রাজশাহী বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীদের ঢাকায় ডাক!

রাজশাহীতে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীদের ঢাকায় ডাক: ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি চূড়ান্ত পর্যায়ে।
বদিউল আলম লিংকন: আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) রাজশাহী জেলা ও মহানগর ইউনিটের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের ঢাকায় ডেকেছে। এই উদ্যোগের মূল লক্ষ্য হলো দলীয় হাইকমান্ডের সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে শক্তিশালী ও গ্রহণযোগ্য প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা প্রস্তুত করা।
রাজশাহীর ছয়টি আসনের (রাজশাহী-১ থেকে ৬) জন্য প্রায় ৫০ থেকে ৬০ জন প্রার্থীকে এই সাক্ষাৎকারে অংশ নিতে ডাকা হয়েছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সিদ্ধান্ত অনুসারে এই প্রক্রিয়া পরিচালিত হচ্ছে স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদের নেতৃত্বে। তিনি জানিয়েছেন, “প্রতি আসনে একাধিক যোগ্য প্রার্থী রয়েছেন। আলোচনা ও সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে চূড়ান্ত মনোনয়ন দেওয়া হবে।” তাঁর মতে, এই মাসের মধ্যেই দেশের ২০০টি আসনে একক প্রার্থী চূড়ান্ত করা হবে, যাতে তারা নভেম্বরের শুরু থেকেই মাঠে নামতে পারেন।
ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার পর থেকেই বিএনপি নির্বাচনী প্রস্তুতি জোরদার করেছে। জরিপ, সাংগঠনিক মূল্যায়ন ও স্থানীয় নেতাদের মতামতের ভিত্তিতে সম্ভাব্য প্রার্থীদের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। বিশেষ করে রাজশাহী বিভাগে এই প্রক্রিয়া আরও সক্রিয়, কারণ এখানে বিএনপির ঐতিহাসিক ভিত্তি তুলনামূলকভাবে শক্তিশালী।
তবে মনোনয়ন দৌড়ে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বও দেখা দিয়েছে। রাজশাহীর ছয়টি আসনের মধ্যে অন্তত চারটিতে (রাজশাহী-১, ৪, ৫ ও ৬) প্রার্থীদের অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষ, হামলা ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চরিত্রহননের ঘটনা ঘটেছে। এতে এ পর্যন্ত ৩ জন নিহত হয়েছেন— গণিউল হক, নেকশার আলী এবং হাসিবুল ইসলাম। স্থানীয় নেতারা আশঙ্কা করছেন, এ ধরনের দ্বন্দ্ব দলের ভাবমূর্তি ও নির্বাচনী প্রস্তুতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডন থেকে পুরো প্রক্রিয়া তত্ত্বাবধান করছেন। তাঁর সরাসরি নির্দেশ ও ফোন কলের মাধ্যমে অনেক প্রার্থী ‘গ্রিন সিগন্যাল’ পেয়েছেন, যা চূড়ান্ত মনোনয়ন নির্ধারণে প্রভাব ফেলবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সাক্ষাৎকারের সময় ও স্থান
সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠিত হবে আগামীকাল, ২৭ অক্টোবর ২০২৫ (সোমবার) বিকেল ৪:০০ টায় ঢাকার গুলশানে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে।
রাজশাহী জেলা ও মহানগরের প্রায় ৬০ জন সম্ভাব্য প্রার্থী অংশ নেবেন। প্রত্যেককে বিশেষ পাস সরবরাহ করা হয়েছে, যাতে কেবল তারা অংশ নিতে পারেন। প্রার্থীদের সাংগঠনিক সক্রিয়তা, জনপ্রিয়তা, নির্বাচনী কৌশল ও দিকনির্দেশনা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে।
স্থানীয় প্রস্তুতি ও প্রতিক্রিয়া
রাজশাহী-১ আসনের প্রার্থী ব্যারিস্টার মাহফুজুর রহমান মিলন বলেন, “হাইকমান্ডের সাক্ষাৎকারের ডাক পেয়ে অনুপ্রাণিত। দিকনির্দেশনা পেয়ে এলাকায় কাজ শুরু করব।”
রাজশাহী-৫ আসনের প্রার্থী মাহমুদা হাবিবা জানান, “এই আসনে ৭ জন প্রার্থীকে ডাকা হয়েছে। এটি সুষ্ঠু মনোনয়ন প্রক্রিয়ার অংশ।”
পরবর্তী পদক্ষেপ
সাক্ষাৎকার শেষে চূড়ান্ত মনোনয়নপ্রাপ্ত প্রার্থীরা নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে নিজ নিজ এলাকায় প্রচার কার্যক্রম শুরু করবেন। বিএনপি এই প্রক্রিয়াকে স্বচ্ছ রাখতে জোট সহযোগী দলগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করছে। তবে জোটের প্রতীক ও আরপিও সংশোধনী ইস্যুতে দলের ভেতরে কিছু মতপার্থক্য রয়ে গেছে।
স্থানীয় বিশ্লেষকদের মতে, যদি বিএনপি রাজশাহীতে সুষ্ঠু ও ঐক্যবদ্ধভাবে মনোনয়ন দিতে পারে, তাহলে এ অঞ্চলে দলের জয়ের সম্ভাবনা আগের তুলনায় অনেক বেশি বাড়বে।






