ভেভেনেজুয়েলা সামরিক অনুশীলন শুরু, মার্কিন গোপন অপারেশনের বিরুদ্ধে সতর্কতা

ভেনেজুয়েলা তার উপকূল রক্ষায় সামরিক অনুশীলন শুরু: মার্কিন ‘গোপন অপারেশন’ এর বিরুদ্ধে সতর্কতা
বিশ্ব ডেস্ক: ভেনেজুয়েলার প্রতিরক্ষামন্ত্রী ভ্লাদিমির পাদ্রিনো শনিবার ঘোষণা করেছেন, দেশটি তার উপকূল রক্ষায় একটি ব্যাপক সামরিক অনুশীলন শুরু করেছে। তিনি জানান, এই প্রস্তুতি “যেকোনো সম্ভাব্য গোপন অপারেশন প্রতিরোধ” করার লক্ষ্যেই নেওয়া হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আঞ্চলিক সামরিক উপস্থিতি সম্প্রতি বৃদ্ধি পাওয়ায় মাদুরো সরকার এটি দেশের স্থিতিশীলতা অক্ষুণ্ণ রাখার জন্য জরুরি বলে দেখছে।
পেন্টাগনের নির্দেশে মার্কিন নৌবাহিনীর একটি এয়ারক্র্যাফট ক্যারিয়ার স্ট্রাইক গ্রুপ, USS Gerald R. Ford, ইতিমধ্যে এই অঞ্চলে মোতায়েন করা হয়েছে। একই সাথে, সন্দেহজনক ড্রাগ নৌকায় হামলায় অন্তত ৪৩ জন নিহত হয়েছেন। পাদ্রিনো বলেন, “এই অনুশীলন শুধু বড় আকারের সামরিক হুমকির বিরুদ্ধে নয়, ড্রাগ ট্রাফিকিং, সন্ত্রাসবাদী হুমকি এবং অভ্যন্তরীণ অস্থিতিশীলতা সৃষ্টিকারী গোপন অপারেশন থেকেও দেশকে রক্ষা করবে।”
সামরিক অনুশীলনের বিবরণ
পাদ্রিনো জানিয়েছেন, অনুশীলনটি ৭২ ঘণ্টা আগে শুরু হয়েছে এবং নয়টি উপকূলীয় রাজ্যে চলছে। রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে প্রদর্শিত ভিডিওতে দেখা গেছে সেনা কর্মী এবং মাদুরোর নাগরিক মিলিশিয়ার সদস্যরা রাশিয়ান Igla-S কাঁধে-নিয়ে-আকাশ প্রতিরক্ষা মিসাইল বহন করছেন। অনুশীলনের মূল লক্ষ্য হলো ২,৮০০ কিলোমিটার লম্বা উপকূলীয় এলাকা রক্ষা করা, যা ক্যারিবীয় সাগরের সাথে সংযুক্ত। পাদ্রিনো সতর্ক করেছেন, “সিআইএ বিশ্বের সর্বত্র উপস্থিত। তারা দেশের যেকোনো অংশে গোপন অপারেশন চালাতে পারে, তবে যেকোনো চেষ্টা ব্যর্থ হবে।”
মার্কিন সামরিক উপস্থিতি বৃদ্ধি
মার্কিন নৌবাহিনী আগস্ট থেকে আঞ্চলিকভাবে তার উপস্থিতি বৃদ্ধি করেছে। আটটি জাহাজ, ১০টি F-35 যুদ্ধবিমান এবং একটি পারমাণবিক চালিত সাবমেরিন ‘অ্যান্টি-ড্রাগ অপারেশন’ এর নামে মোতায়েন করা হয়েছে। কিন্তু ভেনেজুয়েলার সরকার এগুলোকে মাদুরো উৎখাতের চেষ্টা হিসেবে দেখছে। সেপ্টেম্বর ২ থেকে ১০টি সন্দেহজনক ড্রাগ নৌকায় হামলা চালানো হয়েছে, যার মধ্যে আটটি ক্যারিবীয় সাগরে। এ হামলায় ৪৩ জন নিহত হয়েছে।
রবিবার (২৭ অক্টোবর) থেকে USS Gravely ত্রিনিদাদ ও টোবাগোতে পাঁচ দিনের যৌথ সামরিক অনুশীলনে অংশ নেবে, যা USS Gerald R. Ford ক্যারিয়ারের সাথে মিলিত হবে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, তিনি ভেনেজুয়েলায় সিআইএ অপারেশন অনুমোদন করেছেন এবং স্থলভাগে হামলার সম্ভাবনাও বিবেচনা করছেন।
ভূ-রাজনৈতিক পটভূমি
ভেনেজুয়েলা-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক দীর্ঘদিন ধরে উত্তপ্ত। ২০১৯ সালে ট্রাম্প প্রশাসন মাদুরো সরকারের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে এবং জুয়ান গুয়েদোকে অন্তর্বর্তীকালীন রাষ্ট্রপতি হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। ভেনেজুয়েলার অর্থনৈতিক সংকট, হাইপারইনফ্লেশন এবং ড্রাগ ট্রাফিকিংয়ের অভিযোগ এই উত্তেজনা বাড়িয়েছে। মাদুরো সরকার মার্কিন অভিযানের জন্য রাশিয়া, চীন ও ইরানের সাথে সামরিক সহযোগিতা বাড়িয়েছে।
বিশ্লেষণ ও আঞ্চলিক প্রভাব
বিশ্লেষকরা বলছেন, ভেনেজুয়েলার এই অনুশীলন মূলত রাশিয়ান অস্ত্র ব্যবহার করে মার্কিন আধুনিক যুদ্ধপ্রযুক্তির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা যাচাই করার উদ্দেশ্য বহন করছে। ত্রিনিদাদ ও টোবাগোর সাথে মার্কিন যৌথ অনুশীলন ভেনেজুয়েলার সীমান্তের কাছে হওয়ায় টেনশন বাড়েছে। মাদুরো সরকার অনুশীলনকে ‘জাতীয় সার্বভৌমত্ব রক্ষা’ হিসেবে দেখছে, যখন মার্কিন প্রশাসন এটিকে ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ প্রতিরোধের উদ্যোগ’ বলছে। এই সংঘাত ক্যারিবীয় অঞ্চলে অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে, বিশেষ করে কলম্বিয়া ও ব্রাজিলের সীমান্ত এলাকায়।
জাতিসংঘ মহাসচিব ইতিবাচক মধ্যস্থতার আহ্বান জানিয়েছে। পাদ্রিনো সতর্ক করেছেন, “যেকোনো চেষ্টা ব্যর্থ হবে,” কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসনের ‘হার্ডলাইন’ নীতি এই টেনশনকে আরও বাড়াতে পারে।
ভেনেজুয়েলার সামরিক অনুশীলন মার্কিন-ভেনেজুয়েলা সম্পর্কের নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে। এটি শুধু আঞ্চলিক শান্তির জন্য ঝুঁকিপূর্ণ নয়, বরং আন্তর্জাতিক নৌপথ, তেল রপ্তানি এবং দেশটির অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতার ওপরও প্রভাব ফেলতে পারে।






