উৎসব স্থগিতের নির্দেশ নিয়ে বিভ্রান্তি দূর করলেন থাই শিক্ষামন্ত্রী

থাইল্যান্ডের শিক্ষামন্ত্রী নিরিমলের ব্যাখ্যা: উৎসবমুখর কার্যক্রম স্থগিতের নির্দেশ শিক্ষার্থীদের খেলাধুলা ও সহপাঠ্যক্রমে প্রভাব ফেলবে না

বিশ্ব ডেস্ক: থাইল্যান্ডের শিক্ষা মন্ত্রী স্ক.ড. নিরিমল ফিন্যোসিনওয়াত (Niramol Phinyosinwat) আজ এক গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণায় জানিয়েছেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাম্প্রতিক চিঠিপত্রে উৎসবমুখর কার্যক্রম এক বছরের জন্য স্থগিতের নির্দেশ শিক্ষার্থীদের খেলাধুলা, স্পোর্টস ডে (গীฬাসী) কিংবা অতিরিক্ত পাঠ্যক্রম-সংশ্লিষ্ট কার্যক্রমকে কোনোভাবেই প্রভাবিত করবে না।

মন্ত্রী স্পষ্ট করে বলেন, এই নির্দেশটি শুধুমাত্র শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য প্রযোজ্য এবং এর উদ্দেশ্য হলো প্রয়াত রানী সিরিকিট (Queen Sirikit) এর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানানো। তিনি জোর দিয়ে বলেন, “শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতা বা মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে কখনোই বাধা দেওয়া হবে না।”

সম্প্রতি মন্ত্রণালয়ের একটি “জরুরি” (urgent) চিঠিপত্র সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর দেশজুড়ে আলোচনার সৃষ্টি হয়। চিঠিতে বলা হয়, রানী সিরিকিট—থাইল্যান্ডের জাতির জননী হিসেবে খ্যাত—এর স্বর্গারোহণের স্মৃতিকে সম্মান জানাতে এক বছরব্যাপী কোনো আনন্দমুখর বা উৎসবধর্মী অনুষ্ঠান না করার অনুরোধ করা হয়েছে।

তবে এই নির্দেশকে অনেকেই স্কুলের নিয়মিত কার্যক্রমের উপর নিষেধাজ্ঞা হিসেবে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করেন।

মন্ত্রী নিরিমল সেই বিভ্রান্তি দূর করে বলেন—

“এই নির্দেশটি কেবলমাত্র সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য একটি ‘সম্মানসূচক অনুরোধ’। এটি কঠোর নিষেধাজ্ঞা নয়। শিক্ষার্থীদের স্পোর্টস ডে, সাংস্কৃতিক বা শিল্পকলা কার্যক্রম এতে অন্তর্ভুক্ত নয়।”

শিক্ষার্থীদের কার্যক্রমে কোনো বাধা নেই

মন্ত্রী নিরিমল তার বিবৃতিতে তিনটি দিক স্পষ্ট করেন—  স্পোর্টস ডে (গীฬাসী): প্রতিটি স্কুল ও কলেজের বার্ষিক খেলাধুলার আয়োজন স্বাভাবিকভাবে চলবে। এটি শিক্ষার্থীদের শারীরিক বিকাশ ও দলগত চেতনা গড়ার অংশ, উৎসব নয়।

অতিরিক্ত পাঠ্যক্রম: সংগীত, নাটক, শিল্পচর্চা বা বিজ্ঞানমেলা ইত্যাদি চলমান থাকবে। এগুলো শিক্ষার্থীদের মেধা বিকাশের জন্য অপরিহার্য।

মতপ্রকাশের স্বাধীনতা: মন্ত্রণালয় স্কুলগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে যেন শিক্ষার্থীদের ভাবনা বা অংশগ্রহণ কোনোভাবেই সীমাবদ্ধ না হয়, বরং ভুল তথ্যের বিরুদ্ধে সঠিক ব্যাখ্যা প্রদান করা হয়।

রাজকীয় ঐতিহ্য ও সামাজিক প্রেক্ষাপট

থাইল্যান্ডে রাজপরিবারের সদস্যদের মৃত্যু বা অসুস্থতার সময় শোক পালনের ঐতিহ্য বহু পুরনো। এই সময়ে সরকার সাধারণত সরকারি প্রতিষ্ঠানে আনন্দোৎসবমূলক অনুষ্ঠান সীমিত রাখার আহ্বান জানায়, তবে কখনো বাধ্যতামূলক নিষেধাজ্ঞা দেয় না।

২০২২ সালেও অনুরূপ পরিস্থিতিতে সরকার কেবল “উপযুক্তভাবে অনুষ্ঠান আয়োজনের” পরামর্শ দিয়েছিল।

বর্তমান নির্দেশও সেই ধারাবাহিকতার অংশ। থাইল্যান্ডের মন্ত্রিসভা নিশ্চিত করেছে—কোনো সরকারি প্রজ্ঞাপন (resolution) জারি হয়নি যা বেসরকারি খাতের কার্যক্রমে প্রভাব ফেলবে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরবর্তী পদক্ষেপ

মন্ত্রী নিরিমল জানিয়েছেন, শিক্ষা অফিস ও স্কুল প্রশাসনগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানো হবে যেন সবাই সঠিকভাবে নির্দেশটি বুঝতে পারে। এছাড়া স্থানীয় শিক্ষা দপ্তরগুলোকে বলা হয়েছে, যেন অভিভাবক ও শিক্ষকদের মাঝে “বিভ্রান্তি দূরীকরণ প্রচারণা” চালানো হয়।

তিনি বলেন, “আমরা চাই শিক্ষার্থীরা পড়াশোনার পাশাপাশি আনন্দ, খেলাধুলা ও সৃজনশীলতায় এগিয়ে যাক—এটাই থাইল্যান্ডের নতুন শিক্ষার লক্ষ্য।”

রানী সিরিকিটের স্মৃতিতে সম্মান প্রদর্শনের অংশ হিসেবে জারি করা নির্দেশটি মূলত আনন্দোৎসব ও পার্টি-ধর্মী ইভেন্টের ওপর সাময়িক স্থগিতাদেশ। তবে শিক্ষা কার্যক্রম, খেলাধুলা ও শিক্ষার্থীদের সৃজনশীল প্রকাশ অবিচল থাকবে।

থাইল্যান্ডের শিক্ষা মন্ত্রণালয় তাই এখন দ্বৈত লক্ষ্যে কাজ করছে—একদিকে রাজকীয় ঐতিহ্যের সম্মান রক্ষা, অন্যদিকে শিক্ষা ও স্বাধীন মতপ্রকাশের পরিবেশ বজায় রাখা।

সূত্র: Thai Rath, InfoQuest, TOPNEWS, আল জাজিরা ইংলিশ (২৬ অক্টোবর ২০২৫)