। ৩ সেপ্টেম্বর ব্যাংকটির পুরনো পর্ষদ বাতিল করে নতুন পর্ষদ গঠিত হয়, যা বিতর্কিত ব্যবসায়ী এস আলমের দখল থেকে মুক্তি পায়। এর ফলে চলতি সময়ে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো ব্যাংক এমডিদের সংখ্যা সাত জনে পৌঁছেছে, যার মধ্যে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের এমডি মুহাম্মদ মুনিরুল মওলাও রয়েছেন।
ব্যাংকিং খাতের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরনের পদক্ষেপ ব্যাংকগুলোতে জালিয়াতি ও আর্থিক অনিয়ম রোধে সহায়ক। একজন অর্থনীতিবিদ বলেন, “সংস্কারের এই প্রক্রিয়া ব্যাংক খাতকে আরও শক্তিশালী করবে, তবে নতুন নিয়োগে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে।” ফরমান আর চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার সাড়া পাওয়া যায়নি। ব্যাংকের চেয়ারম্যান খাজা শাহরিয়ারও এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি।
আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক ১৯৯৫ সালে প্রতিষ্ঠিত এবং বর্তমানে ২২৬টি শাখা ও ৭৬টি উপশাখা নিয়ে কার্যকর। এটি ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে নিবন্ধিত।
এই অপসারণ ব্যাংকের গ্রাহক ও শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে, যা সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাংক খাতের অস্থিরতার সঙ্গে যুক্ত।






