সারা দেশে জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস উদযাপন
বান্দরবানে নানা আয়োজনে জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস উদযাপন: সচেতনতা বৃদ্ধি ও দুর্ঘটনা প্রতিরোধে আহ্বান
অসীম রায় (অশ্বিনী): আজ ২২ অক্টোবর, বুধবার, সারাদেশে নবমবারের মতো জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস পালিত হয়েছে। এই দিবসের মূল লক্ষ্য সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতি বছর হাজার হাজার মানুষের প্রাণহানি ও অর্থনৈতিক ক্ষতি রোধে সচেতনতা বৃদ্ধি করা।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ), সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর এবং সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের যৌথ উদ্যোগে দেশব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এবছরের প্রতিপাদ্য ছিল, ‘মানসম্মত হেলমেট ও নিরাপদ গতি: কমবে জীবন ও সম্পদের ক্ষতি’। এই প্রতিপাদ্যের আলোকে সরকারি-বেসরকারি সংস্থাগুলো শোভাযাত্রা, আলোচনা সভা, র্যালি, লিফলেট বিতরণ এবং সড়ক নিরাপত্তা আইন প্রণয়নের দাবিসহ সচেতনমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করেছে।
বেসরকারি উদ্যোগে ‘নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা)’ সংগঠন ১৯৯৪ সাল থেকে এই দিবস পালন করে আসছে। এটি ১৯৯৩ সালে চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনের স্ত্রী জাহানারা কাঞ্চনের সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর পর উদ্ভূত। জাতীয় স্বীকৃতি পেয়েছে ২০১৭ সাল থেকে।
বান্দরবানে উদযাপনের উদ্বোধন ও প্রধান কর্মসূচি
বান্দরবান পার্বত্য জেলায় বিআরটিএ বান্দরবান সার্কেলের আয়োজনে এবং জেলা প্রশাসনের সার্বিক সহযোগিতায় দিবসটি পালিত হয়েছে। সকালে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে প্রধান অতিথি শামীম আরা রিনি বেলুন উড়িয়ে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন। এরপর একটি শোভাযাত্রা বের হয়, যা শহরের প্রধান সড়কগুলো প্রদক্ষিণ করে পুনরায় একই স্থানে ফিরে আসে। শোভাযাত্রায় স্থানীয় কর্মকর্তা, পুলিশ, শিক্ষার্থী এবং সাধারণ নাগরিকরা অংশগ্রহণ করেন।
এই কর্মসূচির মাধ্যমে প্রতিপাদ্য ‘মানসম্মত হেলমেট ও নিরাপদ গতি’ প্রচার করা হয়েছে।
পরবর্তীতে জেলা প্রশাসকের সভাকক্ষে একটি আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে বক্তারা সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ট্রাফিক আইন মেনে চলা ও সতর্কতার আহ্বান জানান। বক্তারা জোর দেন, সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা অপরিহার্য।
শামীম আরা রিনির বক্তব্য ও সচেতনতার আহ্বান
প্রধান অতিথি জেলা প্রশাসক শামীম আরা রিনি বলেন, “জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবসের প্রধান উদ্দেশ্য হলো জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা এবং সড়ক আইন মেনে চলার গুরুত্ব বোঝানো। মানসম্মত হেলমেট ব্যবহার ও নিরাপদ গতিতে চলার মাধ্যমে জীবন ও সম্পদের ক্ষতি কমানো সম্ভব।” তিনি আরও বলেন, বান্দরবানের মতো পাহাড়ি এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনা বেশি ঘটে, তাই স্থানীয় চালকদের বিশেষ সতর্কতার পরামর্শ দেন। অনুষ্ঠানে তিনি বিআরটিএর ট্রাস্টি বোর্ড কর্তৃক মঞ্জুরীকৃত চেকও হস্তান্তর করেন, যা দুর্ঘটনায় নিহত ও আহত পরিবারের জন্য প্রদান করা হয়।
আলোচনা সভার সভাপতিত্ব করেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এস. এম. হাসান। প্রধান অতিথি ছিলেন শামীম আরা রিনি। অন্যান্য অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ছিলেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, বিআরটিএ বান্দরবান সার্কেলের মোটরযান পরিদর্শক অরুণ সরকার, মোটরযান পরিদর্শক আরিফুল ইসলাম, প্রেসক্লাবের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বাচ্চু, জেলা তথ্য অফিসার মো. আনোয়ার হোসেন। সভায় বক্তারা সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি স্থানীয় পর্যায়ে প্রশিক্ষণ ও সচেতনতা ক্যাম্পের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন।
দুর্ঘটনায় নিহতদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা
সভার শেষ পর্যায়ে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত এক শিক্ষার্থীর পরিবারের হাতে বিআরটিএ ট্রাস্টি বোর্ডের পক্ষ থেকে ৫ লাখ টাকা হস্তান্তর করা হয়। জেলা প্রশাসক শামীম আরা রিনি বলেন, “এই সহায়তা ক্ষতি পূরণ করতে পারবে না, তবে এটি একটি ন্যূনতম সহায়তা। আমরা সকলে মিলে সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে কাজ করব।”
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
বান্দরবানের উদযাপন স্থানীয় পর্যায়ে সচেতনতা বৃদ্ধির দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। পাহাড়ি রাস্তায় দুর্ঘটনার ঝুঁকি বেশি হওয়ায় কর্মসূচিগুলো বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। জাতীয় পর্যায়ে নিসচা মাসব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা করেছে, যার মধ্যে স্কুল-কলেজে প্রশিক্ষণ অন্তর্ভুক্ত। সরকারের পক্ষ থেকে সড়ক নিরাপত্তা আইন দ্রুত প্রণয়ন এবং চালকদের প্রশিক্ষণ বৃদ্ধিতে জোর দেওয়া হয়েছে।
এই দিবসের মাধ্যমে বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনা হ্রাসের লক্ষ্য অর্জনে নতুন গতি সঞ্চারিত হবে।