৩০ অক্টোবর বান্দরবনে ‘রাওয়া বইমেলা ২০২৫

পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তির অন্বেষণ: রাওয়ার উদ্যোগ ও সমস্যা মূল্যায়ন।

নিজস্ব প্রতি‌বেদক: পার্বত্য চট্টগ্রামে সাম্প্রতিক সহিংসতা এবং অশান্তি, বিশেষ করে খাগড়াছড়ির গুইমারা উপজেলায় ২৮ সেপ্টেম্বরের প্রাণঘাতী ঘটনায় দেশজুড়ে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।

ধর্ষণের অভিযোগ থেকে শুরু হওয়া এই ঘটনা পাহাড়ি ও বাঙালি সম্প্রদায়ের মধ্যে সংঘর্ষে রূপ নেয়ার পাশাপাশি সেনাবাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে বিবর্তিত হয়। এতে তিনজন মারমা তরুণ নিহত এবং প্রচুর সম্পত্তি ধ্বংস হয়। পরিস্থিতি চরম উত্তপ্ত হওয়ার পর, রিটায়ার্ড আর্মড ফোর্সেস অফিসার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন (রাওয়া) ৮ অক্টোবর ঢাকায় “সমস্যা সংকুল পার্বত্য চট্টগ্রাম: শান্তির অন্বেষণ” শীর্ষক মুক্ত আলোচনা সভার আয়োজন করে।

২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫-এ শহরে একটি ধর্ষণের অভিযোগকে কেন্দ্র করে ‘জুম্ম-ছাত্র-জনতা’ ব্যানারে পাহাড়ি তরুণদের বিক্ষোভ শুরু হয়। মেডিকেল বোর্ড ৩০ সেপ্টেম্বর জানিয়েছে, ধর্ষণের কোনো আলামত পাওয়া যায়নি। কিন্তু পরিস্থিতি আরও তীব্র হয়ে ২৮ সেপ্টেম্বর গুইমারায় সেনাবাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে পরিণত হয়। রামসু বাজারে হামলা ও অগ্নিসংযোগে প্রায় ৫০টি দোকানপাট এবং ৩০টি বসতঘর পুড়ে যায়। এই ঘটনায় পাহাড়ি-বাঙালি সম্প্রীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।

রাওয়ার আলোচনা সভার মূল বিষয়বস্তু ছিল

সভায় পার্বত্য চট্টগ্রামের শান্তি, সম্প্রীতি, এবং জাতীয় ঐক্যের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। কর্নেল মোহাম্মদ আবদুল হক (অব.) বলেন, “পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি প্রতিষ্ঠা ছাড়া এই অঞ্চল বাংলাদেশের অংশ হিসেবে টিকিয়ে রাখা কঠিন। জাতীয় ঐক্যই এর প্রধান সমাধান।” মেজর জেনারেল মোহাম্মদ কামরুজ্জামান (অব.) সমস্যার রাজনৈতিক সমাধান এবং দেশপ্রেমের গুরুত্বে গুরুত্বারোপ করেন।

ভারতের ভূমিকা: অংশগ্রহণকারীরা ভারতের অব্যাহত প্রভাব ও পার্বত্য চট্টগ্রামের অস্থিতিশীলতায় তার ভূমিকা নিয়ে সমালোচনা করেন।

সেনাবাহিনীর অবদান: সেনাবাহিনীর শহীদ সদস্যদের ত্যাগের স্বীকৃতি এবং তাদের কার্যক্রমকে আভিযানিক ভূমিকায় সীমাবদ্ধ রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়।

শান্তিচুক্তির পুনর্মূল্যায়ন: সাংবিধানিক সাংঘর্ষিকতা দূর করতে চুক্তির ধারাগুলো পুনর্বিবেচনার প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করা হয়।

পাহাড়ি-বাঙালি সম্প্রীতি: সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া কার্যক্রমের মাধ্যমে সম্প্রদায়গুলোর মধ্যে সম্প্রীতি বৃদ্ধির পরামর্শ দেওয়া হয়।

আঞ্চলিক দলগুলোর ভূমিকা: ইউপিডিএফসহ আঞ্চলিক দলগুলোর উগ্রপন্থা এবং সাম্প্রদায়িক ঘৃণার সমালোচনা করা হয়।

ভূমি সমস্যা ও কর্মসংস্থান: তরুণদের জন্য কর্মসংস্থানের প্রয়োজনীয়তা এবং ভূমি সম্পর্কিত জটিলতা সমাধানের আহ্বান করা হয়।

বৈষম্যের অভিযোগ: ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী এবং বাঙালিরা শান্তিচুক্তির সুফল থেকে বঞ্চিত হওয়ার বিষয়টি আলোচ্য হয়।

প্রধান সুপারিশমালা

১. দল-মত নির্বিশেষে জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠা।

২. সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান এবং প্রয়োজনে পার্বত্য চট্টগ্রামকে ‘অপারেশনাল এলাকা’ ঘোষণা।

৩. শান্তিচুক্তির পুনর্মূল্যায়ন।

৪. সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া কার্যক্রমের মাধ্যমে সম্প্রীতি বৃদ্ধি।

৫. সেনাবাহিনীর উপস্থিতি ও গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো।

৬. শহীদ সেনাসদস্যদের তালিকা প্রকাশ করে জনসমর্থন আদায়।

রাওয়ার ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

রাওয়া ১৯৮২ সালে প্রতিষ্ঠিত একটি কল্যাণমূলক সংগঠন। এটি একটি ‘থিংক ট্যাংক’ পরিচালনা করে এবং ‘দি রাওয়া মিরর’ নামে একটি সাময়িকী প্রকাশ করে। আগামী ৩০ অক্টোবর থেকে ১ নভেম্বর পর্যন্ত ‘রাওয়া বইমেলা ২০২৫’ অনুষ্ঠিত হবে।

পার্বত্য চট্টগ্রামে স্থায়ী শান্তি এবং সম্প্রদায়িক সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠা একটি দীর্ঘমেয়াদি চ্যালেঞ্জ। রাওয়ার উদ্যোগ জাতীয় ঐক্য, পাহাড়ি-বাঙালি সম্প্রীতি, এবং সেনাবাহিনীর ত্যাগের স্বীকৃতি দেয়ার পাশাপাশি সমস্যার রাজনৈতিক সমাধানের পথ সুগম করার চেষ্টা হিসেবে মূল্যায়িত হচ্ছে।

সভার বক্তারা এই অঞ্চলের শান্তি, সৌহার্দ্য এবং সমৃদ্ধির জন্য সমবেত আকুতি জানান।